ইলিয়াস মশহুদ ::
পাঠক! বলুন তো দেখি- আজ কী দিবস? খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনি কি নিশ্চিত, আজ কোন দিবস বা বিশেষ কোন দিন নয়? আপনার কথাই মেনে নিচ্ছি। তবে জেনে রাখুন এবং তাও নিশ্চিত অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো দিন থাকবেনা, যা দিবস বিশেষণ থেকে মুক্ত। বছরের ৩৬৫ দিনই পরিণত হবে একেকটা বিশেষ দিবসে।
আন্তর্জাতিক, জাতীয়, দলীয়, পারিবারিকসহ বিভিন্ন প্রকার দিবস আমরা পালন করি। ভিন্ন আমেজের এ সমস্ত দিবসে রয়েছে বিভিন্ন স্বাদ। সমাজ সচেতনতা, নবজাগরণ, স্মৃতিরোমন্তন, কর্মস্পৃহাসহ দিবসের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। দিবস থেকে আমরা শিক্ষা নিব দীক্ষীত হব; তার আলোয় আলোকিত হয়। দিবস আমাদের জাগিয়ে তুলবে। স্মরণ করিয়ে দিবে নিজ ইতিহাস-ঐতিহ্য আমাদের উত্থান-পতনের কাহিনী।
এসব দিবসকে কেন্দ্র করে আমরা মেতে উঠি আনন্দ-উল্লাসে। কখনও দুঃখ-বেদনায় ফের ভারাক্রান্ত হই। অতীতের এই দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্মরণ করে তা থেকে শিক্ষা লাভ করি, প্রেরণা খোঁজে পাই।
তবে আমাদের অধুনা এ সমাজে এমন কিছু অপদিবসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যা আমাদের কৃষ্টি-কালচার, ধর্ম ও সমাজব্যবস্থার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও বেমানান। পাশ্চাত্যের উশৃঙ্খল সমাজ থেকে আমদানি করে তা আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
কিছুদিন পরে হয়তবা এসব ডে বা দিবস বাঙালী সংস্কৃতির অংশে পরিণত হবে। থার্টি ফাস্ট নাইট, ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ…। এসব অপদিবস থেকে আমরা কি শিক্ষা অর্জন করবো? আমাদের সবকটা কি হবে? লাগামহীন অবাদ যৌনাচার? উশৃঙ্খলতা? বেহায়াপনা?
আবার এমন কিছুু দিবস আছে, যেগুলোর সাথে আবেগ ও শ্রদ্ধা জড়ানো। মা দিবস, বাবা দিবস, মে দিবস, ইত্যাদি। এসব দিবস অধিকার প্রতিষ্ঠার, শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রকাশের। তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ, শ্রমিকের প্রতি সহমর্মীতা প্রকাশের জন্য আমাদের কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না। তারা আমাদের হৃদয় গভীরে ভালোবাসার সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। তাদের প্রতি নিজ দায়িত্ব পালনে যদি কোনো দিবসের প্রয়োজন হয়, তাহলে বছরের প্রতিটি দিনই আমাদের কাছে মাদারস্ ডে, ডে ফাদারস, শ্রমিক ডে। মূলত: পুঁজিবাদিদের ব্যবসায়িক তীক্ষè বৃদ্ধির কৌশলে পৃথিবীতে এতসব দিবসের ছড়াছড়ি।
মিডিয়ার এই চরম উন্নতির যুগে কতশত টিভি চ্যানেল সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন! তার কি আর হিসাব আছে! সকল দিবসে তাদের দৃষ্টি নন্দন আয়োজন চোখে পড়ার মতো। দিবস উপলক্ষে রয়েছে পত্রিকাগুলোর বিশেষ আয়োজন, চ্যানেলগুলোর বিশেষ অনুষ্ঠান। রয়েছে টক-শো। টক-শোতে টকিং করে সৃষ্টি হচ্ছেন নতুন নতুন আলোচক, বুদ্ধিজীবি। যাদের বুদ্ধিতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন দিবস।
পৃথিবীর কোথায় কখন কী হচ্ছে আর কী ঘটছে, ঘরে বসেই মিডিয়ার বদৌলতে আমরা আপডেট সব কিছু জানতে পারি। এ মিডিয়ার ক্ষমতা কিন্তু অপরিসীম। সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য আর তিলকে তাল বানানোর কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সে আঞ্জাম দিতে পারে। সে আমাদের সামনে যাই পেশ করে তা আমরা ‘হ্যাঁ’ করে গিলে ফেলি, গিলে ফেলাই আমাদের ধর্ম। একটুখানি ভেবে দেখার প্রয়োজনবোধ করিনা। এটা কি খাদ্য না অখাদ্য, সুখাদ্য না কুখাদ্য তা চিন্তা করিনা।
এখনো হয়ত ৩৬৫ দিনের দু’একটা কোনো ‘দিবসে’র আক্রমণ থেকে খালি আছে, খুব বেশি দিন নয়, সেগুলোও দিবসযুক্ত হয়ে যাবে। অপেক্ষা করুন।