অনলাইন ডেস্ক :: মানুষ প্রতিমুহূর্তের স্পন্দন ও প্রবাহের মধ্য দিয়ে তার জীবিত ও জাগর সত্ত্বাটাকে অস্তিত্বময় করে রাখে। আর তার অস্তিত্ব, অবস্থান, গতি-প্রকৃতি ও শক্তির অন্বয় রচনা করে। অস্তিত্বের জন্য, মনুষ্যত্ব ও মানবিক অর্জনের জন্য তার ভাষা ব্যবহার করে। ভাষার চালিত শক্তির প্রয়োগে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন সঞ্চালিত হয়, মস্তিষ্ক কোটর, স্মৃতিকোষ, চেতনা- চৈতন্য, অনুভূতি ও উপলব্ধি তেমনি ক্রিয়াশীল হতে থাকে। ব্যক্তিসত্ত্বা ভাষার মাধ্যমে জাগরিত হয়-বিকশিত হয়। একটি জাতির সত্ত্বাও প্রথমত এবং শেষত ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হতে থাকে। ভাষা মানুষের অস্তিত্বকে ধারণ করে এবং স্পন্দমান করে। বিশ্বাসকে বাক্সময় ও বিভাসিত করে। আন্ত:সলিলার মত বয়ে যেতে থাকে অন্তর্লোকের সমস্ত অন্দর-কন্দর পেরিয়ে। আমরা আমাদের মায়ের হৃদয়ের স্পন্দন শুনি এই ভাষায়।১ আমাদের ঘুম নেমে আসে মাতৃভাষার ছন্দে। মাতৃভাষার আদরে নেমে আসে রাতের নিরালা। ভোরের নরম আলো জ্বলে ওঠে আমাদের মাতৃভাষার সৌন্দর্যে। এখনো এই সুন্দরই আমাদেরকে তৃপ্ত করে। সুতরাং মাতৃভাষা আমাদের মুখের ভাষা নয়, আমাদের অস্তিত্বের ভাষা। মাতৃভাষাকে বাদ দিলে আমাদের পরিচয় গৌণ হয়ে যায়। শেকড় ছিন্ন বৃক্ষের মতো দুর্বল হয়ে যায়।২ মাতৃভাষার জন্যই প্রতিটি জাতি সর্বদা বদ্ধপরিকর। মাভৃভাষাকে আঁকড়ে ধরেই তাদের পথচলা। মানুষের ভাষাকে কোনোভাবেই অবরুদ্ধ করা যায় না। ভাষাকে ধ্বংস করাও সম্ভবপর নয়।
১৭৭৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রথম মত পোষণ করেন একজন ব্রিটিশ লেখক। তার নাম ন্যাথিনিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড। ১৯১৮ সালে ভারতের ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ভারতের সাধারণ ভাষা কী হওয়া উচিত তা নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রবিঠাকুর ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দির পক্ষে মত পোষণ করেন। এ প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেন ওই সভায় অংশগ্রহণকারী ড. মুহম্মদ শহীদুল্ল¬াহ। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার প্রস্তাব পেশ করেন।৪ ওই সময়ে হিন্দি- প্রেমিকরা হিন্দিভাষাকে সমর্থন করে গান্ধীজীর বরাবরে একটি পত্র লেখেন তা হলো- Òthe only possible national language for intercourse is hindi in India.Ó5
১৯২১ সালে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী লিখিত আকারে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সম্পাদক আবুল হাশিম প্রাদেশিক কাউন্সিলের কাছে পেশকৃত খসড়া ম্যানিফেস্টোতে বাংলাকে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন দৈনিক আজাদ পত্রিকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা প্রবন্ধে আব্দুল হক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। ১৯৪৮ সাল নবগঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম বৈঠক বসে করাচিতে। বৈঠকের শুরুতেই উর্দু ও ইংরেজিকে গণপরিষদের সরকারি ভাষা বলে ঘোষণা করা হয়।
পূর্ব বাংলার বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভাষা-বিক্ষোভ ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ
রাজপথে প্রতিবাদী মিছিল
শহীদ মিনার স্থাপন ও ভাঙ্গন
যুক্তফ্রন্টের বিজয় লাভ
বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি
যেভাবে স্বীকৃতি পেল ২১ ফেব্রুয়ারি
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি পাওয়ার পিছনে রয়েছে দীর্ঘ সাধনা, সংগ্রামের ইতিহাস। কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালামের প্রতিষ্ঠিত “The mother language lover of the world” সংগঠন ১৯৮৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করে একটি চিঠি পাঠান। এ চিঠিতে সাত জাতি ও সাত ভাষার দশজন স্বাক্ষর করেন। এর এক বছর পর, ইউনেস্কো সদর দফতরের ভাষা বিভাগের আন্না মারিয়া রফিকুল ইসলামকে ১৯৯৯ সালের ৩ মার্চ সম্মতিসূচক চিঠি লেখেন, Regarding your request to declare the 21 February as International Mother Language day. The idea is indeed very interesting.১৩ অবশেষে Bangladesh National Commission -র পক্ষে সচিব কফিল উদ্দিন আহমদ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে প্রস্তাবটি ইউনেস্কো সদর দফতরে পেশ করেন। ইউনেস্কোর ২৮ টি সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রস্তাব লিখিতভাবে সমর্থন করে।১৪ একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর বাংলাভাষাভাষী মানুষের কাছে শোকার্ত দিন নয়। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন গোটাবিশ্বের মাতৃভাষা দিবস। রক্তের আলপনা এঁকে যে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে আমাদের বাঙালি সন্তানরা, রাজকীয় ভাষা হিসেবে। তাঁদের আন্দোলনের সূত্র ধরেই ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তারাই আমাদের গর্বিত ধন, তারাই আমাদের মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠাতা।
শহীদ দিবস থেকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”
২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস। অমর একুশে। একুশের রক্তস্নাত পথ বেয়ে এদিনটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯১৯ সালের ১৭ নভেম্বর ৩০ তম সাধারণ সম্মেলনে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।১৫ UNESCO- র ঘোষণায় বলা হয়- Ò 21 February is proclaimed international mother language day througout the world to commemorate the martyrs who sacrificed their lives on this day in 1952.Ó
বর্তমান বিশ্বের ১৮৮ দেশে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে যথার্থ গুরুত্ব সহকারে। উলি¬খিত দেশগুলোর জনসাধারণের কাছে বাংলাভাষা আজ সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন। এ এক অনন্য অর্জন। এ অর্জন আমাদের সর্বক্ষেত্রে গর্বের, গৌরবের ও অহংকারের। সারা বিশ্বের মানুষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালনের মাধ্যমে মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায় এবং সমগ্র চেতনায় লালনকারে কালজয়ী ভাষা বাংলাকে। এ গর্ব সকল বাংলাভাষী মানুষের। অমর একুশে আমাদের প্রেরণার উৎস। আমাদের সম্মিলিতভাবে দাঁড়াবার ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারির দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমেই।১৭ বাংলাদেশের মানুষের গৌরবান্বিত ইতিহাস ও অজেয় অহংকার অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-একথা ভাবতেই বুকটা গর্ভে ভরে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী ও জাতিসত্তার মানুষ গত কয়েক বছর ধরে যথাযথ সম্মান ও গুরুত্বসহকারে অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বাংলাভাষা ও বাংলাদেশকে স্মরণ করছে। এক অভূতপূর্ব অনুভূতি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: আমাদের প্রাণের উচ্চারণ
মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার মানুষ লাভ করে স্বয়ং স্রষ্টা থেকে। যে মাটির কোলে যে মানুষ জন্মগ্রহণ করে যে মাটির ভাষা তার অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে থাকে। তার চোখ, মুখ, বুকের সাথে লেগে থাকে সে ভাষার গভীর আবরণ। তার স্বপ্ন সাধনা, আশা-আকাক্সক্ষা তৃপ্তি ও সম্ভাবনার সমস্ত আকাশ জুড়ে উড়তে থাকে মাতৃভাষার প্রাণময় নীল ঘড়ি। যে মাটির রসসিক্ত জলবায়ুর জৌলুসে বেড়ে ওঠে মানুষের শরীর সে মাটির ভাষা উপেক্ষা করার শক্তিই বা কার থাকে। কারো থাকে না। থাকে না বলেই যে মানুষ যে ভূগোলে নিরস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পায় সে ভূগোলের ভাষা তার জিহ্বায় জড়িয়ে পড়ে। সে ভাষার স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ অনুভবের ভিতর ডানা ঝাপটায়। বুকের গভীরে ডালপালা মেলে। শতদল ফুটে যায় ভাষার সৌরভে।১৮
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা শব্দটা উচ্চারণের সাথে সাথে যেন হৃদয়ের গভীর থেকে এক অভাবনীয় মুখের শীতলতা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেহের কোষে কোষে। যেন সারা শরীর জুড়ে বয়ে যায় প্রশান্তির অমীয় বাতাস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা হবার পর সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষা সম্মানিত হয়েছে। বাংলাভাষার প্রতি বিশ্বনাগরিকদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আমার মাতৃভাষা আমার প্রাণের ভাষা। আমার হৃদয় মেলে বেরিয়ে আসা স্বপ্নের ভাষা-প্রাণের উচ্চারণ।১৯
একুশ; আমাদের শিক্ষা ও করণীয়
কিছু প্রতিবাদ শিখা অনির্বাণের মতো, কিছু ঘটনা চেতনার আলো ছড়ায় সারা বিশ্বে , সে চেতনার দৃপ্ত শপথে সত্ত্বা জুড়ে আছ তোমরা, শুধু তোমরাই মোদের গরব। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে বিদ্রোহের বিবর্তন ধারায় মশালটির মাতা বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, শফিকসহ বহু পৌরুষ- প্রোজ্জ্বল তাজা প্রাণ তরুণের-আত্মদান আজকালের এচক্রনেমি ঘোরাতে ঘোরাতে কাল থেকে কালান্তরের মধ্যে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। এ পরিব্যাপ্তি যেন মানবসভ্যতার ইতিহাসের আগ্রেয় অধ্যায়ের পরিব্যাপ্তি।২০
একুশ থেকে আমরা পাই গণতন্ত্রের চেতনা, পাই সাম্যের চেতনা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠার অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে। একুশের চেতনা যেমন সমানাধিকারের চেতনা তেমনি একুশের চেতনা মানে অসাম্প্রদায়িকতার মহান চেতনা২১ ।
ঐক্য ও সম্প্রীতির শিক্ষা
ভাষার মৌলিক অধিকার শিক্ষা
মানসিক ও নৈতিক বিকাশ
মাথা নত না করার শিক্ষা
ভাষার প্রতি ভালবাসার শিক্ষা
আমাদের করণীয়
গৌরব অক্ষুণ্ন রাখা: সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর, অহিদুল্লাহ প্রমুখ আজ দেশে কাল থেকে কালে, শতাব্দী থেকে শতাব্দী অমর হয়ে থাকবেন। তারা আমাদের যে গৌরবে অভিষিক্ত কবে গেলেন-তাকে ধরে রাখা আজ আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আমাদের মায়ের ভাষাকে নিয়ে যেতে হবে ভাষার আন্তর্জাতিকতায়। আমাদেরকে সততা, ঐক্য, মেধা, শ্রমের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে শিক্ষায়-উন্নয়নকে দেশপ্রেম। আর তখনই আমরা খুঁজে পাব আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমাদের রক্তেরাঙা অমর একুশের সার্থকতা।
বাংলা বানান সংস্কার করা
ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা গ্রহণ
মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ সাহিত্যে পরিণত করা
মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হওয়া
বাংলাভাষার ভূমিকা স্পষ্টকরণ
একুশের অঙ্গিকার বাস্তবায়ন
একুশ আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার
রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় জীবনের আদর্শ সংযুক্ত হলে সে আন্দোলন দেশে একটি শাশ্বত রূপ নিয়ে জীবনকে গতিশীল করে তোলে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন একটি ব্যতিক্রমী আন্দোলন, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি দেশের সমগ্র জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ভাষার প্রশ্ন।৩০ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণ যে ত্যাগ স্বীকার করেছে বিশ্বের ইতিহাসে তার কোনো নজীর নেই। গত শতাব্দীতে আমাদের যে দুটি শ্রেষ্ঠ অর্জন নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি তার একটি হল স্বাধীনতা অর্জন এবং অন্যটি হল রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করা। দুটি অর্জনই অনন্যসাধারণ। যুদ্ধ করে মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা এই দুটি কোনো জাতির পক্ষেই একসাথে করা সম্ভব হয়নি। সে বিচারে আমরা অবশ্যই বিশেষ মর্যাদাবান জাতি হিসেবে পরিগণিত হবার দাবি রাখি।৩১ বাংলাদেশের জনগণকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিশ্বের অন্যান্য জাতির জন্যও শিক্ষণীয় অবদান রেখেছে।৩২ ২১ ফেব্রুয়ারি আজ “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” যা শুনলেই আমাদের বুক গর্ভে ভরে উঠে, অহংকার আমাদেরকে শক্ত করে পেয়ে বসে।
উপসংহার
কল্পনা করুন তো ভাষাবিহীন একটি পৃথিবীর কথা, একেক জন মানুষ যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, একে অপরের থেকে দূর-দূরান্ত, কেবল নির্বাক চোখে তাকিয়ে রয়, যেখানে মা কোনোদিন সন্তানের মুখে ‘‘মা’’ ডাক শুনতে পায় না। ভাবুন তো অক্ষরবিহীন একটি পৃথিবীর কথা! জগতের সকল পুস্তক যেখানে শোকে সাদা! পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্র আর চিঠি লেখে না, রানার যেখানে অলস ঘুমায়, কিন্তু আমরা জানি এটা অসম্ভব, কথা ছাড়া পৃথিবী অচল, লেখা ছাড়া সভ্যতা স্থবির। আমাদের ভাষা বেঁচে থাকে আমাদের কথায় আর লেখায় আর আমরা বেঁচে থাকি আমাদের ভাষায়। মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য প্রতিটি জাতি বদ্ধপরিকর। বাঙালি জাতি তার জলন্ত প্রমাণ। কৃষ্ণচূড়ার রক্তলালে রঞ্জিত আমাদের ভাষা শহীদদের আত্মবলিদান। বায়ান্ন সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাজপতে তারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য।৩৩ যার ফলে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছি। আমরা পেয়েছি আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা। ইতিহাস যে শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতকেও গর্ভে ধরে রাখে তার এক জ্বলজ্বলে নজীর রেখে গেছেন আমাদের ভাষা শহীদেরা। তারা আজ পৃথিবীর সকল ভাষাভাষী মানুষের নিকট শ্রদ্ধেয়। সমগ্র বিশ্বের মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তাদের আত্মত্যাগকে কেন্দ্র করেই তারা একুশকে নিজেদের মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে পালন করে।
তথ্যসূত্র
১) আল মুজাহিদী ,একুশে ফেব্রুয়ারি ২০০৩, যুগান্তর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২) জাফর, জাকির আবু, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের প্রাণের উচ্চারণ, সচিত্র বাংলাদেশ, পৃ.৬৪, একুশে সংখ্যা
৩) আল মুজাহিদী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, যুগান্তর, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৩
৪) ইসলাম, অধ্যাপক এম শহীদুল, ভাষা আন্দোলন: পটভূমি থেকে মাতৃভাষা দিবস, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.১৭
৫) মুখোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার ,রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জি, কলকাতা, ১৯৬৮, পৃ.৭৮
৬) রহমান, পীর হাবিবুর,যে পথ বেয়ে এলো ‘অমর একুশে’, যুগান্তর, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪
৭) মোমেন, খন্দকার আবদুল, প্রকৃষ্ট বন্ধন
৮) প্রাগুক্ত
৯) হোসেন, সিয়াম, ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.৭৯
১০) প্রাগুক্ত
১১) প্রাগুক্ত
১২) প্রাগুক্ত
১৩) আলী, অধ্যক্ষ ফোরকান,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, দৈনিক দিনকাল, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭
১৪) উদ্দীন, খালেক বিন জয়েন,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.৪১
১৫) সরকার, পবন কুমার ,শহীদ দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.৬৭
১৬) দৈনিক দিনকাল, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭
১৭) সরকার, পবন কুমার, শহীদ দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.৬৭
১৮) জাফর, জাকির আবু,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের প্রাণের উচ্চারণ, পৃ.৬৩
১৯) প্রাগুক্ত, পৃ.৬৫
২০) একুশে ফেব্রুয়ারি অস্তিত্ব ও মহাপ্রাণনার উৎস, আল মুজাহিদী, যুগান্তর, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪
২১) দৈনিক জনকণ্ঠ, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮
২২) রাষ্ট্রপতির বাণী, অমর একুশে বিশেষ ক্রোড়পত্র, যুগান্তর, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪
২৩) রহমান ,মুহম্মদ লুৎফর, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, বৈশাখ ১৩২৬
২৪) ফজল, আবুল , একুশ মানে মাথা নত না করা, অমর একুশের প্রবন্ধ, ফেব্রুয়ারি ২০০০, পৃ.৫০
২৫) প্রাগুক্ত, পৃ.৪৫
২৬) সিরাজ, কাজী , ধ্বনি আমাদের অহংকার ,সচিত্র বাংলাদেশ , একুশে সংখ্যা, পৃ.১৩
২৭) ফজল, আবুল , একুশ মানে মাথা নত না করা, অমর একুশের প্রবন্ধ, ফেব্রুয়ারি ২০০০, পৃ. ৪৬
২৮) প্রাগুক্ত, পৃ.৪৯
২৯) প্রাগুক্ত, পৃ.৫১
৩০) মোর্শেদ, প্রফেসর আবুল কালাম মনজুর ,একুশে আমাদের অহংকার, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.৪
৩১) খালেক, এম এ , একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.৪৩
৩২) প্রাগুক্ত, পৃ.৪৫
৩৩) ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, প্রথম আলো