কমাশিসা ডেস্ক: শুক্রবার ২৫সেপ্টেম্বার ২০২০. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যখন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন তখন বলেছিলেন যে, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টী লাভের জন্য এই প্রয়াস। সংসদে যখন বিলটি পাশ হয় তখন আপনার মতের বিরুদ্ধে যেতে কারো সাহস হয়নি। দেশ বিদেশ সহ আশে পাশের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে আপনি তা করতে সক্ষম হয়েছেন। আপনি চেষ্টা করেছেন একটি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিতে। কিন্তু তা কতটুকু ফলপ্রসু হয়েছে ভবিষ্যতই বলে দিবে। যাক আপনাকে মুল সমস্যার কথা এখন বলি। একটি জাতি তখনই সমৃদ্ধি লাভ করে যখন তাদের সকলে জাতীয় কিছু কমন ইস্যুতে একমত হয়। যেমন দেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা শিক্ষা ও অর্থনীতি। প্রতিটি কাজে সফল হতে হলে প্রয়োজন ইনসাফ। আপনি যতই চেষ্টা করুন ভাল কিছুর কিন্তু ইনসাফের ঘাটতি থাকলে কিন্তু তার স্থায়ীত্ব থাকেনা। আশাকরি জন প্রশাসন আদালত পুলিশ মেলেটারি সবখানে সমতা ন্যায়পরায়নতা তথা ইনসাফ কায়েম করবেন। বিশেষ করে চিকিতসা বিভাগের অরাজকতা বন্ধে প্রয়োজন আপনার শক্ত হুকুম। যাক আমি কিন্তু এখনো আসল কথায় আসিনি।
শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা কিন্তু কোন ভাষার উপর নির্ভর করেনা। রুশ চায়না জাপান তাদের সকলে জাগতিক উন্নতির শিখরে পৌছেছে তাদের নিজস্ব কৃষ্টি কালচার ও আদর্শ এবং নিজেদের ভাষা নিয়ে। আমাদের মাঝে একটি ভুল প্রবনতা হলো ইংরেজীই হলো সব। আসলে উন্নতি অগ্রগতি প্রগতি ভাষার উপর না; তা নির্ভর করে জাতির ঐকান্তিক মেনহত ও শ্রমের উপর। আর এই কঠোর শ্রমের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করতে প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম। আর এই ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি করতে হলে থাকতে হবে তার আয়োজন। এই আয়োজনটা হলো একই মানস সম্পন্ন একটি জাতির। জাতীয় চেতনায় যদি কোন জাতি ঐক্যবদ্ধ না থাকে তাহলে তাদের পক্ষে উন্নতি কখনো সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। কোন জাতিকে ধংস করতে হলে তাদের ভিতর ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় ইনট্রেষ্ট ঢুকিয়ে দিন দেখবেন কাজ হবে। একদল ডাকবে পুব দিকে অন্যদল ডাকবে পশ্চিম দিকে। কেউ বলবে আসো ডানে অন্যজন বলবে আসো বামে। এভাবে অনৈক্য বিশৃংখলা একটি জাতিকে শুধু পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
তাহলে আমাদের মাঝে কোন সে মতানৈক্য যা কিনা আমাদের কে ঐক্যবদ্ধ মানস তৈরিতে বাঁধার প্রাচির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে? হ্যাঁ সেটা হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। জী মোহতারামা! আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই আমাদেরকে টুকরো টুকরো করে রেখেছে। কেউ ভাল করলে বলবে মন্দ। আর নিজে মন্দ করলে ভাবে করছে জান্নাতের বাগান! কেউ বলে এখন দিন কেউ বলে রাত! কেউ বলে উন্নতির জোয়ার কেউ বলে খোলেছে গজবের দোয়ার! আমরা জন্মগত ও ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশী। কিন্তু মানস জগতে আমরা কেউ কারো না। এর মূল কারণ হলো আমাদের চতুর্মুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। ক- সরকারি খ- আলিয়া- গ- কওমি ঘ-প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম। হ্যাঁ, আমরা তাতেও কোন খারাবি দেখছিনা। খারাবিটা হলো অন্য জাগায়। পৃথিবীতে উন্নত যত দেশ আছে, তাদের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চলে একই সিলেবাসে। তাদের সেকেন্ডারি স্কুলের সিলেবাস হলো একই। শিক্ষার্থীরা মসজিদে পড়বে না মন্দিরে না গির্জায় না পেগুডায় না মাদরাসায় সেটা কোন বিষয় না। বিষয় হলো সে শিখাচ্ছে কি? ওটাই হলো মুল! আমরা বলি মেট্টিক, আরো বলি এসএসসি। অন্যান্য দেশে বলে জিসিএসি। এই ১০ম বা ১১তম ক্লাস পর্যন্ত প্রতিটি শিশুকে পড়াতেই হবে। প্রতিটি বিদ্যালয় তা ফলো করতেই হবে। কোন বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান জিসিএসি পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা সিলেবাস যদি অন্তর্ভুক্ত না করে তাহলে তাকে দরজাই খোলতে দেয়া হবেনা। ওটা জরুরি কেন? কারণ একটি দেশ তার কৃষ্টি কালচার আচার আচরণ দেশিয় নিয়ম কানুন সামাজিক আচার বিহার সম্পর্ক যদি কোন নাগরিক সম্যক ধারণা না থাকে তাহলে তাদের মাঝে মানসিক দুরুত্ব তৈরি হতে থাকবে। একজনের প্রয়োজন হবে আরেকজনের জন্য বিনোদন। একজনের বেদনা হবে অন্যজানের জন্য তামাশা। এই সমস্যাটা প্রকট হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ সরকার যদি সহসা এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহন না করে তাহলে দেশটির ভবিষ্যত আরো বেশি বিশৃংখলায় পর্যবসিত হবে। আমরা বিনীত অনুরোধ করছি, দয়া করে সংসদে একটি বিল পাশ করুন। যে বা যারা প্রাথমিক মক্তব ইবেতেদাইয়া কেজি খুলবে তাদের সকলকে জাতীয় শিক্ষা সিলেবাসের নির্ধারীত পাঠ বা বই পাঠ করাতে হবে। তদ্রুপ সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক স্কুলের জন্য তাই প্রযোজ্য হবে। একজন নাগরিক যদি মেট্টিক পর্যন্ত সাধারণ জ্ঞান লাভ করে, দেশ সম্পর্ক জানবে, প্রতিবেশি সম্পর্ক জানবে, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য জানবে। আশা করা যায় জাতীয় ঐক্যমতে বিরাট ভুমিকা পালন করতে সে সক্ষম হবে।
তাই একমুখী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সিলেবাসের কোন বিকল্প নেই। ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিক যার তার ধর্ম শিখার পুর্ণ স্বাধীনতা পাবে। এভাবে যদি নৈতিকতায় বলিয়ান ও আদর্শীক একটি জাতি আমরা গড়ে তুলতে পারি তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জল বলা যায়। অন্যথায় সকল শ্রম যাবে বৃথা। সকল পরিকল্পনা যাবে পন্ড হয়ে। ধর্মহীনতা মানুষকে দেউলিয়া করে তুলে।
দেশের প্রতিটি মসজিদ ও মক্তবকে প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করুন। ফাঁকা মসজিদ গুলোকে কাজে লাগান। হিন্দুদের মন্দির খৃষ্টানদের গির্জাও কাজে লাগুক। মালেশিয়ার মত ইসলামি মুল্যবোধের শিক্ষাকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে নিয়ে ঢেলে সাজান। সখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যও রাখুন পর্যাপ্ত সুযোগ। তাতে একটি উন্নত মানস সম্পন্ন জাতি গঠনে আপনি সক্ষম হবেন। বঙ্গবন্ধুর মত আপনাকেও জাতি হাজার হাজার বছর স্মরণ রাখবে। জংগীবাদ উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎস হলো বিচ্ছিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই আশাকরি আপনি আমাদের আহবানে সাড়া দিবেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয় করণ বাধ্যতা মূলক করুন। আপনার একটি ডিক্রি একটি আদেশ একটি দিকনির্দশনা এজাতির ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে ইনশা-আল্লাহ। অভয় হিসাবে একটি কথা বলা দরকার যে, যারা প্রাইভেট স্কুল কেজি বা ইসলামি মক্তব মাদরাসা চালাচ্ছেন সেগুলো কিন্তু চলবে তার আপন গতিতে। শুধু সরকারি সিলেবাসের মেইন সাবজেক্ট গুলো সকলকে ফলো করা মাত্র। প্রয়োজনে সরকার ফান্ড দিবে। তবু এই স্কিম বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা আমাদের জাতীয় একটি ইস্যু। একই দেশে জন্ম লাভ করে পাঠশালায় গিয়েও কেউ থাকে অন্ধ কেউ থাকে সনদহীন কেউ বেড়ে উঠে বিদেশী নাগরিক হয়ে যা আমাদের জন্য সৃষ্টি করছে মারাত্মক সামাজিক হুমকি। বৈষম্যও তৈরি হচ্ছে নাগরিকদের মাঝে। যা কখনো কেউ কামনা করতে পারেনা।