সোমবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:৫০
Home / অনুসন্ধান / আল্লামা আহমদ শফীকে কি আসলেই তিলে তিলে হত্যা করা হয়ছে?

আল্লামা আহমদ শফীকে কি আসলেই তিলে তিলে হত্যা করা হয়ছে?

আল্লামা শফী সাহেবের মৃত্যু নিয়ে ওনার খাদেম  শফীর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০।
রিপোর্টারঃ আসসালামু আলাইকুম, শফি ভাই, আপনি কেমন আছেন?
শফীঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো
রিপোর্টার ঃ ১৬-১৭ তারিখ হাটহাজারী কি হয়েছিলো?
শফীঃ ১৬ তারিখের এর আন্দোলনের ব্যাপারে আপনারা অবগত আছেন, জহুর নামাজের পরে ছাত্ররা আনাস ভাইয়ের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে, আমি হুযুর কে দুপুরে ঔষধ খাওয়ানোর পর হুযুর কে মাদ্রাসার পরিস্থিতি বলে থাকি। হুযুর তখন সুস্থ ছিলেন।
আসর নামাজের পর হুযুর আমাকে আবার জিজ্ঞাস করলেন, আমি হুযুর কে পরিস্থিতি সমপর্কে বলে থাকি,।।
সন্ধার পর শুরা কমিটি আগমন ঘটে, তারা অনেক পিড়াপীড়ি করেন যেনো পরিস্থিতি শান্ত করতে আনাস কে বহিষ্কার করা হয়, পরে হুযুর তাদের কথা মেনে নেন, এবং ছাত্রদের কে রুমে রুমে যাওয়ার আদেশ দেন।
রিপোর্রটারঃ পরের দিন কি ঘটেছিলো?
শফীঃ ১৭ তারিখ সকালে আমি হুযুর কে ঔষধ খাওয়ালাম, হুযুরের হাই প্রেশার রয়েছে, শ্বাসকষ্ট রয়েছে, সকালে ঔষধ খাওয়ানোর পরে হুযুরের ঔষধ শেষ হয়ে যায়, তখন আমি একজন কে পাঠাচ্ছিলাম মাদ্রাসার বাহিরে, যেনো ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে আসে, হুযুরের ইনহেলার লাগে৷ মাঝেমধ্যে নেবুলাইজার লাগে, প্রতি বৃহস্পতিবার হুযুরের ঔষধ আনতে হতো, কিন্ত সেইদিন ছাত্র দের আন্দোলনের কারণে ঔষধ আনা সম্ভব হয়নি, আমি যাকে ঔষধ এর জন্য পাঠিয়েছিলাম, তাকে রুম থেকে বের হওয়া মাত্র কিছু ছাত্র মারধর করে, সে আবার রুমে চলে আসে।
#দুপুরঃ দুপুরে হুযুরের ঔষধ খাওয়াইতে পারিনি, তখন থেকে হুযুরের শরীর ঘামাতে থাকে, বুকে ব্যাথা করতে থাকে, সেই সময় জরুরি ঔষধ দিতে না পারার কারণে বুকে ব্যাথা আরো বাড়তে থাকে,।
হুযুরের বুকে ব্যাথা বাড়ার কারণে হুযুর আমাকে বলেন, আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলো, এর মাঝে আমি যোগাযোগ করি এম্বুলেন্স এর জন্য, আমি কিছু আন্দোলন রত ছাত্র কে বললাম, হুযুরের ঔষধ শেষ, তারা বললো, #বুইড়া_মরুক এখান থেকে কাউকে বের হতে দেওয়া হবেনা, এর মধ্যে হুযুরের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখন আবার ঔষধের জন্য বের হতে চাইলে তারা বের হতে দেয়নাই, এর কিছুক্ষণ পরে ছাত্রদের ৩০-৪০ এর একটা গ্রুপ হুযুর কে গালিগালাজ করতে করতে হুযুরের ভবনের দিকে আসতে থাকে, তাদের হাতে ছিলো রট, লাঠি, তার প্রতিটি দরজায় লাঠি আর রট দিয়ে পিটাতে থাকে, এইসময় আমি হুযুর কে আমার বুকের সাথে আলগিয়ে ধরে রাখি,৷ হুযুর শরীর কাঁপতে থাকে, যখন তারা হুযুর এর রুমে একের পর এক আঘাত করতে থাকে, তখন হুযুর আমাকে আরো শক্ত করে ধরতে বলেন, এক পর্যায়ে হুযুরের শ্বাসকষ্ট আরো বাড়তে থাকে, তারা লাত্তি দিয়ে রুমের দরজা ভেংগে ফেলে, জানালা সব ভেংগে ফেলে, এতে হুযুরের মানসিক অশান্তি আরো বাড়তে থাকে, আর হুযুরের চোখে পানি ঝরতে থাকে।
এক পর্যায়ে কয়েকজন ছাত্র রুমে ডুকে পড়ে, এবং তাদের হাতে লাঠি, তারা হুযুরের দিকে তাড়িয়ে আসতে থাকে দেখে আমি সামনে দাড়িয়ে যাই, তারা বলে, মাদার**** গতকাল বলছে কি, আর আজকে বলছে কি (উল্যেখ্য যে, গতকাল ১৬ তারিখ হুযুর আনাস ভাইকে বহিষ্কার করেছিলো, তবে ১৭ তারিখ সকালে কে যেনো গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে যে, হুযুর নাকি আনাস কে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন) এইটা ছিলো মিথ্যা গুজব, এই গুজবের ভিত্তিতে আন্দোলন রত ছাত্ররা হুযুরের রুমে ভাংচুর চালাতে থাকে, আর হুযুর কে গালিগালাজ করতে থাকে, তখন হুযুর এর শরীর কাঁপতে কাঁপতে সারা শরীর ঘামিয়ে যায়, আর মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে, আমি ছাত্রদের কে থামতে বললে তাদের একজন আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে, এবং আরেকজনের আঘাত হুযুরের বিচানায় পড়ে, আমাকে আঘাত করতে গিয়ে লম্বা একটা ছেলের লাঠির আঘাত কিছুটা হুযুরের গায়ে পড়ে যায়, এই পরিস্থিতি দেখে খুব কষ্ট করে আমি আনাস ভাই কে ফোন দিয়েছিলাম, মাত্র ২৩ সেকেন্ড কথা হয়, যে রুমে ডুকে পড়েছে ছাত্ররা, তখন তিনি ওসিকে ফোন করেন, এর মধ্যে হুযুরের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে,
আমি আন্দোলনরত ছাত্রদের পায়ে পড়ে যাই, আমি তাদের পায়ে ধরে বলি, তোমরা বিশ্বাস করো, হুযুরের অবস্থা খারাপ, ওনাকে হসপিটালে নিতে হবে, আমাদের কে বের হতে দাও,
তখন তারা আবার আমাকে কিল ঘুষি লাত্তি দিতে থাকে। একপর্যায়ে প্রশাসন প্রস্তুতি নেয় হুযুর কে রক্ষার জন্য,
এর মধ্যে কয়েকজন ছাত্র আমাকে বলে, তুই মাদার** এর জন্য এখন পুলিশ ছাত্রদের উপর আক্রমন করবে, তোরে কিছু লেখা লেখে দিচ্ছি, এইটা এখন পড়বি, তখন তারা একজন আমাকে গালে থাপ্পড় দেয়, আরেকজন একটা পৃষ্ঠা লেখা আমার সামনে ধরে, আমি ভয়ে ভয়ে ওইটা পড়তে থাকি, যা তারা ভিডিও করে প্রকাশ করে, তারা আমাকে লেখে দিয়েছে যে, বলো, হুযুরের উপর কোনো হামলা হয়নাই, আমরা নিরাপদ আছি, আমরা ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে একমত, যখন আমি এইটা পড়তেছিলাম, তখন হুযুর ভয়ে আমার এক হাত ধরে রেখেছিলেন, এর পর তারা বের হয়ে যায়, এবং বিনা চিকিৎসায় হুযুরের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে,
মাগরিবের আগে হুযুরের আবার প্রচন্ড বুকে ব্যাথা শুরু হয়, তখন আমি আবার অনুরোধ করি, যেনো এম্বুলেন্স আসতে দেওয়া হয়, হুযুর কে হাঁসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, কিন্ত আন্দোলন কারীরা বের হতে দেয়নাই।
মাগরিবের পরেও তাদের কে অনুরোধ করে কোন লাভ হয়না,
এরপর শুরা আসে, তারা হুযুরের অবস্থা দেখে হতবিহবল হয়ে যায়, তারা দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে হুযুর এর সাক্ষর নেয়, আর হুযুর কে হাঁসপাতালে নেওয়ার জন্য আন্দোলন কারীদের অনুরোধ করে, তবে আন্দোলন কারীরা তখনো হুযুর কে বের হতে দেয়না, এরপর এম্বুলেন্স আসলেও সেখানে বাধা দেয়, অবশেষে রাত ১০ টার পরে হুযুরের এম্বুলেন্স নিয়ে বের হবার সময় আন্দোলন কারী আরেক দল এসে গাঁড়ি আটক করে ফেলে, সকাল থেকে ঔষধ না খাওয়ার কারণে হুযুরের অবস্থা মুমুর্ষ প্রায় হয়ে যায়, কারণ কাউকে বের হয়ে হুযুরের ঔষধ আনতে দেওয়া হয়নি, এইদিকে অক্সিজেন ও শেষ হয়ে আসে, হুযুর তখন বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকে। সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট এম্বুলেন্স আটক রাখা হয়,,, পরে ছাড়া হয়,
এর পরের ২৪ ঘন্টায় হুযুর মহান রবের সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
রিপোর্টারঃ আপনাকে ধনব্যাদ।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...