কমাশিসা ডেস্ক: ২৩ সেপ্টেম্বার ২০২০। সমাজে জায়গা করে নেয়ার প্রবণতা সকলের মাঝে থাকে। একটি বনলতাও চায় অন্য একটি গাছের গতর বেয়ে নিজের জানান দিতে। সেখানে নেতা দলপতি সংগঠক লেখক সকলর তেমনি স্পৃহা কাজ করে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা এখন তার ক্রান্তিকাল পার করছে বলে অনেকে মনে করেন। বিভিন্ন চড়াই উৎরাইর পর এই প্রতিষ্ঠান গুলো এখন দুদুল্যমান। পরিবর্তনশীল বিশ্বে নিজেকে ঠিকিয়ে রাখার সংগ্রামে ইউরোপ আমেরিকার কওমি মাদরাসাগুলো নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে সচেষ্ট থাকলেও ভারত ও বাংলাদেশের আলেমদের সমস্যা যে তিমীরে ছিলো সেখানেই থেকে গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। পাকিস্তানের কওমি মাদরাসগুলো বেশ উন্নতি লাভ করেছে। যদিও কাংখিত পরিবর্তন এখনো অনেক দূর কিন্তু তাদের সরকারি স্কুল গুলোতে দীনী শিক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পজিটিভ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সেখানে। ভারতের পরিবেশ অবশ্য ভিন্ন। কিন্তু বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও ইসলামী শিক্ষা উপেক্ষীত। স্কুল কলেজ গুলোতে নৈরাজ্যবাদী শিক্ষা। আর মাদরাসাগুলোতে শুধু গোরাস্তানের বেড়া পেরোনোর শিক্ষা। প্রশ্ন হলো গোরস্তানে যাবার আগে যে ব্যক্তিটির জীবন হাবিয়া দোজখে পরিণত হয়েছে সেটার সমাধান কে দিবে তাহলে? জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে ঈমানের হালতে থেকেই না কবরে যাওয়া।
সমাজে যখন অবিচার নৈরাজ্যবাদিতা খুন ধর্ষণ লোটমার মিথ্যা ভেজাল সুদ ঘোষ অপহরণ ডাল ভাত তখন নিছক ধর্মীয় শিক্ষা কি তার সমাধান? এমনকি ধার্মিকরাও আজকাল প্রতারণায় লিপ্ত। বেফাক হেফাজত হাটাজারির ঘটনা আমাদের সেই দিকেই ইংগিত করে। ধর্মীয় লেবাসধারীদের আর্থিক সংগঠন ১০০% ভাগ আত্মসাতের কারখানা যেখানে সেখানে অধার্মিকদের কথা বলে কোন লাভ আছে? নৈতিকতা বর্জিত স্কুল শিক্ষা বিচারহীন অসমতা ও ইনসাফহীন একটি সমাজ জাতির জন্য অভিশাপ। ঠিক তদ্রুপ মাদরাসগুলো আমাদের যতটুকু নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছে তা আর ধোপে ঠিকছেনা। অসুস্থপরিবেশে থেকে সুস্থ থাকার চেষ্টা কখনো সফলতার মুখ দেখা যায় না।
আর্থিক স্বচ্ছলতার সাথে নৈতিকতার প্রশিক্ষণ দরকার। আমরা দেখি বাংলাদেশের ইসলামি ঘরানার রাজনীতি পুরাটাই ধর্মীয় ভাবাবেগ ধারা পরিচালিত। সবকিছু তারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান দেখেন। যদিও মুখে বলেন ইসলামী সমাধান বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই। কারণ ইসলামী সমাধান হলে সেখানে সমাজে দুটি দল তৈরি হবার কথা না। ধর্মীয় শিক্ষার আর জাগতিক শিক্ষার মাঝে দেয়াল তৈরি হতোনা। হেফাজতের ১৩ দফা যখন আমরা বিশ্লেষণ করি তখন দেখি প্রতিটি দফা ধর্মীয় ভাবাবেগ দিয়ে তৈরি। বাংলাদেশ যেহেতু পৃথিবীর একটি অংশ। তাই বিশ্ব মোড়লদের ডিংগিয়ে কিছু করা অসম্ভব। ধর্মীয় ইস্যুকে যদি সামাজিক অধিকারে রূপান্তরীত করা যায় তখন সেটা কার্যকর করা সহজ হয়। যেমন হিজাবের ইস্যু যখন তুরস্কে আসে তখন এরদোগান সেটাকে মানুষের মানবিক ও গণতান্ত্রীক অধিকার বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আয়া সুফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরীত করার ক্ষেত্রে সেই একই পন্থা অবলম্বন করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের ব্রাদারহুড সামাজিক উন্নয়নের দোয়ার খোলে মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। ইস্তানবুলের উন্নয়নই ছিল এরদোগানের মুল প্রাণশক্তি। এখন তিনি যদি শুধু কোরআন ও হাদীসের রেফারেন্স টেনে আন্দোলন শুরু করতেন তাহলে বাস্তবায়ন করা দূরের কথা তাকে এখন ফাসির রশিতে ঝুলতে হতো। মানুষ এক পয়সার মুল্য দিতো না। কারণ পৃথিবীর পরিবেশকে এমন এক রূপ দেয়া হয়েছে যেখান মানুষ ধর্মকে সমস্যা হিসাবে দেখতে শুরু করেছে। ইসলাম যে সফলতার নাম তা মুখ দিয়ে বলার চেয়ে কাজে দেখানো হলো উত্তম পদ্ধতি।
হাসপাতাল নির্মাণ, মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি সহ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ইসলামি শিক্ষার বিস্তাত সম্ভব। আমরা কি করি? হেফাজতের মতো শুধু ধর্মীয় আবেগ তুলি। আপনাকে তারা হাদিয়া দিবে, জানাযায় ডাকবে, মসজিদের ইমামতিতে ডাকবে, রোস্ট বিরিয়ানি খাওয়াবে। কিন্তু যখন ভোট চাইবেন তখন মুখ ফিরিয়ে নেয়। যখন সমাজের ইমাম বানানোর জন্য বলবেন তখন সে আপনাকে যোগ্য মনে করেনা। এজন্য ব্রাদারহুড বলেন আর যাই তারা আগাচ্ছে সামাজিক কাজের মাধ্যমে। তাদের কাছে আছে সর্বাধুনিক শিক্ষা। আমরা শুধু ধর্মীয় জিগির তুলে পার পেতে চাই। সমাজে বিপ্লব ঘটাতে চাই কিন্তু তা সুদূর পরাহত।
আজকে ইসলামি ঘরানার প্রতিটি সেক্টরে দালালদের দৌরাত্য কেন? মাদরাসা গুলোকে কেন স্যাকুলারদের হাতের পুতুল বানানো হচ্ছে? কেন সকালে এক কথা আবার রাতে মারেন পাল্টি? এর একমাত্র কারণ হলো জাগতিক লোভ। জাগতিক সমস্যা দূরিকরণে কোন প্রকার ভুমিকা না রেখে চান একে অন্যকে লেং মেরে গোপন আঁতাত করে জবর দখল। বেফাক হাইয়া হাটাজারিতে শুধু টাকার খেলা। ইসলামি দলগুলো ভেংগেছে পদ লোভে। টাকা ইনকামের ভাল পথ থাকতো তাহলে নৈতিকতার পদস্খলন ঘটতোনা। পেটে ক্ষুধা রেখে টেবিলে সাজানো খাবার সাবাড় করা থেকে জিহবা সামলাবে কেমনে? হ্যাঁ হালাল উপার্জনের পথ যেমন থাকতে হবে তেমনি থাকতে হবে প্রশাসনিক শৃংখলা। মাদারিসে কওমিয়ায় বিচারহীনতাও একটা অসুস্থতা। একজন অপরাধ করলো তার কোন বিচার না করেই গোপনে পালাতে সহযোগিতা করা। এভাবে দেখে না দেখে অপরাধ গুলো একদিন মহিরোহ হয়। তাই মানুষ ফিরিস্তা না। মানুষকে শাসন করার জন্য আইন আছে। আইনের যথাযত প্রয়োগই হলো সমাধান। শুধু শুধু ধর্মীয় জিগির কাজ দিবেনা। সমাজে বিরাজমান অপসংস্কৃতির বিকল্প ভাবতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। শক্তিহীন হুংকার হাসির খোরাক যোগাবে কেবল।