একেএম নিজাম:
সংবিধান পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে
কারো বিরুদ্ধে মামলা করার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে একটি নোটিশ দিতে হয়। যাকে উকিল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ বলে। এই উকিল নোটিশ কোন মামলা হিসেব গণ্য হবে না, তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব না এলে তখনই কেবল চাইলে বাদী পক্ষ থেকে আইনিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
সংবিধান (ইংরেজি: Constitution) হলো কোন শাসনব্যবস্থার মূল গ্রন্থ। কোন রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠিান পরিচালিত হবার জন্য মূলনীতি, নিয়মাবলী, এবং কর্তব্যসমূহ লিপিবদ্ধ ও সংজ্ঞায়িত থাকে।
এই সংবিধান হল যে কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মৌলিক দলিল এবং সেখানে বর্ণিত নিয়মের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়।
তাই সংবিধানের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা অপরাধ হিসেব গণ্য হবে,
বিগত কয়েকদিন যাবৎ কাজির বাজার মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে অনলাইনে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে.. …!
বিষয়টি আরো খোলাসা করলে শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আরো ক্লিয়ার হবে বলে মনে করি।
বরখাস্তের প্রক্রিয়া:
বরখাস্ত করার আগে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সাধারণত এটি একটি অফিসিয়াল নোটিশের মাধ্যমে হয়ে থাকে এবং এতে কিছু ধাপও রয়েছে:
কর্মীকে তার অপরাধ বা ভুল কাজের জন্য অফিসিয়াল নোটিশ দেওয়া হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়।
তদন্ত শেষে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তখন তাকে বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্ত এবং শোকজ:
কর্মীকে বরখাস্ত করার আগে প্রায়শই “শোকজ” নোটিশ দেওয়া হয়। শোকজ মানে হলো কারণ দর্শানোর নোটিশ। এতে কর্মীকে তার দোষ বা অভিযোগের ভিত্তিতে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেওয়া হয়। যদি সে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে বরখাস্ত করা হতে পারে। অথচ ফাউন্ডার প্রিনসিপ্যাল মরহুম আল্লামা হাবিবুর রাহমানের হাতে করা শুরা লিস্ট কেটে ছেটে যারা তাদের মতের না বা বেআইনি কিছু মেনে নিবেনা এমন শুরা সদস্যদের নাম বাদ দেয়া হয় যা সম্পুর্ণ বেআইনী অসাংবিধানিক। উপরুন্তু শুরা লিস্টে এমন কিছু লোকের নাম যুক্ত করা হয় যাদের সাথে জামেয়ার পুর্ব কোন পরিচিতি নাই। এমনকি একই পরিবারের ৪ চার জনের নাম কিভাবে আসে তা বোধগম্যহীন।
এখানে জামেয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা সামীউর রহমান মুছা সাহেবের অব্যাহতি প্রক্রিয়ায় যেমন চরম অসঙ্গতি মূলক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছিলো (এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি লিখা পৃথক বয়ানে আলোচনা করবো), তেমনিভাবে চলতি মাসের বিগত ০৯-০১-২০২৫ তারিখে বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় মুহতামীমের আসনে বসা জামেয়ার বর্তমান মুহতামীম সাহেব কর্তৃক আহ্বানকৃত মজলিশে শূরার বৈঠক আহ্বানের ক্ষেত্রে বেশকিছু অসঙ্গতি ও বিধিমালা পরিপন্থী কাজ ও শূরা বৈঠক আহ্বানে নিয়ম নির্দেশনা অনুসরণে যথেষ্ট ঘাটতি প্রকাশ পায়।
১.শূরা বৈঠক আহ্বানের নির্দেশনা অনুসরণে বৈঠক বিধিমালার তোয়াক্কা না করা।
শূরা বৈঠক আহ্বানের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক নির্দেশনা ছিলো বৈঠক তারিখের নুন্যতম এক সপ্তাহ পূর্বে সকল শূরা মেম্বারদের হাতে দাওয়াতনামা পৌঁছানো। এখানে আহ্বায়ক ও তাঁর উপদেশ দাতারা মেম্বারদের মধ্যে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন!
পক্ষের মেম্বার বিপক্ষের মেম্বার!
উনাদের পক্ষের মেম্বার যাদেরকে মনে করেছেন তাঁদের হাতে এক সপ্তাহ পূর্বে দাওয়াত নামা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনাটি সঠিকভাবে অনুসরণ করেছেন! বিপরীতে, উনাদের যাদের মনে হয়েছে বিপক্ষের মেম্বার তাঁদের হাতে এক সপ্তাহ পূর্বে দাওয়াত নামা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা অনুসরণ করেননি! তাঁদের হাতে ৯তারিখ প্রোগ্রামের দাওয়াত নামা ইচ্ছে করেই মাত্র ২/৩ দিন আগে পৌঁছে দিয়েছেন! যা শূরা বৈঠক আয়োজনের নির্দেশনা ও নীতিমালার চরম লঙ্গন বলে প্রমাণিত হয়। বিষয়টি এতো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার সাথে করা হয় দাওয়াত নামার আমন্ত্রণ পত্রে চিঠি প্রকাশ ও বিতরণের কোনো তারিখই উল্লেখ করা হয় নাই! বলা যায় ষড়যন্ত্র মূলক চিন্তাধারারই প্রতিফলন।
২.মজলিশে শূরায় নতুন মেম্বার বর্ধিত করণে শূরা বিধিমালার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করা।
মজলিশে শূরায় নতুন মেম্বার বর্ধিত করণ প্রক্রিয়াটি ছিলো নতুন কোনো মেম্বার নিয়োগ দিতে হলে শূরা বৈঠকে নতুন সদস্য নিয়োগদানের বিষয়টি উত্থাপন করত: শূরা কমিটি থেকে নতুন শূরা মেম্বার নিয়োগ প্রদানের বিষয়টি পাশ করিয়ে নিতে হবে। এখানে দেখা যায় প্রক্রিয়াটির অনুসরণ না করেই শূরা সভাপতির সাথে আলাপ আলোচনা ছাড়াই যেমন বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে তেমনিভাবে নতূন শূরা মেম্বার বর্ধিত করণ প্রক্রিয়াটি শূরা বৈঠকে উত্থাপন ও পাশ করা ব্যাতিতই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে উনাদের ইচ্ছে মতো পছন্দের মানুষ দেখে দেখে শূরা মেম্বার নিয়োগ দিয়ে শূরা সদস্য বানিয়ে ৯তারিখের শূরা বৈঠকের দাওয়াত নামা পৌঁছে দিয়েছেন!
আশ্চর্যের বিষয়: যেসব ব্যক্তি বিশেষকে নতুন শূরা বানিয়ে নিয়ে আসবেন এদের সকলেই ছিলেন প্রিন্সিপাল রহ. এর চিন্তা চেতনা রাজনৈতিক সামাজিক সকল মত ও পথের ঘোর বিরোধী!
৩.শূরা বৈঠকের এজেন্ডায় প্রিন্সিপাল রহ’র ছাহেবজাদা মাওলানা মুছা’র সাথে তহবিল সংক্রান্ত পক্ষপাতমূলক অডিট রিপোর্টের অমীমাংসিত বিষয়টিকে উপস্থাপন করে তা উদ্ধারের বিষয়টি উল্লেখ থাকা!
অমীমাংসিত বিষয় হওয়ায় যা ছিলো মাওলানা মুছা ও প্রিন্সিপাল পরিবারের প্রতি চরম অনৈতিক অবিচার ও জুলুম।
শুরা সভাপতি নিজ উদ্যোগে শুরা বৈঠকের অসংগতি দেখে তা বাতিল করার জন্য বর্তমান মুহতামিম সাহেবের কাছে অনুরোধ জানান। উত্তরে তিনি বলেন যে বাকি যারা আছে ওরা আমার কথা শোনবেনা। কি আশ্চরযের বিষয়?
এহেন সংবিধান ও আইন বিরোধী বিষয়টি সামনে আসাতে মাওলানা মুছাকে বাদী করে শূরা মেম্বারগণই আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। আদালত তাঁদের আবেদনটিকে যৌক্তিক বিবেচনায় নেন এবং আহ্বানকৃত বিধিমালা পরিপন্থী শূরা বৈঠকটির প্রতি স্থগিতাদেশ জারি করে নোটিশ প্রদান করেন ও জবাবদিহিতা চান।