শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৯:০০
Home / অনুসন্ধান / উসুলুশ শাশি’র মুসান্নিফ : একটি সন্ধানী পর্যালোচনা

উসুলুশ শাশি’র মুসান্নিফ : একটি সন্ধানী পর্যালোচনা

imagesলুকমান হাকিম ::
শাশ হচ্ছে তুর্কিস্তানের একটি শহর। এদিকে নিসবত বা সম্বন্ধ করে বলা হয় শাশি। এ শহর থেকে তৈরি হয়েছেন ইসলাম-ধর্মবিশেষজ্ঞ অনেক গুণীজন। (আল আনসাব লিস-সামআনি ৮/১৩)
শাশ একটি গ্রামের নাম। এখানের খুব কম সংখ্যক লোক বড় হয়েছেন। কিন্তু যে শাশ থেকে ধর্মীয় অনেক ব্যক্তিবর্গ তৈরি হয়েছেন, সে শাশ হচ্ছে, ইমাম শাফি রাহ. এর মুকাল্লিদদের একটি বসবাস-শহর। সে সমস্ত দেশে হানাফি মাযহাব-অনুসারিদের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও শাশ শহরে শাফি মাযহাব প্রচারিত ও প্রসারিত হয়েছে, আবু বকর মুহাম্মদ বিন আলি বিন ইসমাইল আল কুফ্ফাল আশ শাশি এর মাধ্যমে। তিনি প্রথম দিকে তার এলাকা ছেড়ে জ্ঞানার্জনের জন্য চলে যান অনেক দূরে। দীর্ঘ দিন পরে এলাকায় ফিরে এসে সবাইকে ইমাম শাফি রাহ. এর অনুসারী করেন। (মু’জামুল বুলদান ৩/৩০৮)
ইতিহাস থেকে জানা যায়, শাশি, পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করেছেন শাফি মাযহাবের আবু বকর মুহাম্মদ বিন আলি বিন ইসমাইল আল কুফ্ফাল মৃ. ৩১৪ ও ফখরুল ইসলাম আবু বকর শাশি মৃ. ৫০৭। (আল-জাওযাহিরুল মাজিয়্যাহ ফি তাবাকাতিল হানাফিয়্যাহ ২/৪৩৫)। হিলয়াতুল উলামা ও মুতামাদসহ শাফি মাযহাব বিষয়ক অনেক কিতাব কিতাব যাঁরা রচনা করেছেন। (তাবাক্বাতে শাফিইয়্যাহ আল কুবরা ৬/৭০)
হানাফি মাযহাবের অনেক, যেমন: ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম ও আবু ইযাক্বুব খুরাসানি শাশি মৃ. ৩২৫/২৬। যিনি জামে’ কাবীর যায়দ বিন উসামা থেকে, তিনি জাওযজানি থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেছেন।
‘উসুলুশ শাশি’ হচ্ছে, ফিক্বহে হানাফির উসুল শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য মতনের কিতাব। যাকে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মধ্যএশিয়া এবং তৎপার্শবর্তী দেশের আলেম-উলামাগণ সতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। এ দিকে উসুলে ফেক্বাহ একটি মৌলিক শাস্ত্র। তাফাক্বক্বুহ ফিদ দ্বীন ও রুসুখ ফিল ইলম অর্জনের জন্য এ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। এ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন ব্যতিরেকে দ্বীনের সঠিক বাহক হওয়া অনেক কঠিন। এ শাস্ত্রে পারদর্শিতা ব্যতীত যে বা যারা দ্বীনের সঠিক বাহক হতে চান তাদের সবার গুড়ায় গলদ থেকে যায়। পৃথিবীতে প্রচলিত দ্বীনি সকল শিক্ষাব্যবস্থা বা ধারা এ শাস্ত্রটিকে সেই অনেক পূর্ব থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। (মুকাদ্দামাতুল মুহাক্কাক লি উসুলিশ শাশি, মু. আকরাম নাদাবি-৬) তবে প্রাথমিক পর্যায়ে কোন কিতাব দিয়ে ছাত্রকে এ শাস্ত্রের সাথে পরিচিত করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন ধারার বিভিন্ন মত ও পথ রয়েছে। দারসে নেজামির ছাত্রদেরকে  এ শাস্ত্রের সাথে পরিচিত করতে প্রথমেই তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় উসুলুশ শাশি (কিতাবটি আরবি ভাষায় রচিত।
এবার উসুলশ শাশি কিতাবের রচয়িতা কে? এ নিয়ে রীতিমত শাস্ত্রবিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে অনেক কথা। আরববিশ্বে আবু বকর মুহাম্মদ বিন আলি বিন ইসমাইল আল কুফ্ফালকে উসুলুশ শাশি কিতাবের রচয়িতা মনে করা হয়। আরববিশ্বের ইসলামি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ মুজহির বলেন, উনি বা শাফি মাযহাবের অন্য কেহকে উসুলুশ শাশি কিতাবের রচয়িতা বলা যাবে না। কারণ, কিতাবের মুক্বাদ্দিমায় বলা হযেছে, কিতাবটি হানাফি মাযহাবের উসুলে ফিক্বহের।

রচয়িতা নিয়ে আলোচনা
১. আবু ইযাক্বুব খুরাসানি শাশি মৃ. ৩২৫/২৬। যিনি জামে’ কাবীর যায়দ বিন উসামা থেকে, তিনি জাওযজানি থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি থেকে আব্দুল্লাহ মুস্তাফা আল মুরাগি রাহ. ‘আল-ফাতহুল মুবীন ফি তাবাক্বাতিল উসুলিয়্যিন’ কিতাবের ১/১৭৭ পৃষ্ঠায় লেখেন, উসুশ শাশি কিতাবের রচয়িতা হচ্ছেন, ‘আবু ইয়াক্বুব ইসহাক্ব বিন ইব্রাহীম খুরাসানি আশ-শাশি’ (মৃ. ৩২৫/২৬ হি.)। তিনি উসুলে ফেক্বহ শাস্ত্রে অনেক গভীরতা অর্জন করেন এবং এক সময়ে উসুলুশ শাশি নামে তার এ কিতাবটি রচনা করেন।
আল্লামা যিরিকলি রাহ. ‘আল আলাম’ কিতাবের ১/২৯৩ পৃষ্ঠায় এবং উমর রেজা কাহহাল রাহ. ‘মুজামুল মুআল্লিফিন’ কিতাবের ১/২২৬ পৃষ্ঠায় ‘আবু ইয়াক্বুব ইসহাক্ব বিন ইব্রাহীম খুরাসানি আশ শাশি’ (মৃ. ৩২৫ হি.) এর জীবনী আলোচনা করেছেন এবং এ কিতাবটি তারই বলে উল্লেখ করেছেন।
২. আবু আলি আহমদ বিন ইসহাক্ব নেজাম উদ্দিন শাশি, মৃত্যু ৩৪৪ হিজরি। উমদাতুল হাওয়াশি (বায়রুত থেকে ছাপা ১৪২৪ হি.)
প্রথম পর্যালোচনা: মূলত কিতাবটি হচ্ছে মধ্যযুগের রচনা। তৃতীয় শতাব্দীর উপস্থাপনা ভঙ্গির সাথে যথেষ্ট অমিল রয়েছে। তাছাড়া এ কিতাবে ‘আমর, দালালাতুন নস, বহছে মাওয়ানে’ ও কিয়াস, এর আলোচনায় কাজি আবু যায়দ দাবুসি (মৃ. ৪৩০ হি.) রাহ. এর উদ্ধৃতি রয়েছে। কিয়াসের আলোচনায় ইবনুস সাব্বাগ (মৃ. ৪৭৭ হি) রাহ. এর উদ্ধৃতি রয়েছে। আমরের আলোচনায় ইমাম কারখি রাহ. (মৃ.৩৪০ হি.) রাহ. এর উদ্ধৃতি রয়েছে।  উসুলুশ শাশি কিতাবটি যদি ইসহাক শাশিরই হয়, তাহলে কাজি আবু যায়দ, ইবনুস সাব্বাগ ও ইমাম কারখি রাহ. এর উদ্ধৃতি কীভাবে আসে? যেহেতু আবু ইযাক্বুব খুরাসানি শাশি (৩২৫হি.), কাজি আবু যায়দ দাবুসি (৪৩০ হি.) ইবনুস সাব্বাগ (৪৭৭ হি.), ইমাম কারখি (৩৪০ হি.)  রাহ. সবার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আবু আলি আহমদ বিন ইসহাক্ব নেজাম উদ্দিন শাশি (৩৪৪ হি.), ইমাম কারখি (৩৪০ হি.) এর পরে মৃত্যুবরণ করলেও কাজি আবু যায়দ দাবুসি (৪৩০ হি.) ও ইবনুস সাব্বাগ (৪৭৭ হি.) এর পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন। (feqhweb.com/vb/shotraed?t=15320 তাইসীরুল উসুল-১৭)
দ্বিতীয় পর্যালোচনা: জাওয়াহিরুল মাজিয়্যাহ, ফাওয়াইদুল বাহিয়্যাহ, তাবাক্বাতুস সুন্যিয়্যাহ কিতাবে ‘আবু ইয়াক্বুব ইসহাক্ব বিন ইব্রাহীম খুরাসানি আশ শাশি’ এর জীবনী আলোচনা করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলোতে এ শাস্ত্রে উনার কোনো রচনা আছে বলে উল্লেখ করা হয় নি।
৩. নিজাম উদ্দীন শাশি, সপ্তম শতাব্দিতে চলে যাওয়া হানাফি মাযহাবের এক মুজতাহিদ। শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি দা.বা. বলেন, উনার মৃত্যু-তারিখ৭৫৪ হিজরিতে। (তা’লীমি নেজাম ৭৩ পৃ.) তিনি ‘উসুলুশ শাশি’ কিতাব রচনা করেছেন এবং তখন তার বয়স ৫০ হওয়ায় তার কিতাবের নাম রেখেছেন, ‘খামছীন’ বলে। (মুজামুল উসুলিয়্যিন ১/১৩-১৪, হাদাইক্বুল হানাফিয়্যাহ ২৭০ পৃ., কাশফুয যুনুন, ফাওয়াইদুল বাহিয়্যাহ ২৪৪ পৃ.)

লেখক : কলামিষ্ট, শিক্ষক, জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেট।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...