অনলাইন ডেস্ক :: জোড়া লাগছে ভারতীয় জমিয়ত। শেষ পর্যন্ত ভারতের দুই জমিয়তের নেতারা এক ছাতার নিচে একত্র হতে সম্মত হয়েছেন। বহুজল্পনা কল্পনার পর মাওলানা আরশাদ মাদানী ও মাওলানা কারী উসমানের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতারা একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার সকালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারী মাওলানা মাহমূদ মাদানীর প্রাইভেট সেক্রেটারী মাওলানা মুবাশ্বির এক ওয়াটসআপবার্তায় এ খবর নিশ্চিত করেন।
ভারতের প্রায় দুই কোটি সদস্যের এই সামাজিক সংগঠন ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ. পরিচালিত জমিয়ত বিশ্বব্যাপী এক নেতৃত্বের বিদ্যাবুদ্ধি ও চিন্তার খোরাক পেয়েছিলো। হযরত হোসাইন আহমদ মাদানীর পর বিশ্বের অবিসংবাদিত আধ্যাত্মিক রাহবার ফিদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী রাহ. জমিয়তের নেতৃত্বে এসে জনগণের খুব কাছে নিয়ে এসে ছিলেন জমিয়তকে। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সবকাজেই দেখা গিয়েছে এই জমিয়ত নেতাদের।
কিন্তু হযরত ফেদায়ে মিল্লাত রাহ.’র ইন্তেকালের পর ভারত জমিয়তে ছেদ পড়ে। দুই মেরুতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় জমিয়ত। একপক্ষের চেয়ারম্যান হন মাওলানা কারী উসমান এবং আরেক পক্ষের চেয়ারম্যান হন মাওলানা আরশাদ মাদানী।
ভারতের মুসলমানদের একমাত্র জনমতস্বীকৃত সংগঠনের এ অবস্থায় অনেকেই দুর্ভাবনায় পড়ে যান। সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে দাঁড়াবার মতো স্বীকৃত সংগঠন খুবই কম। ভারতীয় মুসলমানদের জীবন ও ঈমানরক্ষায় জমিয়তের ব্যানারের গুরুত্ব অনেকখানী। আর এ জন্যই সাধারণ মুসলমানের শীর্ষ চিন্তাবিদদের একটা অংশ দুই জমিয়তকে জোড়া লাগানোর জন্য চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেন। এরিমধ্যে জমিয়তের দায়দায়িত্বের দাবীর পক্ষে থানাপুলিশও হয়। শেষে আদালতে গড়ায়। আদালতেরই মুসলিম এক বিচারপতির মাধ্যমেই শেষ পর্যন্ত দুই জমিয়ত একত্রকরণের বিষয়টি ভালোভাবে আলোর মুখ দেখে।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে দারুল উলূম দেওবন্দের জনপ্রিয় উস্তায হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী তনয় মাওলানা আরশাদ মাদানীকে। সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন হযরত ফিদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী রাহ.’র পুত্র মাওলানা মাহমূদ মাদানীকে।
ধারণা করা হচ্ছে, আবার জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ ভারতে মুসলমানদের অধিকার আন্দোলনে আরো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। বিবদমান পরিস্থিতিতে জোড়া লাগায় ভারতীয় মুসলমানরা খুবই খুশি। সাধারণ মুসলমানরা আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী দিনগুলো হবে স্বপ্নময়।
উল্লেখ্য, জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ ভারতের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ইসলামি সংগঠন। ১৯১৯ সালে মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানি, মাওলানা আহমেদ সাইদ দেহলভি, মুফতি কিফায়েতুল্লাহ দেহলভি, মুফতি মুহাম্মদ নাইম লুধিয়ানভি, মাওলানা আহমেদ লাহোরি, মাওলানা বশির আহমেদ ভাট্টা, মাওলানা সৈয়দ গুল বাদশা, মাওলানা হিফজুর রেহমান সিউহারভি ও মাওলানা আবদুল বারি ফিরাঙ্গি মেহলি কর্তৃক এটি গঠিত হয়। জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিলো।
জমিয়ত পুরো ভারতজুড়ে বিস্তৃত। প্রতিষ্ঠানের একটি উর্দু দৈনিক পত্রিকা আল জমিয়ত রয়েছে। জাতীয়তাবাদী দর্শনের পেছনে জমিয়তের ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তাদের মতে ভারতের সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকা ভারতীয় মুসলিমদের কর্তব্য। সূত্র. সময়বার্তা।