শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:৪৮
Home / পরামর্শ / ঢাকা শহরকে নিকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টের দিকে নেয়া কিভাবে সম্ভব?

ঢাকা শহরকে নিকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টের দিকে নেয়া কিভাবে সম্ভব?

খতিব তাজুল ইসলাম:

আজকাল আবালরা যা করছে তা দেখে দাঁত কড়মড় করা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নাই। ক্ষমতার অপব্যবহার যেন মজ্জাগত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরাম আয়েসই হলো মুখ্য। দাম্ভিকতা আর কাড়াকাড়ি মারামারি হানাহানি এবং মসনদ চিরস্থায়ী করার জন্য পুরাটাই অন্ধ হয়ে বসে আছেন অনেকে। কথা না বাড়িয়ে মূল মকসুদের দিকে যাই। একজন যোগ্য দক্ষ বিচক্ষণ শাসকের কিছু পরিকল্পনা তাহলে আমরা শোনি।
ঢাকা যেন এরদোগানের মতো একজন নগর পিতা পেয়েছে। বিদ্যা বুদ্ধি কাজে মনোযোগী আর ধৈর্য্যরে পাহাড় নিয়ে ভাগাড়ের মতো ধসে পড়া এই শহরের অধিপতি হয়ে কি করবেন না করবেন ভেবে চিন্তামগ্ন। অবশেষে ডাকা হলো দেশের সেরা দশজন নগর প্লানারদের। আবাসিক বৈশ্বিক সহ সকল বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তিনি কয়েকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন। গণ সচেতনতা সৃষ্টি। বেনার ফেস্টুন লিফলেট সেমিনার এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন একটি শহরের চিত্র তুলে ধরে গণমাধ্যমকেও কাজে লাগিয়ে তা প্রচার আরম্ভ হলো। সংগে সংগে শহর ও নগরের সকল ওয়ার্ডের মেম্বার ও কাউন্সিলারদের ডেকে এনে কয়েকটি ভাগে শুরু হলো আধুনিক নগর গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যতিক্রম ধর্মি কর্মশালা। আবাসিক জনপদ জনপথ জলপথ ও পরিবেশ এবং জলবায়ূর উপর প্রতিটি ওয়ার্ডে উপকারি সকল তথ্য সম্বলিত পোস্টার বুকলেট ইত্যাদি ছড়িয়ে দেয়া হলো।
নগর পিতার পরিকল্পনা গেল দেশের প্রধান নির্বাহী বা প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। ঢাকাকে জনসংখ্যার বিস্ফোরণের চাপ থেকে বের করে আনা চাই। কেমনে তাহলে?

পরিবহন বা ট্রান্সপোর্ট হলো গোটা দেশের অর্ধেক কাজ। তাই এই কাজের দিকে প্রথমেই মনোনিবেশ করা চাই। ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। কারণ ষোলকোটি মানুষকে সাড়ে তিনশো সাংসদ দিয়ে পরিচালনা করা অযৌক্তিক। তাই দেশের আটটি বিভাগকে আটটি প্রদেশের মর্যাদা দিতে অনুরোধ করা হলো। তখন ঢাকা মুখী জনস্রোতের যাত্রা অর্ধেক কমে আসবে। প্রতিটি প্রদেশ হবে স্বয়ং সম্পুর্ণ। পুলিশ ও প্রশাসন সবকিছু প্রাদেশিক পরিষদ পরিচালনা করবে। এতে করে কোটি মানুষের যেমন কর্মসংস্থান তৈরি হবে তেমনি প্রতিটি প্রাদেশিক পরিষদের মাঝে একটা প্রতিযোগিতা থাকবে যে কে কার থেকে উন্নত প্রদেশ গড়বে। সকল প্রদেশ থেকে কেন্দ্রের জন্য আলাদা ফান্ড যাবে। যে যত উন্নয়ন করবেন বা সুন্দর করে প্রদেশ পরিচালনা করবেন তেমনি নিজেরা সুযোগ সুবিধা পাবেন ভোগ করবেন। কেন্দ্রের হাতে কাউকে লটকিয়ে রাখা হবেনা। এই কাজটা করতে পারলে ঢাকা শহর মুখী মানুষের স্রোত অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী সুন্দর এই পরিকল্পনা দেখে অনুমোদন করলেন। নতুন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের এরদোগানের যাত্রা শুরু।
শুরু হলো ঢাকা শহরকে নিয়ে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা। ঢাকাকে ৪ ভাগ করা হলো। ঢাকা উত্তর। ঢাকা দক্ষীণ। ঢাকা পুর্ব। ঢাকা পশ্চিম। প্রতিটি জোনে থাকলো লোকাল সিটি বাস সার্ভিস। আন্তজোন ট্রাম চালু হলো। ট্রেনের যাতায়াত থাকলো বহির্গমনের জন্য অন্য প্রদেশ গুলোতে যেতে। গোটা ঢাকা শহরের চারিদেকে একটি সড়ক দিয়ে ঘেরাও করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলো। এই সড়কের লিংক দিয়ে যে কোন জোনে প্রবেশ করা যায়। কোন ক্রমেই আন্তদেশীয় বাসকে মেইন সিটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়না। জোনের ভিতর টাউন বাসই কভার করে। ঝুলন্ত বা উড়াল কার সার্ভিসও কাজে লাগানো হলো। বাস্তবায়িত হলো জোন ভিত্তিক নদীপথে যাতায়াতের জন্য ওয়াটার বাস সার্ভিস। বুড়ি গংগা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে ঢাকার চারিদিকে থাকলো লঞ্চ স্টিমারের ব্যবস্থা। আন্তদেশীয় লঞ্চ স্টেশন বসানো হলো প্রতিটি জোনে একটি করে। মেইন বিমান বন্দর ঢাকা শহরের কেন্দ্রথেকে সরিয়ে উপযুক্ত দূরের জাগায় স্থানান্তর করা হলো। ঢাকা শহরে রিকশা আর চলেনা। পেট্রল ও ডিজেল চালিত গাড়ি আগামি বিশ বছরের ভিতর উঠিয়ে নেয়া হবে। চলবে হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক কার ও যানবাহন। সড়কের লেইন গুলোতে পরিবর্তন এনে ডানে যাওয়া ও বামে আশার লেইন করা হয়েছে জার্মানি ও আমেরিকােএবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতকরে। শহর গলি সড়ক সহ প্রতিটি জাগায় গড়েতোলা হয়েছে সবুজের সারি সারি গাছ।
ড্রেনেজ সিস্টেম আধুনিকায়ন করে ময়লা আবর্জনা জোন ভিত্তিক চার জাগায় ফেলে সেখানথেকে প্রক্রিয়াজাত করে গ্যাস ও বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হয়েগেছে। সেখানে বসানো হয়েছে রিসাইকেলিং কারখানা। শহরের ভিতর জনবসতিতে কোন কারখানা বা ইন্ডাস্ট্রি থাকতে দেয়া হয় নাই। যত্রতত্র আগুছালো আবাসিক এলাকার পারমিশন নেই। পানির জন্য থাকছে নতুন রিফাইনার ও রিজার্ভার। বর্তমান ঢাকার অর্ধেক মানুষকে অন্য জাগায় কাজ দিয়ে স্থানান্তর করার পর ঢাকা শহরের চিত্র পাল্টে গেছে। গোটা ঢাকা কে সবুজের সমারোহ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। কলকারখানার ধোয়া কন্ট্রোলে আনার প্লান বাস্তবায়ন হয়েছে। কোন প্রকার বজ্র কেউই খাল বিল নদী নালায় ফেলেনা। যানবাহন আমদানির জন্য টেক্স ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। ফিটনেসহীন গাড়ি রাস্তা থেকে উঠে যায়। স্কুলের শিশুরা ও সাধারণ মানুষ লোকাল টাউন বাস যাতে নিয়মিত ও সময় মত পায় সেজন্য তা ২৪ ঘন্টা চালু রাখা হয়েছে।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। মেয়েদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কর্মসংস্থানে যাতে নারীরা স্বাচ্ছন্ধবোধ করে সেই ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। মসজিদ গুলোকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এনে আলাদা পাবলিক টয়লেট ও ওয়াস রুম না করে প্রতিটি মসজিদ থেকে নারী পুরুষ যাতে সার্ভিস পায় সেই আয়োজন করা হয়েছে। রিকশা বেবিটেক্সি টেম্পু ইত্যাদি ঢাকা থেকে উঠানোর কারণে যে শ্রমিকগণ বেকার হয়েছেন তাদের অন্য কাজে যোগদানের আগপর্যন্ত সাময়িক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকার প্রতিটি জোনে থাকছে পাইকারি মাছের আড়ত। সবজির আড়ত। থাকছে আধুনিক কসাইখানা। কোন প্রকার আবর্জনা নালা অথবা রাস্তায় ফেলা যাবেনা সেই ব্যবস্থা রাখা আছে। বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার সমূহ মাটির নীচে নেয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় সোলার প্যানেলের সুডিয়াম বাতি জ্বালানো আছে। ঢাকার অর্ধেক ইলেকট্রিসিটি সোলার বিদ্যুতের আওতায় আনার কারণে এখন লোডশেডিং আর নেই।
ফিটনেস রোডটেক্স ও লাইসেন্স এবং ইন্সুরেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালায় না। এমপি ও মন্ত্রী পরিষদের কেউ সরকারি কাজ ব্যতীত অন্য কোন প্রাইভেট সংগঠন বা বিজনেসে জড়িত থাকেন না। সর্বোপরি গাড়ি এক্সিডেন্ট বা জরুরি স্বাস্থ্য সেবার জন্য ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ও এম্বুলেন্স বিভাগ খোলা হয়েছে। স্কুল শিশুদের জন্য ফ্রি বাস ভাড়া। সরকারি অফিসারদের জন্য অর্ধেক ভাড়া। বয়স্কদের জন্য ফ্রি ভাড়া। হাসপাতালেও সমান সার্ভিস। আর এই ঢাকাকে মডেল নগরি করে সাজানোর পর দেখা যায় আস্তে আস্তে তখন সবকটি প্রদেশেও তা বাস্তবায়ন হতে চলেছে। তবে আসল কথা হলো সৎ যোগ্য ও চৌকস একদল নিবেদিত মানুষের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে। যারা আইন অমান্য করে তাদের শাস্তির একটা নমুনা হলো যে, চিনের মাওসেতুং একবার বন্যার পানিতে ব্রিজ ভেংগে পড়ার কারণে কন্ট্রাক্টরকে ডাকলেন। সে বললো ইঞ্জিনিয়ারের দোষ। তাকেও ডাকা হলো। সে বললো সাপ্লাইয়ারের মালের দোষ। তাকেও ডাকা হলো। তারপর সকলকে একই লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে ঐদিন যে বিদায় জানিয়ে ছিলেন আজপর্যন্ত কোন ব্রিজ আর ভেংগে পড়েনি। তাই দুর্নীতি যেখানে সেখানে ব্রাশফায়ার শুরু করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মাদকের বিরুদ্ধে যোদ্ধ ঘোষণার মতকরে এক-দুটি ব্রাশ ফায়ারের পর সকল ঠান্ডা হয়ে গেছেন দেখবেন। প্রয়োজনে ক্রিমিণাল দু-এক এমপি মন্ত্রী পুলিশ ও ডিসি এসপিকে এইভাবে লাইন অফ ফায়ারে নিলে এক বছরের ভিতর আমার সোনার বাংলা গড়া যাাবে বলে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি। বিশ্বাস না হলে একবার করে দেখেন নিশ্চিত ফল পাবেন ইনশাআল্লাহ।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...