শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:৫৯
Home / প্রতিদিন / বঙ্গবন্ধুর আকাংখার অনুসরণে হোক জাতীয় সংগীতের বাস্তবায়ন

বঙ্গবন্ধুর আকাংখার অনুসরণে হোক জাতীয় সংগীতের বাস্তবায়ন

ভীনদেশী কবির গান ও আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কিছু কথা।

কওমি মাদরাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না কেন?

প্রশ্নটি মিডিয়ায় বারবার উঠে আসছে। চলুন আমরা একটু ইতিহাসের কাছে ফিরে যায়। ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির রচনার প্রেক্ষাপটটা একটু জেনে নিই। একজন আওয়ামী লীগারের বই থেকেই ইতিহাসটি আমরা তুলে ধরতে চাই। তিনি বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধা-সংগঠক, প্রবীন রাজনীতিবীদ, প্রখ্যাত আইনজীবী এডভোকেট বদিউল আলম। তাঁকে আরেকটু পরিচয় করিয়ে দিই। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক চট্টগ্রাম জেলা সহ-সভাপতি। তাঁকে অনেকেই আওয়ামী লীগের দুর্দিনের বন্ধু হিসেবে চিত্রায়িত করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়েতে ঢাকায় কোন অনুষ্ঠান না হওয়ায় চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাবে নব দম্পতিকে সম্বর্ধনা দেবার জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে যে অর্থ ব্যয় হয় তার আংশিক তিনি বহন করেছিলেন। বেগম শেখ একাকী বড় পুত্রকে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ সাহেব বন্দী থাকায় বেগম সাহেবা অঝোরে কাঁদতে থাকেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তিনি সস্ত্রীক গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের বন্ধু এই মহান মানুষটি তাঁর ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ’ নামক বইয়ে লিখেন, শোষণ ও বঞ্চনার ফলে অনুন্নত পূর্ববঙ্গ ১৯০৫ সালে আসামসহ একটি প্রদেশের রূপ নিয়েছিল, ঢাকায় স্থাপিত হয়েছিল রাজধানী। ঐ মহলের অন্যায় প্রতিবাদের কারণে ১৯১১ সালে বঙ্গ ভঙ্গ রদ হয়। ফলে শোষণ ও বঞ্চনার ধারা পূর্ববৎ বহাল হয়ে যায়। সেই সময়কার পূর্ববঙ্গ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেই বঙ্গ ভঙ্গ রদ আন্দোলন করা হয় এবং মুসলিম সম্প্রদায় সাবেক মতে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নূতন প্রদেশ গঠনে রুষ্ঠ হয়ে কবিতা লিখেন, ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’’। বৃটিশ বড়লাট বঙ্গ ভঙ্গ রদ করে ১৯১১ সালে ঘোষণা দিলে তিনিই সানন্দে কবিতা লিখেন, ‘‘জয় জয় জয় জয় হে ভারত-ভাগ্য বিধাতা…’’ ( পৃষ্ঠা-১৫)
যে ঢাকাকেন্দ্রিক পূর্ববঙ্গের বিরোধিতা করে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির সৃষ্টি, সেটিই পরবর্তীতে সেই পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করা হল। কতটা আত্মমর্যাদাহীন ও নির্লজ্জ হলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে? এ প্রশ্ন পুরো জাতির। কওমি মাদরাসার ছাত্ররা যেহেতু আত্মমর্যাদাশীল ও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ, তাই তারা এই সঙ্গীত গায় না।
কালী ও দুর্গা থেকে মাতৃবাদ এসেছে। হিন্দুদের এই মাতৃবাদই ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতায় ফুটে উঠেছে। আমাদের এ দেশের আকাশ-বাতাস কোন মায়ের সৃষ্টি নয়, আল্লাহর সৃষ্টি। কোন মায়ের সৃষ্টি মনে করা শিরক। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় চেতনার সঙ্গে এই গানটির পরিষ্কার বিরোধ রয়েছে। তাই কওমি মাদরাসার ছাত্ররা এই সঙ্গীত গায় না।
‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে দেখে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘তোরা এ কি করেছিস? আমি চেয়েছিলাম ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ হবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত’। (দৈনিক সংগ্রাম, ১২/০৪/৯৭ইং)
এ সম্পর্কে অধ্যাপিকা সনজীদা খাতুনের মন্তব্যও প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেন, শুনেছি ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ ছিল বঙ্গবন্ধুর একান্ত প্রিয় গান। এ গান শুনতে শুনতে সর্বশরীর কেমন শিহরিত হয়, দেশের জন্য প্রীতির বোধে পূর্ণ হয় সে আমরা জানি। দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর ১০ জানুয়ারী দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু না-কি বলেছিলেন- আহা! ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত (National Anthem) করা গেল না। তার পরে এই গানখানিকে জাতীয় গীতের (National song) মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। উনিশ শ’ পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জাতীয় সঙ্গীতই বুঝি এই বদলায় তো সেই বদলায়। জাতীয় গীতির আর খবর রাখে কে? (দৈনিক জনকণ্ঠ, ৬ই আগস্ট, ১৯৯৬ ইং)
যে বা যারা দেশবিরোধী এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় চেতনাবিরোধী এই সঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীত করেছেন, তারা চরম অন্যায় করেছেন বলে মনে করি। আমাদের দাবী, এই সঙ্গীত বাদ দিয়ে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় চেতনাবিরোধী নয় এমন অনেক সঙ্গীত আছে; সেরকম একটি সঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীত করুন। সংবিধানে সকল নাগরিকের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আর তাই কোনো বিষয় নাগরিকদের ধর্মীয় চেতনার পরিপন্থী হলে তা কোনো সরকার বা সংগঠন জোর করে চাপিয়ে দিতে পারে না।

(সংগ্রহ পোস্ট)

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...