ইমদাদুল হক নোমানী::
ডাক্তার যখন ডাকাত!
(১ম পর্ব)
মানুষ মাত্রই কম বেশী অসুস্থ হয়। একজন রুগী শারীরিক দূর্বলতার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও অস্থির ও ক্লান্ত থাকে। তাই নিজেকে সব চাইতে নিরূপায় ও দুর্বল মনে করে অন্যের সাহায্য সহানুভূতি ও সদয় আচরণ প্রত্যাশা করে। একসময় ছুটে যায় ডাক্তারের পানে। ডাক্তারই পারে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে মানসিক ও শারীরীকভাবে উজ্জিবিত করতে। কখনো কখনো ঔষধের চাইতে মনোবল তৈরীই মৌলিক চিকিৎসা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ডাক্তারী পেশা আজ এতটাই বাণিজ্যিক যে, সেবা শুধুই প্রতিকী ব্যাপার।
আগের যুগে মানুষ ডাক্তার হতো, হতে চাইতো। কারণ এর মাধ্যমে মানুষের সেবা করা যায়, দুঃস্থ-মুমূর্ষ মানুষের পাশে দাঁড়ানো সহজ হয়। এ যুগেও কিছু কিছু অসাধু ছাত্র-ছাত্রী ডাক্তার হতে চায়, মা-বাবারাও সন্তানদের ডাক্তার বানানোর ইচ্ছে করে। এতে ইনকাম ভালো, ফিউচার উজ্জ্বল। সেবার প্রতীক এপ্রোন পরে নির্দয়ভাবে চুটিয়ে বেহিসাবী টাকা সহজেই কামাই করা যায়।
যেহেতু অফুরন্ত টাকা ইনকামই একমাত্র ও মূখ্য লক্ষ্য, তাই ডাক্তার আজ দানবের পেশায় পরিণত হয়েছে। এমন কোনো পথ নেই যে পথে তাদের টাকা নদীর স্রোতের মতো আসে না। রোগী দেখা বলতে যা বোঝায় তাকে গড়ে এক মিনিটের দর্শনই বলা যুক্তিযুক্ত। তাতেই চার্জ ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা। হিসাব সহজ। টাকা খরচ করে ডাক্তার হয়েছে। সুতরাং শায়লকের মতো সুদে-আসলে তার আদায় চাই। রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ সহকারে শোনা, রোগ অনুসন্ধানের চেষ্টা করা, রোগীকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করার জন্য প্রয়োজনীয় আলাপ ও সুপরামর্শ প্রদান এসব অনেক আগেই ডাক্তারদের আচরণ থেকে লোপ পেয়েছে। পক্ষান্তরে যোগ হয়েছে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রেসক্রিপশনে অতিরিক্ত ঔষধ লিখে ক্লিনিক ও ঔষধ কোম্পানির লোকদের খুশি করা।
অপরদিকে ডায়াগনোসিসের জন্য যে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানো হয় সেখানেও ডাক্তার মশাইদের অংশ থাকে। ঔষধ কোম্পানির লোকদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, মোবাইল সেট সহ নামী-দামী ঘুষ উপহার হিসাবে পেতে অপ্রয়োজনীয় ও বেশী-বেশী ঔষধ লেখাও ডাকাত ডাক্তারদের আরেক কামাই’র পথ।
কিছু কিছু ডাক্তারদের আয়ের পথ বড়ই বৈচিত্রময়! রহস্যময়ও বটে! অ্যাসিডিটি জনিত পেট ব্যথাকে এপেনডিসাইটের ব্যথা বলে রোগীকে অপারেশন করানো। সামান্য কিছুতেই আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, এক্সরে, স্ক্যানিং এসব একেবারেই মামুলি বিষয়। সব থেকে মজার ব্যাপার হলো গর্ভবতী কোনো মহিলা, ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া মানেই তার কপালে সিজারিং ডেলিভারী অবধারিত। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক পদ্ধতিটি যেন অঘোষিতভাবে বিলুপ্ত। পক্ষান্তরে ভূল চিকিৎসা, অপ্রয়োজনীয় অপারেশন, অপারেশনের সময় পেটের মধ্যে তুলা, গেজ, কাঁচি ইত্যাদি রেখেই সেলাই করার মতো লোমহর্ষক প্রভূত অভিযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি অবহেলা-অদক্ষতার কারণে রোগীর মৃত্যু, অপারেশনের নামে কিডনি চুরির খবরও পত্রিকা/টিভির মাধ্যমে প্রায়শই শোনা যায়। মামলা-মোকদ্দমার জন্য, বিভিন্ন অফিসের চাকরিজীবীদের ছুটিছাটাতে এবং ফিজিক্যাল ফিটনেসের মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়েও ডাক্তারবাবুরা ভালো আয় করেন। এ অবস্থা চলছে। ক্রমশ বাড়তেই আছে। কিন্তু আর কতকাল…?
হাসপাতাল যখন টার্মিনাল!
(২য় পর্ব)
বিশ্বের সবক’টি হাসপাতালেই মানুষ দু’টি যন্ত্রণায় ভুগছে। একটি অসুস্থতা, আরেকটি টাকার যন্ত্রণা। তারা এমন একটি পর্যায়ে অবস্থান করছে, যেখানে টাকা না হলে স্বাস্থ্য কেনা যায় না। তারা দেখতে পায়, মৃত্যুর আলিঙ্গন। মানুষ দু’ভাবে করুণ যন্ত্রণা পায়। একটি টাকার বিনিময়ে সুস্থতার চেষ্টা, অন্যটি মৃত্যু যন্ত্রণা।
অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যতসব ক্লিনিক বা হাসপাতাল গড়ে উঠেছে ডাক্তারদের যোগসাজসে, সেগুলোতেও চলছে হরিলুটের কারবার। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শ্লোগান এখন হাসপাতালগুলোর কাগজে- কলমে সীমাবদ্ধ। মেঝে ও অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিস্কার নয় বললেই চলে। তাইতো ক্লিনিক-হাসপাতাল সমূহই যতসব ভয়ংকর রোগজীবাণু ছড়ানোর উৎস। আর সরকারী হাসপাতালে ঔষধ পথ্য যা দেওয়া হয় তাও লোপাট হয়ে যায় অদৃশ্য সব ভুতুড়ে পথে। যন্ত্রপাতি ইচ্ছে করেই অকেজো করে ক্লিনিকের সাথে রোগী পাঠানোর গোপন চুক্তি হয় দেদারছে।
বিস্মিত হতে হয় মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের কথা ভাবলে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকদের অধ্যয়ন ও গবেষণা অপরিহার্য। কিন্তু ২৪ ঘন্টা দীর্ঘ দিন-রাত্রিতে ডাক্তার শিক্ষকদের আপাত দৃষ্টিতে আদৌ অধ্যয়ন ও গবেষণার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। বাসা-ক্লিনিক-কর্মস্থল। ত্রি-মুখী দৌড়াদৌড়িতে জীবন এমনিতেই ওষ্ঠাগত। ক্লিনিক থেকে রাত ১১-১২ টায় বাসায় ফিরেন। সার্জন হলে ১২-১ টায়। সকালে ঘুম থেকে জেগেই প্রাতঃভ্রমণ করতে করতে ছুটে যান ক্লিনিকে। কখনো কখনো টুথব্রাস ও সকালের প্রাকৃতিক কর্মটিও সারতে হয় ক্লিনিকে, না হয় অফিসে। চাকরি রক্ষার্থে ক্লিনিক থেকেই দৌড় দিতে হয় আবার অফিসে। সুতরাং ২৪ ঘন্টার দিন-রাত্রি ডাক্তারদের জন্যে যান্ত্রিক। ডাক্তারদের এই অনৈতিক কর্মযজ্ঞ বন্ধে সম্ভবত হু. মু. এরশাদ একটি সুন্দর প্রস্তাব করেছিলেন, যে সমস্ত ডাক্তার সরকারী চাকরি করবেন তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। হয় সরকারী চাকরি না হয় প্রাইভেট প্র্যাকটিস।
হাসপাতালের ন্যায্যমুল্যের ঔষধ ঘরে যখন ডাকাতি করা হয় তখন ভাবি, আসল ডাকাত কারা? কেউ পেটের দ্বায়ে ডাকাতি করে, আর কেউ পেট বাড়াতে ডাকাতি করে। ডাক্তারের মাথায় নাকি আল্লাহর হাত থাকে। এখানে দু’টি সত্বা দেখা যায়, একটি মানুষ; অপরটি জানোয়ার। মানুষ আর জানোয়ারদের আনাগোনা মূলত থাকে টার্মিনালে।
সরকারী হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তারা অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। সুতরাং ওইসব পিছিয়ে পড়া মানুষদের চিকিৎসা দিতে ডাক্তার সাহেবদের আর কতটাই বা মনোযোগী হওয়া চাই। ডাক্তারদের কর্মক্ষমতা গল্পের বিশ্বকর্মার চাইতেও বেশী। তাইতো রোগীর সংখ্যা যতই হোক এক বিকেলেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তাতে রোগী প্রতি সময় এক বা হাফ মিনিট যাই হোক না কেন। আবার দিনরাতে কতজন রোগী দেখেন, কতটা অপারেশন করেন আর কত টাকাই বা কর/ভ্যাট দেন তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জানার কথা না। তাই মান্যবর ডাক্তারদের ওসব আইন খুব একটা মানতে হয় না। অবশ্য যে সমস্ত ডাক্তার আজোও সেবার মানসিকতা নিয়ে চিকিৎসা দেন, নিয়মিত কর/ভ্যাট পরিশোধ করেন তাঁরা ব্যতিক্রম, আলোকিত মনের মানুষ। সেই সংখ্যা একেবারেই নগন্য, দূর্লভও বটে। ওসব দূর্লভ আলোকিত মনের ডাক্তারদের জন্য রইলো অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও শুভ কামনা।
ডাক্তার বাবুর নির্লজ্জ ভিজিট ফি!
(৩য় পর্ব)
সভ্যতার মানদণ্ডে আমাদের যে অসভ্যতারও নীচে বসবাস, তার প্রমাণ মিলে যখন দেখা যায়, কিছু কিছু ডাক্তাররা ভিজিটিং ফি রোগীর কাছ থেকে নিজ হাতে আদায় করেন। উন্নত বিশ্বে কিন্তু কোথাও ডাক্তারদের এমন নির্লজ্জতা দেখা যায় না। কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। ডাক্তারতো বটেই বরং ডাক্তারের অধিনস্থ সিরিয়াল লেখকও রোগীর সাথে দুর্ব্যবহার করে। তাতে মনে হয়, পৃথিবীতে কেবল দুইজন মানুষের প্রভাব অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার চাইতেও বেশী। একজন হলেন ডাক্তার বাবু এবং অন্যজন তার সিরিয়াল লেখক সচিব।
বাংলাদেশ একটি নিম্ন আয়ের দেশ (ইদানীং মধ্যমে উন্নীত হয়েছে বলে প্রকাশ)। অধিকাংশ মানুষ দিন আনে দিন খায়। ধনী লোকের সংখ্যা নগণ্য। রোগ-বালাই যেকোনো মানুষেরই হতে পারে। সেটা ধনী গরীব চায় না। তবে যারা ধনী তারাতো চিকিৎসা করতে কোন সমস্যায় পড়ে না। পক্ষান্তরে যারা গরীব বা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাদের অবস্থা কি? তাদের যদি কোন জটিল রোগ হয় তাহলে তাদের কয়জনের হাতেই বা সঞ্চিত টাকা থাকে, যার দ্বারা চিকিৎসা করতে পারে? এহেন অবস্থায় ডাক্তার মহাশয় যদি ন্যায্য ভিজিট নিতেন, তাহলে হয়তো অনেক গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসা অনেক সহজ হতো।
আমাদের দেশে একজন ডাক্তার একজন রোগীকে সর্বোচ্চ ৫-১০ মিনিট সময় দেন। যদি খুব জটিল রোগী হয়, তাহলে হয়তো আরেকটু বেশী সময় ইনভেস্ট করেন। সাধারণত ডাক্তারের নিকট স্মরণাপন্ন রোগীর শতকরা ৯৫ জনকেই ৫ মিনিট সময় দিতে দেখা যায়। আর ৫ মিনিট সময়ের জন্যই ৫০০/- কিংবা ১০০০/- টাকা ভিজিট নির্ধারিত। যদি ৫০০ করেই ধরা যায়, তাহলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০০০/- হাজার টাকা ইনকাম। একজন ডাক্তার যদি প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা চেম্বার করেন, তাহলে তার একদিনের ইনকাম ৩৬,০০০/- হাজার টাকা। মাসে ১০,৮০,০০০০/- (দশ লক্ষ আশি হাজার টাকা)। আরো কত কিসিমের কমিশন ইনকাম যে আছে, তার খবর আর কে রাখে? অবাক কাণ্ড। (আদতে ডাক্তারদের মাসিক ইনকাম নুন্যতম এখানে ধরা হয়েছে। নতুবা পরিচিত নামী দামী ডাক্তারদের রোজানা ইনকাম লাখের উপরে।)
একজন মানুষ শহরে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে যদি খুব ভালো একটা এপার্টমেন্ট নিয়েও থাকে, তাহলে তার ভাড়া, খাবার ও অন্যান্য খরচসহ ধরে নিলাম প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার প্রয়োজন। তাহলেতো মাসে তাকে ৩ লাখ টাকা ইনকাম করলেই চলে। সুতরাং ডাক্তারদের এতো অধিক ফি আদায় মানুষের উপর যুলুম নয় কি? কেউ কেউ যে ডাক্তারদের কসাই বলে, তাহলে এ শব্দ বা ভাষার ব্যবহারটি সঠিক নয় কি? কোথায় আমাদের বিবেক? কোথায় আমাদের মানবতার কল্যাণে শিক্ষার প্রয়োগ? কোথায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবা?
ডাক্তারদের কমিশন ও টেস্ট বাণিজ্য!
(৪র্থ পর্ব)
কমিশন’ শব্দটি একসময় শ্রুতিকটু থাকলেও এখন কিন্তু শ্রুতিমধুর! কারণ এ শব্দের প্রয়োগ বর্তমানে বহুল, সর্বত্র এবং সর্ব মহলে স্বাভাবিকতা লাভ করেছে। ব্যাপকভাবে কমিশনকে রক্তচোষা ইনকাম পদ্ধতি বলার সুযোগ নাই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে না বলেও উপায় নাই।
.
আশাকরি একমত হতে বাধ্য, রোগ নির্ণয়ে ডাক্তারদের অযথা টেস্ট বাণিজ্যের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেক সাধারণ রোগীরা। ‘টেস্ট যতো টাকা ততো’, এই কমিশন বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই চলছে একশ্রেণির ডাক্তারের অর্থ উপার্জনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড। রোগীর প্রেসক্রিপশনে যত বেশি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার বিষয় উল্লেখ থাকবে, তত বেশি কমিশন পাবেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তার। তাই যাচাই-বাছাই না করেই দেদারছে একগাদা টেস্ট দিয়ে দেন ডাক্তাররা। এতে বিপাকে পড়েন রোগী। বাড়তি অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি তাদের পোহাতে হয় সীমাহীন মানসিক দুর্ভোগ।
.
জানা যায়, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার পান শতকরা ৩০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন। এই কমিশনের লোভেই ডাক্তাররা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে অযথা টেস্টের নাম লিখে দেন। রোগীরা এসব টেস্টের ব্যাপারে জানতে চাইলে উল্টো রোগীদের ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেন ডাক্তাররা।একইভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী ভর্তি, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ প্রেসক্রাইব, অপারেশন নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লাইফ সাপোর্টে পাঠানো, কেবিনে রোগী ধরে রাখাসহ লাশ হিসেবে হস্তান্তর পর্যায়ের নানা ধাপেই কমিশন লেনদেন হয়।
.
অনেক ডাক্তাররা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরবরাহকৃত স্লিপে টিক মার্ক দিয়ে দেন। রোগী নিজের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই টেস্ট করালে ডাক্তার সে রিপোর্ট গ্রহণ করেন না। ডাক্তার তার নির্ধারিত সেন্টার থেকে আবার একই টেস্ট করিয়ে আনতে চাপ দেন; যেই সেন্টার তাকে কমিশন দেয়। কমিশন নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয়।
.
কিছু সংখ্যক ডাক্তাররা এখন সামান্য জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশির জন্যও ডজন ডজন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা লিখে দিচ্ছেন। প্রয়োজন না থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করিয়ে ছাড়েন তারা। সুযোগ থাকলে অপারেশনের মুখোমুখি করিয়ে লাইফ সাপোর্টের পর্যায়ে পৌঁছে দিতেও বুক কাপে না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডাক্তারের জন্য রয়েছে লোভনীয় কমিশন। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে অভিজাত হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেই শতকরা ৪০ ভাগ ‘ভর্তি ফি’ সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের পকেটে যায়।
.
এ কমিশন বাণিজ্যের প্রভাবে চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গরিব মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে আরও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অপারেশন, ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি, অর্থোপেডিক রোগীদের ফিজিওথেরাপি, কিডনি রোগীদের ডায়ালিসিসের ক্ষেত্রেও আলাদা কমিশন নির্ধারণ করা আছে। এমনকি ওষুধ লেখার জন্য আগে থেকেই ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে কমিশনের নামে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা নেন অনেক চিকিৎসক! এ অবস্থা আমরা নামক অসহায়রা চুক বুঝে মেনে নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু আর কতো? চুক খুলে জাগ্রত হবার সময় আর কত দূর?
চলবে: পরবর্তি লেখা, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হালচাল।