সৌদি আরবের বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিদেশি নাগরিকদের গ্রিন কার্ড দেয়ার ঘোষনার পর এ নিয়ে দুনিয়া জুড়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ আগ্রহের। আর সৌদি আরবে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা এই ঘোষনার কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। এপ্রিল মাসের শুরুতেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গে’র কাছে দীর্ঘ এর সাক্ষাৎকার দেন সৌদি আরবের বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান।
দীর্ঘ ৫ ঘন্টার আলোচনায় তিনি তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে সৌদি আরবের সরে আসার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে তিনি বলেন, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা বিদেশীদের স্থায়ীভাবে সৌদি আরবে বসবাসের সুযোগ বা নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে। নাগরিকত্ব সর্ম্পকিত তার এই ঘোষনা শুধু বিদেশে নয় সৌদি গনমাধ্যমেও আলোচিত হচ্ছে। ‘আরব নিউজ’ বা ‘সৌদি গেজেট’ নামের প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো্ও এই পরিকল্পনার ভালো-মন্দ দিক নিয়ে পর্যালোচনা করছে। বিখ্যাত সাংবাদিক খালেদ আল মাইনা আল আরাবিয়ায় লিখেছেন গ্রিনকার্ডের এই ঘোষনা কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ।
সর্বশেষ একটি খবরে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ‘সৌদি গেজেট’ বলছে সৌদি আরবে বিদেশীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ বা গ্রীনকার্ড দেয়া হলে দেশটি থেকে রেমিটেন্স হিসেবে বিদেশে যে অর্থ যায় তার প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাবে। অর্থাৎ এতে সৌদি অর্থনীতির যতখানি ইতিবাচক পরিবর্তন হবে ঠিক ততখানিই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে অন্য দেশগুলোর উপর যাদের কাছে সৌদি আরব একটি বড় শ্রম বাজার। সে হিসেবে ধরলে বাংলাদেশেও সৌদি থেকে আসা রেমিটেন্স এর পরিমাণ কমে যাবে।
সৌদি আরবের ফেডারেশন অফ লেবার কমিটির চেয়ারম্যান নিদাল রিদওয়ান ‘সৌদি গেজেট’কে বলেন, ‘এই গ্রীনকার্ড সৌদি আরবকে অবৈধ ছদ্মবেশী ব্যবসার (তাসাত্তুর) নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচাবে। সাথে সাথে স্পন্সরশীপের (ইকামার ক্ষেত্রে) মতো ব্যাপারও বিলুপ্ত হবে।’
গ্রীনকার্ড বা নাগরিকত্ব দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অন্য দেশের লোকও এসে সৌদি আরবের নাগরিকদের মতোই সুবিধা ভোগ করবে। যেমন, চিকিৎসা এবং ব্যাংকিং সেবা। তিনি উদহারন দিয়ে বলেণ
‘আপনি জানেন যে, আমেরিকায় গ্রীনকার্ডধারীরা কি কি সুবিধা পায়। আমি বিশ্বাস করি, ঠিক একই রকম ঘটনা সৌদি আরবেও ঘটবে যদি এই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়।’
নিদাল রিদওয়ানের কথায় সৌদি গ্রীনকার্ড বা নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। তিনি বলছেন,
‘যারা স্থায়ীভাবে সৌদি আরবে বসবাসের সুযোগ চান, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সর্বনিম্ন একটা বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া উচিত-যার মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদেী এবং দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের নিশ্চয়তা থাকবে।’
বিশ্লেষকরা মনে করেছেন তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে নানা মুখী পরিকল্পনা নিতে হতে পারে। বিদেশিদের সৌদি আরবের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির দিকে তারা নজর দিবে যেনো প্রকৃত অর্থে সৌদি অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলো যেমন নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে মেধার দিকটি গুরুত্ব দিয়ে সৌদি আরবও এর ব্যতিক্রম হবে না। একই সাথে অর্থশালী লোকদেরও বিশেষ সুবিধা দেয়া হতে পারে।
সৌদি আরবের গ্রিনকার্ড কারা পেতে পারেন
সৌজন্যে : অন্যদিগন্ত