বুধবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৪৯
Home / অনুসন্ধান / বিশ্ব ইজতেমায় গেলে কি হজ্বের সওয়াব মিলে?

বিশ্ব ইজতেমায় গেলে কি হজ্বের সওয়াব মিলে?

খতিব তাজুল ইসলাম:

তাবলীগ জামাতের সংকট ও কয়েকটি প্রশ্ন?

তাবলীগ জামাত নিয়ে যে সংকট সেটা নতুন কিছুনা। প্রচলিত নিয়মের তাবলীগ পদ্ধতি যায়েজ না নাযায়েজ সেটা নিয়ে এখনো বিস্তর সমালোচনা আছে। খোদ দারুল উলুম দেওবন্দ সহ বড় বড় দীনী প্রতিষ্ঠান বহু জামানা যাবত তাবলীগ সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। তবে যেহেতু দীনের কাজ হচ্ছে ফায়দা আসছে তাই দেওবন্দে তাবলীগের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি ছিলো। সে মতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কওমি মাদরাসায় তাবলীগের কাজের সুযোগ দেয়াহত। কোন মাদরাসায় কম কোথাও বেশি। তবে কওমি মাদরাসার আলেম উলামাগণই তাবলীগ জামাতকে প্রটেকশন দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে আহলে হাদীস ও ব্রেলভী ঘরানার পক্ষথেকে আরোপিত তাবলীগের বিরুদ্ধে দেয়া ফতোয়া গুলোর জবাব কওমির উলামাগণ দিয়ে আসছিলেন। কারণ তাবলীগ জামাতের উসুল মতে আমর বিল মারুফের কাজ চলবে নাহি আনিল মুনকার করা যাবেনা। নাহি আনিল মুনকার নাকি অটোমেটিক হয়ে যায়। অর্থাৎ ভাল কাজের উপদেশ দিলে মন্দ কাজ এমনিই দূরীভুত হয়। সুর্য উঠলে নাকি অন্ধকার চলে যায়। যদিও কথাটির যুক্তি আছে কিন্তু একমাত্র সমাধান নয়। নাহি আনিল মুনকারের জরুরত না হলে এই আইন আদালত জেহাদ পুলিশ বিচার কিছুরই প্রয়োজন ছিলনা।
তাবলীগ জামাত যখন যাদের জন্য তৈরী করা হয়েছিলো তখন একই প্রয়োজনে কওমি মাদরাসার ও ভিত্তি স্থাপন করা হয়। মুসলমানদের দীনে আবার ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনে। ভারতে ইংরেজ দখলদারিত্বের পর মুসলমানদের সামাজিক অবস্থা ছিল বর্ণনাতীত করুণ। জীবন চালানো যেখানে সংটাপন্ন সেখানে ঈমান রক্ষা করা বা দীন শিখা কতটুকু সহজ হবে সহজেই অনুমেয়।
যুগে যুগে পদ্ধতি ও নিয়মের আবিষ্কার হয়েছে। যখন যা প্রয়োজন তখন তা আবিষ্কার দোষণীয় নয় বরং প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে সিস্টেম বা নিয়মকে ইসলাম মনে করা যাবেনা। ইসলাম পরিপুর্ণ। কোরআন মজীদ মুকাম্মাল। ইবাদাত সুনির্ধারীত। কিন্তু যুগের পরিক্রমায় অনেক নিত্য নতুন সামাজিক চ্যালেঞ্জ আসবে সে সবের মোকাবেলা। যেমন টিভি নেট ভিডিও অডিও ইত্যাদি। ইলমে দীন শিখার নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার মানে এইনা যে দীনের পরিবর্তন। আগে অনলাইন ক্লাস হতনা। দাওতের কাজ চবলতোনা। এখন চলে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন রাজনৈতিক দল গঠন। চ্যারিটির কাজ পরিচালনা এসব আগে সরকার পরিচালনা করতো এখন পাবলিগ করে। দাওত ও তাবলীগ এমন একটি কাজ যা আগেও ছিল এখনো আছে। খানকাহ দারস সহ বিভিন্ন পদ্ধতি। হজরত ইলিয়াস রাহ‘র হাতে পরিচালিত প্রচলিত তাবলীগ পদ্ধতিও নতুন সংযোজন। দাওত ও তাবলীগের এই সিস্টেম ও পদ্ধতি কি ইসলাম না ইসলাম শিখার সামাজিক বৈধ মাধ্যম সেটায় আমার মনে হয় তালগুল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে।
আমরা যখন তাবলীগে যোগদান করি তখন সেভাবেই বলা হতো যে এই ছয়টি উসুলের উপর কাজ করে গেলে দীনের পথে চলা সহজ হবে। আর এখন বলা হয় এই ছয়টির বাহিরে কোন দীন নেই। ছয় উসুলই দীনে মুকাম্মাল। আজকে যারা এতায়াতী ও ওজাহাতী বলে বিবাদে আছেন তাদের সেই সংকটের চেয়ে বড় সংকট হলো দীনের বিকৃতি। আমি হলফ করে বলতে পারি তাবলীগের ভিতর বর্তমান চলমান কশমকশ মসনদের খাহিশ থেকেই তৈরি। দীনকে বিকৃতি থেকে উদ্ধারের কথা ওজুহাত মাত্র। মসনদের কাড়াকাড়িই তাদের এখন মূল সংকট। কিন্তু আসল সংকটে কেউ নজর দিচ্ছেন না। তাদের উভয় পক্ষই কিন্তু ইলিয়াসি তাবলীগের বিকৃত রূপের ধারক ও বাহক। স্বার্থের দ্বন্ধকে আকীদার দ্বন্ধে নিয়ে আসা হয়েছে। কারণ সা‘দ কান্দলভীর এইসব বয়ানাত অনেক আগ থেকেই চলছে। তারা হজম করে নিচ্ছেন। কারণ মসনদ ঠিকাছে। যখনই তিনি নিজে নিজে আমির হলেন তখনই সমস্যার শুরু। কারণ তাবলীগীদের জন্য সা‘দ সাহেবের ভ্রান্ত মতবাদ বা আকীদাগুলো কোন সমস্যা ছিলনা যদিনা তিনি আমিরত্বের দাবী করতেন। বিশ্ব আমিরের পদ দখলের পরই তার সমালোচনা শুরু। আর দখলদারিত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কৃত একশ্যান থেকে উদ্ভুত পরিস্থিতির বর্তমান রূপ হলো সা‘দ নামা। নতুবা আমি বলবো তাবলীগ জামাত কিন্তু বহু আগেই গোমরাহির দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। সা‘দ সাহেবের ভ্রান্ত আকীদা গুলো কেন তাদের আগে নাড়া দেয়নি? নাড়া এজন্য দেয়নি যে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের আসনে কেউ বিজ্ঞ আলেম নেই। সকল স্যাকুলার জেনারেলগণ আমিরত্ব দখল করে তাবলীগ পরিচালনা করছিলেন। দেখা যায় ধাপে ধাপে তাবলীগ থেকে বড় বড় উলামাদের প্রস্তান। উলামাহীন তাবলীগে আস্তে আস্তে সমাবেশ ঘটেছে জেনারেল শিক্ষীতদের নিরাপদ সাম্রাজ্য। এখানে তাবলীগ জামাতকে পুরোপুরি স্যাকুলারে রূপান্তরীত করার একটা প্রক্রিয়া কিন্তু এভাবেই হয়েছে। উলামাদের অনুপস্থিতি যেমন দায়ী তেমনি দায়ী তাবলীগের ছয় উসুল ও নিয়মকে পুর্ণ দীন হিসাবে চিত্রিত করা।
লোকটা সারা জীবন সুদ ঘুষে কাটালো। এমনকি চলমান সুদ ঘুষে ডুবে থেকে নিজের জন্য আখেরাতের একটা বন্দোবস্ত হিসাবে তাবলীগকে বেছে নেয়। তাবলীগে নাহি আনিল মুনকার নেই। তাই সেই সুযোগ তারা কাজে লাগায়। ক্রামান্বয়ে অপরাধের সাথে সম্পর্ক রেখে একসাথে দুটো তারা চালিয়ে যায়। অনেকে পাপ কাজ ছাড়লেও সুরত সীরত পাল্টালেও চিন্তা ও মননে সে স্যাকুলার থেকে যায়। ভাবে দীন হলো নামাজ রোজা আর হজ্বের নাম। তাবলীগে চিল্লা দিলেই হিজরতের সওয়াব। জিহাদ মানেই তাবলীগ। জিহাদের সকল আয়াতকে তাবলীগে এনে ফিট করা হয়। এভাবে ইসলামের গুরুত্বপুর্ণ একটি সত্মার মৃত্যু তারা নিশ্চিত করেন। ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার চিন্তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়। স্যাকুলার ও কুফরি সমাজ ব্যবস্থাপর সাথে আপোষ করে চলার নামই মুকাম্মাল দীন বলে তাবলীগ শিখায়।
তাই আমার মতে উপমহাদেশে তাবলীগ জামাত একপ্রকার হাইব্রিড জাতের মুসলমান তারা উপহার দিচ্ছে। আজকে যখন তাবলীগ নিয়ে তাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ আর তা মাঠে ময়দানে যখন ছড়িয়ে পড়লো তখন আলেম উলামারা যোগ দিলেন সমাধানে। হলো হিতে বিপরীত। মুল ধারার তাবলীগ বলে যারা প্রচার করছে তারা যে ভাষায় আলেম উলামাদের গালি দিচেছ তাতে তাদের অধঃপতনের আন্দাজ হয়ে যায়। মিথ্যা প্রোফাগান্ডাই তাদের মিশন। সা‘দ সাহেবকে তারা যেভাবে মাান্য করে আমার মনে হয় উনি সামনে নবুওতি দাবী করলে তাতেও তারা তা বিনা বাক্যে মেনে নিবে। একজন মানুষের উপর এত অভিযোগ থাকার পরও সামান্যতম লজ্জা থাকলে তারা এমন নগ্ন সমর্থন করতোনা।
সা‘দকে বিশ্ব আমির না মানলে কি তাবলীগ চলবেনা? দীনের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে? বস্তুত তাবলীগ যে কি পরিমাণ নষ্ট হয়েছে আর গোমরাহির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে তার সামান্য আন্দাজ এখানে পাবেন। আমি বিগত ৩০ বছর যাবত বিশ্ব ইজতেমায় যাইনা। কেন যাইনা? জরুরত মনে করিনা। চলো চলো ইজতেমায় চলো! গিয়ে সেখানে কি করবো? তওয়াপ? জমজম? কাবার জিয়ারত? নবীর রওজার জিয়ারত? হজ্ব ও ওমরার সওয়াব? কিছুইনা। আমি বলতাম যে যার প্রয়োজন তারা যাবে। যাদের নামাজ রোজা ঠিক নেই তারা যাক। চলো চলো ইজতেমা চলো বলে বাস রিজার্ভ করে টাকা খরচ করে গিয়ে সেখানে কি মিলে? লাখো মানুষের সমাগমে দুষিত শ্বাস প্রশ্বাস। দুষিত বাতাস। পেশাব টয়লেটের দুর্ঘন্ধ। কাশি ও জ্বরের প্রকোপ। ওজু ইস্তেনজায় ব্যাঘাত। প্রতিনিয়ত মানুষের পায়ের নীচে পীষ্ট হওয়ার আশংকা। এতসব ঝক্কি ঝামেলা কেন? আখেরি মোনাজাত? ওটা আবার কি? হজ্বের আরাফাতে মসজিদে নামিরার খুতবাহ আর দোয়ার কপির মতো এখানেও এই আবেগ দেখানো হয়। আমি মোটেই এই অনর্থক হাংগামার পক্ষে কাল যেমন নাই আজও নাই। পরিস্থিতি এমন দেখানো হতো যে দেশের প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দল সবাই এসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতো। মানে নামাজ রোজা দীনের অনুশাসন কিছুই লাগেনা শুধু আখেরি মুনাজাত করলেই সার। আজ কি টের পেলেন গো আলেম ভায়েরা?
এতায়াতীদের মাঝে খুনের নেশা কেন? গালির ভাষা কেন? তহমতের জজবা কেন? মারমুখি কেন? সা‘দকে রক্ষার জন্য হেন কাজ নেই যা করতে তারা বদ্ধপরিকর কেন? যেহেতেু তাবলীগের ভিতর এখন এখলাস নেই, মসনদের খাহেস, দীনের বিকৃতি, অপরাধ এবং ইবাদাত তথা দাওতের কাজ একসাথে চলার মানসিকতা, তাবলীগের সিস্টেমকে পুর্ণ দীন ভাবা। এইসব কারণেই আজ তাবলীগ হয়েছে আমাদের গলার ফাঁস। তাবলীগের ভিতর আরো অনেক ফাসাদাত ও খবাসতি আছে যা এখানে বলছিনা। কারণ সকল মহলেই বা প্লাটফর্মে বদকারি কিছু না কিছু তো আছেই। কিন্তু তাবলীগের নামে যে এক হাইব্রিড প্রজন্ম আমরা উপহার পেয়েছি এদের উৎপাত বলেন আর বদ আখলাকি বলেন তা থেকে রেহাই পেতে আরো শত বছরে সম্ভব কিনা তাতে আমি সন্দিহান।

২৬ জানুয়ারি লন্ডন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...