কমাশিসা : আগামী ৯ মার্চ রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান। দুই দিনের এ সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ দেশটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম আরটি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ তুর্কি প্রেসিডেন্টের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সফরে তুর্কি-রাশিয়া হাই লেভেল কোঅপারেশন কাউন্সিলের বৈঠকে অংশ নেবেন এরদোগান।
এর আগে পুতিন-এরদোগানের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। এ সময় সিরিয়া ইস্যু এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার মতো বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। সিরিয়া প্রশ্নে তুরস্ক ও রাশিয়ার অবস্থান পরস্পরবিরোধী। ইতোপূর্বে আঙ্কারার পক্ষ থেকে প্রায়ই মস্কোর বিরুদ্ধে আসাদ সরকারকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তোলা হতো। একপর্যায়ে রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় দুদেশের সম্পর্কে ফাটল দেখা হয়। পরে ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে নিহত বিমানচালকের পরিবারের কাছে ক্ষমা চান এরদোগান। মূলত এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোগান রাশিয়ার দিকে আরও ঝুঁকে পড়েন। এরদোগান মনে করেন ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পেছনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর হাত রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুর্কি নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অভ্যুত্থান চেষ্টায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। ফলে এরদোগান বুঝতে পেরেছেন সিআইএ ও ন্যাটো তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ফলে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে মৈত্রী পুনরুদ্ধারে আগ্রহী। গত আগস্টে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এরদোগান বলেন, তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে আমাদের পশ্চিমা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন ছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারা চেয়েছিল এই অভ্যুত্থান সফল হোক। কিন্তু তুর্কি জনগণ সেটা হতে দেয়নি।
তিনি বলেন, পশ্চিমারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেছে। তারা অভ্যুত্থানের পক্ষ নিয়েছে। ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর কোনও বিদেশি নেতা তুরস্ক সফর করেননি। অথচ ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে হামলার পর সংহতি জানাতে বিশ্বনেতারা সেখানে হাজির হয়েছিলেন। যাদের আমরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করতাম তারাই অভ্যুত্থানপন্থী সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়েছে। সন্ত্রাসীদের খোঁজে জার্মানিকে আমরা চার হাজারের অধিক ফাইল পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। যারা তুরস্কের গণতন্ত্র থেকেও বেশি চিন্তিত অভ্যুত্থানকারীদের ভাগ্য সম্পর্কে, তারা তুরস্কের প্রকৃত বন্ধু নয়। তবে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ফোন করে সহমর্মিতা জানানোর জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানান এরদোগান। আল-জাজিরা, আরটি।