বৃহস্পতিবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ২:১৯
Home / কবিতা-গল্প / বড় ভাইয়ের জুতো

বড় ভাইয়ের জুতো

juta2মনযূরুল হক : বড় ভাইয়ার নাম বেলাল হলেও আম্মু আব্বু তাকে ডাকতেন মনি মিয়াঁ বলে। অবশ্যি তার বন্ধুরা তাকে বেলাল বলেই জানতো।

কী হয়েছে কে জানে! ভাইয়া এ বছর দশম শ্রেণিতে পড়ছেন। অথচ গত তিনমাস যাবত এমন একটা কাজ করছেন তিনি, যা বাসার কেউই মেনে নিতে পারছেন না। একজন দশম শ্রেণির ছাত্রর কাছ থেকে এমন আচরণ কেউ প্রত্যাশা করে না। যদিও সেটাই ঘটে চলছে।

ভাইয়া প্রতি মাসে স্কুল থেকে তার একজোড়া জুতো হারিয়ে আসছেন। স্কুলে যাওয়ার সময় জুতো পায়ে পরে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় দেখা যায় তার পায়ে সেই জুতো নেই। খালি পায়ে মন খারাপ করে রাস্তার পাশ দিয়ে একা একা হেঁটে আসছেন।

তৃতীয় বার যখন তিনি জুতো ছাড়া স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলেন, আম্মুকে সীমাহীন দুশ্চিন্তায় পেয়ে বসলো। তিনি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন- এটা কী করে হলো, মনি মিয়াঁ? আবার তুমি জুতো হারালে কিভাবে?

ভাইয়া যে ঘটনা বর্ণনা করলেন, আম্মুকে তা বহু কষ্টে হজম করতে হলো।

রাতে সবাই আব্বুর সামনে উপস্থিত হলো।

-হ্যাঁ, মনি মিয়া! বলো, আজ জুতো কোথায় গেলো তোমার? আব্বু জানতে চাইলেন।

-আব্বু, আমি আম্মুকে বলেছি তো..। ভাইয়া কাদোঁ কাদোঁ স্বরে উত্তর দিলেন।

-কিন্তু কেবল এই একই কথা মেনে নেয়া শক্ত। কী করে এটা হতে পারে যে, স্কুল থেকে ফিরে তুমি মসজিদে নামাম পড়তে গেলে। এরপর নামাজ শেষে যখন চলে আসবে তখন জুতো জোড়া তুমি যেখানে রেখেছো সেখানে আর পেলে না? প্রতিবার জুতো হারানোর একই গল্প তুমি বলে আসছো। যে মসজিদে তোমার জুতো হারায় বলেছো, সে মসজিদে আমিও বেশিরভাগ সময় নামাজ পড়ি। কই আমার তো কখনো জুতো হারায় নি সেখান থেকে। অন্য কারো জুতো হারিয়ে গেছে তা-ও শুনি নি। আসল কথা বলো মনি মিয়াঁ। প্রতিবার একই বাহানা তো চলতে পারে না।

-জ্বি আব্বু..আব্বু..। ভাইয়া থতমত খেয়ে তোতলাতে লাগলেন।

আব্বু আর কিছু বললেন না। আমরা সবাই যার যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

পরদিন। আব্বু ভাইয়ার স্কুলে গেলেন। স্কুলের হেডমাস্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে সব ঘটনা খুলে বললেন তিনি। প্রিন্সিপাল সাহেব দশম শ্রেণির দায়িত্বশীল শিক্ষক সুলতান সাহেবকে ডেকে পাঠালেন। তাকে ছাত্রের অবস্থা জানিয়ে সচেতন করে দিলেন। সুলতান সাহেব এ ব্যাপরে বাবাকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন।

আব্বু নিশ্চিন্ত হয়ে অফিসে চলে গেলেন।

সুলতান স্যার পুনরায় নিজের ক্লাসে গেলেন। তিনি ভাইয়াকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে শান্তভাবে জুতো হারানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। ভাইয়া প্রথমে সেই কথা বললেন, যা সব সময় বাসায় বলে থাকেন। কিন্তু স্যারের প্রশ্নের মুখে উত্তর দিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেললেন।

এর পরদিন কোনো এক কারণে তিনজন ছাত্রের প্রতি স্যারের সন্দেহ হলো। তাই সেই তিনজনকে ডাকলেন তিনি। স্কুলে কিছুদিন আগে ইউনিফর্মের সঙ্গে মিলিয়ে সব ছাত্রকে নতুন এক ধরনের জুতো পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বারবার ঘোষণা দেয়ার পরও এই তিন ছাত্র নির্ধারিত জুতো পরে আসছিলো না। তাই স্যার সেদিন এদের শাস্তি দিয়েছিলেন। এই তিন ছাত্র তখন বলছিলো, তারা বাবাকে বলেছে, কিন্তু তাদের নতুন জুতো কিনে দেন নি। স্যার পরে জানতে পেরেছেন, তাদের বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়।

পর পর অনেক দিন ধরে ওরা নষ্ট-ফাটা জুতো পরে স্কুলে আসছে। তাই স্কুলের নিয়ম রক্ষায় এবং পরিচ্ছন্নতার প্রতি ছাত্রদের মনোযোগী করার জন্যে তিনি ওদের শাস্তি দেয়াটা ভালো মনে করেছেন। কিন্তু আজ তাদের জুতোগুলি দেখে মনে হচ্ছে নতুন নতুন। স্যারের সন্দেহ হলো, এই জুতো কি ওদের বাবাই কিনে দিয়েছেন, নাকি অন্যকিছু ঘটেছে!

তিনি এদের তিনজনকে প্রিন্সিপাল স্যরের কক্ষে ডেকে নিলেন এবং তাদের নতুন জুতো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এরা সবাই সব সত্য সত্য বলে দিলো। স্যার আব্বুকে ফোনে আসল ঘটনা জানিয়ে দিলেন। আব্বু শুনে খুব খুশি হলেন।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে আব্বু তার ঘরে ভাইয়াকে হাজির হতে বললেন। আব্বুর ঘরে শুধু ভাইয়াকেই ডাকা হয়েছিলো। তিনি সালাম দিয়ে আব্বুর ঘরে প্রবেশ করলেন। আব্বু তাকে ইশারায় বসতে বললেন। তারপর বললেন- মনি মিয়াঁ, তোমার জুতা হারানোর খবর এবং আসল ঘটনা এবার আমি জানতে পেরেছি। এতটুকু বলে আব্বু একটু নি:শ্বাসের বিরতি নিলেন।

-জ্বি, আব্বু..ওটা..। ভাইয়া কিছু বলার জন্য কোনোরকম মুখ খুলছিলেন। কিন্তু আব্বু তাকে থামিয়ে দিলেন।

আব্বু নিজেই বললেন- আমি জানতে পেরেছি যে, প্রথমবার জুতো হারানোর বাহানা করে তুমি তোমার সহপাঠী আব্দুল আজিজকে সাহায্য করেছো। কেননা, স্যারের বলার পরও নতুন জুতা কেনার মতো শক্তি তার ছিলো না। দ্বিতীয়বার একই কা- করেছো তুমি মুদাসসিরের জন্যে। আর এবার এটা করেছো তুমি তোমার আরেক বন্ধু শাহেদের জন্য। তাই না!

-জি¦..। ভাইয়া মাথা নিচু করে বললেন।

আব্বু একটু থেমে আবার বলেন- বেলাল, আমার ভালো লেগেছে যে তুমি তোমার বন্ধুদের এবং ক্লাসের সহপাঠীদের প্রতিও এতটা লক্ষ রাখো..কিন্তু একটা ভুল হয়ে গেছে তোমার।

-কী বাবা? ভাইয়া জানতে চাইলেন।

-তুমি এই সব করতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছো। কি বলো, তার চেয়ে এটা ভালো হতো না যদি তুমি আমকে ও তোমার আম্মুকে এ জন্য বিশ্বাস করে সব খুলে বলতে? আমরা কি তোমাকে বাধা দিতাম? মনি মিয়াঁ! তুমি হয়তো তোমার পাঠ্যবইতে এটা পড়ে থাকবে যে, আমাদের ধর্ম ইসলাম আমাদের কাছে এটাই কামনা করে, যে সব জিনিস আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত, তা যেনো আমরা অন্যের হক মনে করি। আল্লাহর শোকর, তিনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিয়েছেন আমাদের। তাই যারা অভাবি তাদের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি আমাদের জন্যে। কি, রাখবে তো?

-জ্বি আব্বু, আমি অবশ্যই খেয়াল রাখবো। এ কথা বলতে গিয়ে ভাইয়ার মনে হলো যেনো কয়েক মণ ওজনের একটা বোঝা তার মাথা থেকে নেমে গেছে। তিনি আব্বুর অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে এলেন।

অন্য ঘরে আমরা সবাই অস্থির হয়ে বসে অপেক্ষা করছিলাম। আামি এবং আম্মু ভয় পাচ্ছিলাম, না জানি জুতো হারানোর দায়ে ভাইয়াকে মারপিট করেন আব্বু। ভাইয়ার চেহারায় প্রশান্তির ভাব দেখে আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এলো। আরো খুশি লাগলো যখন ভাইয়া জুতো হারানো থেকে শুরু করে সব ঘটনা আমাদের বলে শোনালেন।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

৪৩ টি পতিতালয়ের মালিকের লেখা কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত?

ফেসবুকীয় মতামত-:: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী রবী ঠাকুরের কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত? জাতি তা জানতে চায়…… ...