বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১২:২৬
Home / অনুসন্ধান / ৪৩ টি পতিতালয়ের মালিকের লেখা কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত?

৪৩ টি পতিতালয়ের মালিকের লেখা কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত?

ফেসবুকীয় মতামত-::

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী রবী ঠাকুরের কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত?

জাতি তা জানতে চায়……

বাংলাদেশের জাতীয় কবি.. কাজী নজরুল ইসলামের মতো একজন জগতশ্রেষ্ঠ কবি থাকতে…. তার লেখা কোন গান বা কবিতাকে কেন জাতিয় সংগীত করা হলোনা…. জাতি তা জানতে চায়……….???

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচনাকাল ১৯০৫ সাল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করার ফলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কলকাতাভিত্তিক হিন্দু জমিদার শ্রেণী। কারণ দুই বাংলা ভাগ হলে পশ্চিমবঙ্গে থেকে পূর্ব বঙ্গের (বাংলাদেশ) সম্পদ তারা আর শোষণ করতে পারবে না। তখন বঙ্গভঙ্গ রদ বা ফের দুই বাংলা এক করার জন্য আন্দোলনে নামে রবীন্দ্রনাথের মত কলকাতাভিত্তিক হিন্দু জমিদাররা। সেই আন্দোলনকে বেগবান করতে অনেক কবিতা লেখে রবীন্দ্রনাথ, তার মধ্যে একটি কবিতা হলো, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বা ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”। হিন্দু জমিদার শ্রেণীর ব্যাপক আন্দোলন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়, তথা দুই বাংলা আবার এক হয়ে যায়।

১৯৪৭ সালে কিন্তু উল্টো ঘটনা ঘটে। মানে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা করে যে হিন্দু শ্রেণী, সেই হিন্দু শ্রেণী ১৯৪৭ এ দুই বাংলা ভাগ করতে উদ্দত হয়। কারণ তারা চিন্তা করে, পশ্চিমবঙ্গ যদি পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত হয়, তখন বাংলায় (পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গ) হিন্দুরা মুসলমানদের তুলনায় সংখ্যালঘু হয়ে দাড়াবে। আর সংখ্যালঘু হলে মুসলিমরা হিন্দুদের উপর কর্তৃত্ব করবে, এটা তারা কিছুতেই সহ্য করবে না। তাই এতদিন যে ‘বাংলা জাতীয়তাবাদের ধোয়া তুলছিলো হিন্দুরা, মাত্র কয়েকদশকের ব্যবধানে তারা বাংলা জাতীয়তা ফেলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ গ্রহণ করে এবং ভারতে যোগ দেয়। (জয়া চ্যাটার্জির লেখা “বাঙলা ভাগ হল : হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও দেশ-বিভাগ” বইটি পড়তে পারেন)

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন করার সময় ভারতের সহযোগীতা ছিলো এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু সহযোগীতা আড়ালে কি উদ্দেশ্য ছিলো সেটাও চিন্তা করার দরকার আছে। এই তো কয়েকদিন আগে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সংসদ সদস্য হোজাই শিলাদত্য দেব বলেছে, “স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ভারতের উচিত ছিলো বাংলাদেশ দখল করে নেয়া, এটা না করা ইন্দিরা গান্ধীর ভুল ছিলো।”  (https://bit.ly/2IZDa7k)

তবে সে সময় ইন্দিরা গান্ধী আদৌ ভুল করেছিলো নাকি চেষ্টা করেও সফল হয়নি সেটা চিন্তা করার দরকার আছে। কারণ সে সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশে স্থায়ী করার একটা টার্গেট ইন্দিরা গান্ধীর ছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ভারতে গিয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন- “আপনার সেনারা আমার দেশ থেকে কবে যাবে?” বঙ্গবন্ধুর শক্ত অবস্থানে সে সময় ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সে সময় হয়ত ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দেশ্য ছিলো সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশ দখলে নেয়া, কিন্তু বাংলাদেশীদের সাহস ও দৃঢ়তার সাথে সে সময় পেরে উঠাটা হয়ত ইন্দিরা গান্ধীর কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি।

ভারত যে অন্য দেশের স্বাধীনতা হরণ করে না, এটা কিন্তু ইতিহাস বলে না। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর ভারতের মাঝে স্বাধীন ভূমি ছিলো হায়দ্রাবাদ। ইন্ধিরা গান্ধির বাবা জহরলাল নেহেরু ১৯৪৮ এ হায়দ্রাবাদ দখল করে নেয়। সে সময় হত্যা করা হয় ১০ লক্ষ হায়দ্রাবাদবাসীকে। সারা জীবন সেক্যুলার রাজনীতি করা নেহেরু সেই দিন অকপটে বলেছিলো, “একটা হিন্দু রাষ্ট্রের মধ্যে একটা স্বাধীন মুসলিম ভূমি থাকবে সেটা সে মেনে নিতে পারে না।” কাশ্মীরও স্বাধীন হতে পারতো, কিন্তু সেটাও সুযোগ বুঝে দখল করে এখন অন্যায় করে যাচ্ছে ভারত। বাদ যায়নি সিকিমও। বিশ্বাসঘাতককে কাজে লাগিয়ে নিজের সীমানার মধ্যে পুরে নিয়েছে সিকিমকেও। তাই কেউ যদি বলে, “বাংলাদেশকে এমনি এমনি ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহায্য করেছিলো” এটা চিন্তা করা বোকামি হবে। বরং পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের পকেটে পুরতেই বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলো ভারত, যেই কথাটি এতদিনে মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে বিজেপির সংসদ সদস্য হোজাই শিলাদত্যের মুখ দিয়ে।

১৯৭১-এ বাংলাদেশকে দখলে নিতে না পেরে ভারত অবতীর্ণ হয় সফট ভূমিকায়। নেয় দীর্ঘ মেয়াদি প্ল্যান। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সম্পদ, ভৌগলিকসহ নানাভাবে বাংলাদেশকে সেই করায়ত্বের প্রচেষ্টা ভারতের এখনও অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশকে ফের পকেটে পুরার জন্য যতগুলো থিউরী আছে তার মধ্যে একটি হলো বাঙালী জাতীয়তাদের থিউরী। ১৯০৫ সালে যে জাতীয়বাদের থিউরী হিন্দুরা পূজি করেছিলো, সেটাই ছুড়ে ফেলেছিলো ১৯৪৭-এ। ১৯৭১ এর পর থেকে আবার সেই জাতীয়তাবাদের থিউরী আওড়ানো শুরু হলো- “দুই বাংলা এক করে দাও”। (বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাঙালী জাতীয়তাবাদের থিউরী আওড়ানো হলেও আসামে শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে বাংলাভাষী আসামবাসীদের বাংলাদেশী ট্যাগ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের ক্ষেত্রে বাঙালী জাতীয়তাবাদ কাজ করে না, হিন্দু জাতীয়বাদ আগে কাজ করে।)

বর্তমানে দুই বাংলা (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) ফের এক হওয়ার বিষয়টি যে শুধু হিন্দুরাই চায় তা নয়। সম্ভবত সম্রাজ্যবাদী ইহুদীরাও চায় বাংলাদেশ ভারতের ভেতর অন্তর্ভূক্ত হোক। কিছুদিন আগে মার্কিন ইহুদী রিচার্ড বেনকিন সে ধরনেরই একটি ইঙ্গিত দিয়ে একটা পোস্ট করে-
‘বেনকিনের স্বপ্ন দুই বাংলা এক হওয়া’-
লেখার সারমর্ম-
ক) বাংলাদেশের জনগণের ইসলাম ও মুসলমানিত্ব ধ্বংস করতে হবে।
খ) দুই বাংলা এক করে হিন্দুদের সংখ্যাগুরু করতে হবে।
গ) দুই বাংলা এক করে একটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল করতে হবে যা ভারতের অধীনে থাকবে।
সূত্র: http://bit.ly/2G5D2Ve

এটা বলতে দ্বিধা নেই “দুই বাংলা ফের এক হওয়া”র জন্য ভারতের মূল অস্ত্র হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ রবীন্দ্রনাথ ভারতের জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও প্রজাদের ট্যাক্স তুলতে বাংলাদেশে যাতায়াত করতো। আর তাই বাংলাদেশীরাও তাকে কবি মানে। আর সেই সুযোগে রবীন্দ্রনাথকে পূজি করে সংস্কৃতির অজুহাত দিয়ে দুই বাংলাকে ফের এক করার স্বপ্ন দেখে ভারত। এ কারণে রবীন্দ্রনাথের ইস্যু আসলেই ভারত অ্যালার্ট হয়ে যায়, আর আওয়ামী সরকার ভারত সরকারকে খুশি রাখতে রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে কোন কম্প্রোমাইজ করতে চায় না।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ভারতের চাপে বেশকিছু বিষয় ঢুকেছিলো, যেগুলোর সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোন সম্পর্ক ছিলো না। এর মধ্যে দুইটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো – মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবেশ এবং জাতীয় সংগীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা প্রবেশ করানো (‘আমার সোনার বাংলা’ গানের প্রথম ১০ লাইন নেয়া হয়। কিন্তু বাকি লাইনগুলো বাদ দেয়া হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা ও দেবীর বিষয়টির থাকার কারণে)।

আমি প্রথমেই বলেছি, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে তাৎক্ষণিক দখল করতে ব্যর্থ হয়ে ভারত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়। এই দীর্ঘ মেয়াদী প্ল্যানের অংশ ছিলো সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি অন্তর্ভূক্ত করা। কারণ এদুটো বিষয় বাংলাদেশের মূলকেন্দ্রে থাকা মানে বাংলাদেশের আত্মার মধ্যে স্লো-পয়জন ঢুকিয়ে দেয়া, যা এক সময় কুড়ে কুড়ে পুরো দেশকে খেয়ে নিবে, ঢুকিয়ে দেবে ভারতের ভেতর। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে এই স্লো পয়জনগুলোর ক্রিয়া আমরা অনেকটাই অনুধাবন করতে পারছি।

লেখার শেষে শুধু একটা কথাই বলবো, বাংলাদেশীরা যদি চায়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখুক, কোন দেশের দখলদারিত্বে শিকার না হোক তবে ‘জাতীয় সংগীত : আমার সোনার বাংলা” পরিবর্তন করার কোন বিকল্প থাকতে পারে না। অবিভক্ত বাংলার জাতীয় সংগীত বাংলাদেশের জন্য শুধু বিষ ফোড়া নয়, বরং ক্যান্সার। এটা আপনার উপর হয়ত ক্রিয়ায় সফল হইছে না, কিন্তু আপনার সন্তান বা নাতির উপর ক্রিয়ায় সফল হবে না, সেটা কিন্তু আপনি বলতে পারেন না।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...