সরকারের শর্ত মেনে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য তথ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছে এক হাজার ৮০০ অনলাইন সংবাদমাধ্যম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
‘অপসাংবাদিকতা’ রোধে সব অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে গত বছরের নভেম্বরে আবেদন নেওয়া শুরু হয়। শুরুতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হলেও সময় বাড়ানো হয় চার দফা। শেষবার সময় বৃদ্ধির সময় ১৭ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে বলা হয়। অবশ্য এখনও কেউ আবেদন করতে চাইল তা নেওয়া হচ্ছে। অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিবন্ধন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তথ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসতাক হোসেন বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ আবেদন তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে পত্রিকারগুলোর অনলাইন সংস্করণ এবং অনলাইন টেলিভিশনের আবেদনও রয়েছে।
অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের আবেদন চেয়ে সরকারি ভাষ্যে বলা হয়েছিল, “বাংলাদেশের অনলাইন পত্রিকার প্রকাশকদের পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং অপসাংবাদিকতা রোধ করার লক্ষ্যে সরকার নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করেছে।” সরকারের নিবন্ধন পাওয়ার জন্য অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোকে নির্ধারিত নিবন্ধন ফরম ও একটি প্রত্যয়নপত্র বা হলফনামা পূরণ করে তথ্য অধিদপ্তরে জমা দিতে হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ২ হাজার ৮১০টি দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ও ষান্মাষিক পত্রিকা রয়েছে। এছাড়া ৪৩টি বেসরকারি টেলিভিশনের সরকারি অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি টেলিভিশনের লাইসেন্স স্থগিত রয়েছে, সম্প্রচারে আছে ২৪টি।
অনলাইন সংবাদপত্রের মতো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের আলাদা নিবন্ধনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ইসতাক বলেন, “পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণের সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের অনেক সময় মিল থাকে না। এছাড়া চাইলেই অনলাইন সংস্করণের নিউজ পাল্টে দেওয়া যায়।” নিবন্ধন না থাকলে কোনো অনলাইন সংবাদমাধ্যমই সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবে না জানিয়ে অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বলেন, “অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের প্রোটেকশন তারা পাবে না।” ইসতাক জানান, ডিক্লারেশন পাওয়া পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণের নিবন্ধন পেতে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে। তবে বেসরকারি টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণের নিবন্ধন লাগবে না।
সরকারের কাছে আবেদন করা সব অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিবন্ধন পাবে কি না- এমন প্রশ্নে ইসতাক বলেন, “সব যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে সবগুলোকে নিবন্ধন দিতে তো কেনো সমস্যা নেই। “যদি এসবি (পুলিশের বিশেষ শাখা) বা পুলিশ রিপোর্ট খারাপ না থাকে, সবাই নিবন্ধন পেতে পারে। নিবন্ধন দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তথ্য মন্ত্রণালয়।”
এখনও অনলাইন নীতিমালা না হওয়ায় কীসের ভিত্তিতে এই নিবন্ধন দেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে ইসতাক বলেন, নিবন্ধন ও নীতিমালা তৈরির কাজ তারা এক সঙ্গেই করছেন। তথ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে ১৩৮টি অনলাইন সংবাদপত্র অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পেয়েছে। আর সব ধরনের সংবাদমাধ্যম হিসাব করলে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাচ্ছে প্রায় তিন হাজার সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
“অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী অনেকেই নতুন নতুন অনলাইন গণমাধ্যমে যোগ দিয়ে তাদের কার্ড ওই গণমাধ্যমের নামে করিয়েছেন। ফলে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের নামে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের সংখ্যা বাড়ছে।” কার্যক্রম না থাকলেও ‘রাজনৈতিক চাপে’ বেশ কিছু অনলাইন সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের নামে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিতে হয়েছে বলে জানান তথ্য অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা।
এক বছর আগে সংসদ অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রথম শ্রেণির প্রত্যেক পত্রিকাকে ছয়টি করে ‘অধিবেশন কার্ড’ দেওয়া হলেও এখন দেওয়া হচ্ছে তিনটি।
তথ্য অধিদপ্তরের প্রটোকল শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘অনলাইন সংবাদপত্রের সংখ্যা বাড়ায়’ অধিবেশন কার্ড কম করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। কারণ সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বাড়লেও সংসদ সচিবালয় আগের হারেই অধিবেশন কার্ড সরবারহ করছে।
গাড়ি নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশে পত্রিকা ও টেলিভিশনের সাংবদিকদের জন্য স্টিকার বরাদ্দ করে তথ্য মন্ত্রণালয়। অনলাইন নীতিমালা না থাকায় ইন্টারনেট সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের সেই স্টিকার বরাদ্দের অনুমোদন দেয়নি তথ্য মন্ত্রণালয়।
ফলে অনেক সময় গাড়ি এমনকি মোটরসাইকেল নিয়েও সচিবালয়ে প্রবেশে অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রে অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকদের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় সেখানে সদস্যপদ পাওয়া নিয়েও জটিলতা রয়েছে।
সৌজন্যে : বিডিনিউজ২৪.কম