শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:৫৬
Home / কবিতা-গল্প / ভাবান্তর…

ভাবান্তর…

indexআযাদ আবুল কালাম ::

বাইরে একা বসে আছে মেহেদী। চৈতের উঠোনে উতলা বাতাস ছাড়া আর কেউ জেগে নেই। আজ তার মন খারাপ। রাত বারোটার পর একজন লোক মন খারাপ করে বাইরে বসে থাকবে, ঘরের লোক সেটা সহজে নেবে না। পৃথিবীর একজন অন্ততো মোটেও নেবেন না। তিনি মা।

মা বার বার এসে ডাকছেন। মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ঘরে তুলে দিয়েছে। মন কি আর ঘরে থাকে! মা বার বার উঁকি মারছেন ঠিক ই, এতে মেহেদীর খুব ডিস্টার্বড হচ্ছে। মেহেদী ডিস্টার্বড ফিল করুক সেটাও মা ভাল পান না। তাই একদম নিরাপদ দূরত্ব হতে আড়াল থেকে তাকে ফলো করছেন।

মেহেদীর মাথায় একটি রাগি ছেলের ছবি টনটন করে ঘন্টির মত বাঁজতে আছে। যে ছেলেটা আসবে সে খুব অদ্ভুত মানব। তার ভেতরে ক্ষোভের আগুন আছে। সে আগুন আজ মেহেদীকে দেখাবে সে।

ভাবছে আর ভাবছে মেহেদী। আকাশ এক প্রকার হীম কালো। ফুটফুটে কালো বর্ণের একটি বাচ্ছার গালের মত আকাশের শরীর। দেখতে ভাল লাগলেও মন ভাল নেই। কারণ যে ছেলেটা দেখা করতে আসবে। সে এক ভয়ংকর ব্যাপার। ছেলেটার হাতে থাকবে ধারালো অস্ত্র। দুটি চুড়ি। একখানা পুরুনো চাদর। একটা চাদরে পুরুনো রক্তের দাগ লেপটানো। রক্তাক্ত চাদরখানা মেহেদীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলবে নিন এটা আপনার জন্য এনেছি। মেহেদী চাদরটা গায়ে জড়াবে। মোটেও ভয় পাবে না। চাদর গায়ে এক পা দুই পা করে হাটতে থাকবে। আগন্তুক লোকটা অস্ত্র হাতে আগেকার বাদশার উজিরের মত মেহেদীর পিছে পিছে হাটতে থাকবে। কিছুক্ষন পর চুড়িগুলো বের করে দিয়ে বলবে নিন এটাও আপনার জন্যে। এটা আপনার হাতে পরুন। পরতেই হবে। লোকটা চুড়ি ধরিয়ে দিয়ে বাদশার দিকে ক্ষ্যাপা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। দু’জন দু’জনকে খুব ভালভাবে পরখ করতে থাকবে। ততোক্ষনে মেঘ সরে গিয়ে আকাশ থেকে জোছনা ফুটে ফুটে বেরুবে। জোছনার আলোয় দুজনের চেহারা বেশ ভাল ই দেখা যাবে। উজিরের চেহারাটা গাঢ় রক্তের মত থকথক করতে থাকবে। বাদশার চেহারাটা হলুদ। কড়া হলুদ জ্বলজ্বল করবে। বাদশা অর্থাত্‍ মেহেদী তখন চিত্‍কার করে উঠবে। কেন কেন এমন রক্তচ্ছটায় বিদঘুটে একখানি চাদর আমাকে পরিয়েছ ! আর এই চুড়ি !

ছেলেটা টা টা করে হাসতে থাকবে। তার হাসিতে কোনো আনন্দ থাকবে না। ক্ষোভ আর জ্বালা যন্ত্রনা মেশানো হাসি। হাসতে হাসতে মেহেদীকে তিন চারটে ঘুষি মারবে। এই ঘুষিগুলো খুব ভয়ংকর ধরনের হবে। ঠিকমত ব্লক করতে না পারলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা ও যেতে পারে মেহেদী। তাই আজ তার মন ভাল নেই। এতো রাতে ছেলেগুলোর মন খারাপ থাকে প্রেমের জন্য। তার সে রকম কিচ্ছু না।

সব ঠিক আছে। কিন্তু লোকটার পাগলামি করে মারা ঘুষিগুলো ঠিক না। ওগুলো মারবেই সে। কোনোক্রমেই ছেলেটার কাছ থেকে বদলা নেয়া যাবে না!

মেহেদী চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়। মাহবুব আলমের কাছে ছোটকালে কয়টা ক্যারাটি আর্ট শিখেছিল মেহেদী। ওগুলো ট্রাই করতে থাকে। মাহবুব আলম তার বন্ধু। কারাতে ফেডারেশনের ব্ল্যাক ব্যাল্ট পাওয়া দূর্দান্ত জোয়ান। নায়ক রুবেলের সাথে বেশ কিছু কারাতে আর্টের ছবি আছে মাহবুব আলমের। রুবেল তখন কারাতে চেয়ারম্যান। একদম লাইভ দেখেছিল মাহবুবের সাথে রুবেলের
কারাতে ট্রেনিং । মেহেদী একটু একটু ট্রাই করেছিল। আজ আর সেগুলো খুব একটা মনে নেই। ভাঙ্গা ভাঙ্গা যা আছে তা মনে করিয়ে প্র্যাকটিস করতে থাকে। একটা ওয়ালের সামনে দাড়িয়ে হুয়াক হিক হুয়াক হুয়াক…টিসুম টিসুম…হি ই ই ই য়াক…

এমনসব উদ্ভট আওয়াজ আর আচরন মা’য়ের কাছে শুভ লক্ষন মনে হল না। অবান্তর একটা দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আছেন মেহেদীর মা। চোখ থেকে পানি ছাড়ছেন। ছেলেটাকে নিশ্চই জ্বিনে পেয়েছে। উঁচু করে একটা শ্বাস ছেড়ে মা আস্তে আস্তে ভেতর ঘরে চলে গেলেন।

মেহেদী হিক হাক টিসুম টাসুম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পা ছড়িয়ে দিয়ে উঠোনের শেষ মাথায় কাঁচা ঘাসের বিছানায় গা হেলিয়ে দেয়। ঠান্ডা বাতাস আর রাতের পেলবতার আস্তরন উপরে পড়তেই আপসে ঘুম লেগে যায় তার।

রাত দু’টোর দিকে লোকটা আসে। ভয়ংকর লোকটা। তার হাতে চাদর, চুড়ি, অস্ত্র। পনপনে চোখে ঘুমন্ত মেহেদীর দিকে তাকিয়ে থাকে লোকটা। পাতার ফাক ফোকর বেয়ে জোছনার ছিটাগুলো মেহেদীর শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে মেহেদীকে। আস্তে আস্তে জাগিয়ে তুলে। নিন এই চাদরটা গায়ে দিন। শরীরটা রি রি করে উঠে মেহেদীর। চমকে চমকে উঠে আত্না। মেশকে আম্বরের ঘ্রান সে জিবনেও শুঁকে নাই। শুধুই শুনেছে। আজ বাস্তবে তা শুঁকছে, রক্ত গলিত এই চাদর থেকে মেশক্বে আম্বরের ঘ্রান বেরুচ্ছে। ভুরভুর করে এলাকা মাতিয়ে তুলছে ঘ্রানে। একি তাআজ্জুবের বিষয়! চাদরটা গায়ে দিয়ে হাটতে থাকে। ছেলেটাকে বলে আচ্ছা চুড়িটা পরার জন্য তুমি আমাকে এতো জোরাজোরি করছ কেন? ছেলেটা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে হ্যাঁ এই চুড়ি তোমাকেই মানায়। এটা আমার মায়ের চুড়ি। আর এই চাদর আমার বাবার। আজ থেকে এগারো বছর আগে আমার মা এই চুড়ি ভেঙে হাত থেকে খুলে রেখেছেন। আজ ওগুলো তোমাকে পরাব বলে এনেছি। তুমি এবং তোমরা পুরুষ নও; তোমরা নারী। তোমরা মূর্তিমতী পাপ। চুড়িতেই তোমাদেরকে শুভা পায় ভালো।
মেহেদী ভীতু গলায় বলে আর এই চাদর?
হ্যাঁ চাদরখানি ই তো আমার মায়ের চুড়ি ভেঙেছে। ওটা শাপলা চত্বর থেকে এনেছিলাম। বাবা নেই। এ চাদর আমার বাবার গায়ের। আজ দেশে হাজার হাজার মুসলমানের কন্ঠে খেলার মিছিল আর লাল সবুজের চাদর শুভা পাচ্ছে। তোমরা কাপুরুষ। হুজুগী। তোমরা যারা লিখতে পার। তোমরাও। তোমরা তো এমন করে শাপলার শহীদদের জন্য হামলে পড়োনি। যেমনি করে মেতে উঠেছ, তোমাদের শরীরে আমার বাবার রক্তাক্ত চাদর শুভা পাক। এই নাও, এই চুড়িগুলাও নাও। মায়ের চুড়ি। তোমরা নারী হওয়া উচিত।

এমন অসহনীয় আচরনে অক্ষম জননীর মত কাতরাতে থাকে মেহেদী। এবার ঘুষি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। তুমি। যখন দেশের ছেলেরা উল্লাস করছে। মেহেদী তুমি এ দেশের শহীদের রক্তাক্ত চাদর পরে পথ হাটছ। এটা তোমার পতাকা হোক।

পেছন ফিরে দেখে ছেলেটা কাঁদছে। ঘুষি তো মারছেই না বরং কাঁদছে। তার চোখে বাবার খুন রাঙা দীপ্ত ইতিহাস জ্বলজ্বল করছে। জাতি গঠনের জন্য যে বাবা শাহাদাতের শরাব পিয়েছেন। সে বাবার জাতি এখন ব্যাস্ত। বহু কিছু নিয়ে ব্যাস্ত। পতাকা নিয়ে ব্যাস্ত।

মা বেরিয়ে আসতেই মেহেদী লাফ দিয়ে উঠে যায় ঘাসের বিছানা ছেড়ে। দেখে মায়ের হাতে এক গ্লাস লেবুর শরবত। মা, মা গো…।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

৪৩ টি পতিতালয়ের মালিকের লেখা কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত?

ফেসবুকীয় মতামত-:: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী রবী ঠাকুরের কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত? জাতি তা জানতে চায়…… ...