মুসা আল হাফিজের কবিতা –
আকাশে ধুঁয়োর কুন্ডুলী গোখরো সাপের মতো ছড়াচ্ছে বিষ
তার উপর দাড়িয়ে ঈদের চাঁদের দিকে তর্জনী
তুলে মাননীয় সাম্রাজ্যবাদ মুসলিম
বিশ্বসংক্রান্ত কর্মসূচী ঘোষণা করছেন
কান্দাহারের ফসলি উঠানে আকাশ থেকে বমি
করুক ‘সভ্যতার’ কনকর্ড অসংখ্য বৃক্ষ পাখি
নারী-শিশুর এবড়োথেবড়ো লাশ আর গরম
রক্তের ফোয়ারায়
দাউদাউ জ্বলন্ত জনপদ জুড়ে রচিত হোক
‘প্রগতির’ পান্ডুলিপি! পৃথিবীর উর্বরতার জন্যই
এ রক্ত, এ লাশ! আফগান, ইরাক,
ফিলিস্তিন……………… যিশুর পৃথিবীতে এরা
এন্টিক্রাইস্ট! লাঞ্চনার পোকামাকড় সব,
নিয়তি তাদের গায়ে মেখে দিয়েছে কাদা
তৃতীয়বিশ্বের কেউ কি মানুষ? ওদের হত্যা করো
মুখে কলমা নিয়ে ঈদগাহে যাচ্ছে দলবেঁধে
ওদের বিশ্বাসে জ্বলছে সাম্যের বিকল্প
বিশ্বলোক
আমাদের বিশ্ব এটি, এখানে না কোনো
বিকল্প, না কোনো চ্যালেঞ্জ মুসলমানরা কি মানুষ?
ওদের হত্যা করো। কমপক্ষে ১টি করে
গণকবর সৃষ্টির কৃতিত্বে উজ্জীবিত সৈনিকেরা
দাঁড়াও! ঈদের প্রত্যুষে তোমাদের দেয়া হলো
গণহত্যার অধিকার! স্ফুলিঙ্গের মতো ইদগাহে
ছোটা এই কিশোরদের ধরো আগে
ওদের চোখে লকলক করছে স্বাধীনতার শিখা-
উপড়ে ফেলো চোখ
ওদের বুকে শাঁ শাঁ করছে বিজয়ের তাকবীর-
গুড়িয়ে দেও বুক
নিরাশার নদীতে জায়নামাজ বিছিয়ে
ভোরের বন্দরে ওরা যাত্রা করতে চায়- পুড়াও
জায়নামাজ
ওদের হৃদয়ে থৈ থৈ প্রেম আর বিশ্বাসের
তীব্র হুতাশন- হৃদপিন্ড কুকুরকে দিয়ে এসো
ওদের মাথার ভিতর ছাউনি ফেলছেন গাজী
সালাদীন – পিষে ফেলো মাথা ওদের মুখে
জ্বলজ্বল করছে বদরের বিদ্যুৎ- বুলডোজারে
দলিত করো মুখ বায়ুমন্ডলে সন্ত্রাসের হুমকি
কমাতে হলে গণহত্যা চাই,
চিন্তা নেই, এতে যদি ঝড় উঠে কোথাও, আমরা
তাকে রজ্জুতে লটকাবো হত্যা করবো স্বয়ং
স্বাধীনতাকে, তাকে ধরতে না পারলেও
রাত্রির ভূতুড়ে বাড়িতে হত্যা করে পোড়া
লাশকে সমুদ্রে ‘পুতে’ দেয়ার কিচ্ছা রটাবো
দ্রিম দ্রিম করে এ নিয়ে বাজিয়ে যাবো
ভীতির দামামা।
অত:পর কোন ধৃষ্ট আত্মার পতাকা নিয়ে
রোরুদ্যসময়কে ছিঁড়ে নারায়ে তাকবীর বলে
মুমূর্ষ হওয়ায় তীব্র ছড়াবে তুফান?
গোলার্ধে গোলার্ধে মাননীয় সাম্রাজ্যবাদ
পাঠ করবেন নতুন পৃথিবীর বীধিলিপি!
সেই পৃথিবীতে আকাশের দিকে মাথা তোলা
কোনো মিনার থাকবেনা কোথাও আমামা
বাধা কোনো মস্তক দেখবেনা নীলিমা
থাকবেনা পুরুষের দাড়ি নারীর হিজাব
বিশ্বাসের মসজিদে প্রেমের জিকির আর
ছড়াবেনা ঢেউ
সেই পৃথিবীর সব শস্যের রঙ হবে নীল সব
পাখিকে বাধ্যতামূলকভাবে গাইতে হবে একই
গান
অনুমোদিত হাসি-কাশি-ভালোবাসাবাসী
ছাড়া আর কোনো দৃশ্য রচিত হবেনা কোথাও
একটিমাত্র ঋতু পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণে
দ্বিপদ যন্ত্রপাতির মাথার উপর দিয়ে ধেই
ধেই করে নাচতে থাকবে একটানা সর্বত্র
গীর্জার ঘন্টা, গণতন্ত্র, লিভটুগেদার………
তছনছ পরিবার ছেড়ে বারে-পার্কে মত্তরবে
আত্মারিক্ত পুরুষ প্রজাতি কামের বারুদে দগ্ধ
বেআব্রু নারী হবে চৌকষ পন্য কিংবা
লাওয়ারিশ বার্গার তবেই তো ব্যক্তির মুক্তি,
পৃথিবীর পূর্ণ স্বাধীনতা
সেই পৃথিবীর পক্ষে অন্তরীক্ষে পরাশক্তির
যৌবন গর্জায়
সময়ের বাদামী চামড়ায় মড়কের প্রচ্ছদ আঁকে
বহুজাতিক হাত খেতখামারে আহত স্বপ্নের
হাড়গোড় পেচিয়ে বিষাক্ত হাই তুলছে
মত্তঅজগর জগতের সমস্ত ন্যায় ও সুন্দরকে ধারণ
করে গুয়েনতানামো বে তে পোকামাকড়দের
বেয়াদব ঈদকে চুবানো হচ্ছে তপ্ত পানিতে
এভাবে আর কতো? এই চিত্র অনি:শেষ? সাপের
উদরেই থামলো ইতিহাসের নদীস্রোত?
পশুর কারাগারে আর্তনাদ করতে থাকবে
মানুষের ঈদ?
না না বলে স্থুল নৈ:শব্দকে ভস্ম করে মাটির
ভেতর থেকে উঠে এলো শত শত শহীদ কিশোর।
সৌরভের গ্রেনেড যেনো পৃথিবীতে ঘটাবেই
ওরা প্রেম আর স্বাধীনতার মহাবিস্ফোরণ
মৃত্যুই এদেরকে দিলো এই অধিকার। শহীদ
আত্মাদের সামুদ্রিক অভ্যুত্থানে ঝলসে উঠছে
আগামীর ঈদগাহ-জায়নামাজ। সেখানে
নামাজ পড়তে আলোর লেবাস পরে আকাশে