লুকমান হাকিম
সম্রাট মহোদয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তিনি এবার বিয়ে করবেন। নোটিশ জারি করলেন, রাজ্যের সুন্দরী যুবতীরা যেনো জমায়েত হয়। সময়, স্থান নির্ধারণ করা হলো। রাজ্যের কোণায় কোণায়, নগরে বন্দরে ব্রিফিং করে জানানোও হলো। সময়মতো সুন্দরীদের মিলনমেলা বসবে। সেজেগুজে যুবতীরা উপস্থিত হবে। উপস্থিত সুন্দরীদের থেকে সম্রাট নিজের জীবনসঙ্গিনী নির্বাচন করবেন।
সময়মতো রাজ্যের যুবতীরা উপস্থিত হলো। সুন্দরিরা সম্রাটের আহ্বানে সাড়া দিলো। বহুল আকাঙ্খিত এই বাছাইপর্বে অংশ নিতে রীতিমতো তারা প্রতিযোগিতা করলো। এ প্রদর্শনী সমাবেশে প্রতিযোগী হিসেবে উপস্থিত হলেন রাজ্যের হতদরিদ্র এক সম্রাটপ্রেমিকা। তার স্বপ্ন ছিলো সে হবে সম্রাটে নববধু। হবুবধু। সম্রাটপ্রেমিকার মা তার মেয়ের স্বপ্নের কথা ভালোকরে জানতেন। তার মেয়ে সম্রাটের বধু হতে চায়, মা তা পছন্দ করতেন। এদিকে সম্রাট বিবাহের জন্য রাজ্যের সুন্দরীদের একত্রিত করার আয়োজন জেনে যারপরনাই মা দুঃখিত হলেন। ভেঙ্গে পড়লেন। হতাশা অনুভব করলেন। অবশেষে মেয়েকে মেয়ের প্রেমের কেন্দ্রবিন্দু বাদশাহের যুবতী আয়োজনের কথা বললেন। এ আয়োজনে উপস্থিত সুন্দরীদের মধ্য থেকে একজনকে বাছাই করার কথা জানালেন। এজন্য মা তার হতাশার কথা তার মেয়েকে জানালেন। মেয়ে বললো, মা! নো চিন্তা। বাস্তবেই যদি সম্রাট কন্যাবাছাইয়ের আয়োজন করে থাকে, তবে আমি সেখানে হাজির হবো। নিশ্চিত, আমি ব্যর্থ হবো না। রাজ্যের সুন্দরী মেয়েরা সেজেগুজে আরো সুন্দর হলেন। সবারই স্বপ্ন, তিনি সম্রাটের বধু হবেন। কতো যে আনন্দ! সবার মতো গরীব মেয়েও সেজেগুজে হাজির হলো। প্রতিযোগিতায় অংশ নিলো। অপেক্ষা করতে করতে একসময়ে সবার স্বপ্নের নায়ক, কল্পনার সম্রাট দীপ্তপদে উপস্থিত। এক জন যুবতী নির্বাচিত হওয়ার অপেক্ষায় সবাই।
একসময় সম্রাট বক্তব্য দিলেন, আমি তোমাদেরকে গোলাপের কিছু বীজ দেবো। তোমরা এগুলো রোপন করবে। ছ’ মাস পরে এই বীজ থেকে জন্ম নেয়া গাছের গোলাপফুল যে নিয়ে আসতে পারবে, তাকে আমি আমার পরম প্রিয়া হিসের গ্রহণ করবো। গোলাপের বীজ নিয়ে সবাই সবার বাড়ীতে। বীজ রোপন করলেন। কিন্তু চারা গজলো না। গাছ হয়ে ফুল ধরা তো কল্পনা হয়ে দাঁড়ালো। এদিকে ছ’ মাস চলে যাচ্ছে।
এবার মা তার মেয়েকে লক্ষ্য করে বললেন, মা, বাদশাহের কথামতো তুমিতো বীজ থেকে চারা গজাতে পারো নাই, কাজেই সম্রাটের কাছে তার প্রিয়া হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যেয়ো না। মেয়ে তার মাকে সম্ভোধন করে বলে, মা আমিতো চারা জন্ম দিতে পারি নাই, সুতরাং এই বীজ নিয়েই আমি আমার প্রেমাস্পদের দোয়ারে হাজির হবো। মা, আমি হয়তো তার বধু হতে পারবো না। কারণ শর্ত পূরণ করি নি। সম্রাট আমার স্বপ্নের নায়ক বাস্তবে হতে পারবে না, কিন্তু তাকে তো শেষবারের মতো একনজর দেখবো। সামান্য হলেও আত্মাটা তৃপ্ত হবে। কথামতো সম্রাটপ্রেমিকা বীজ নিয়ে সম্রাটভবনে হাজির।
এদিকে রাজ্যের মেয়েরা আরো সুন্দর হয়ে হাতে হাতে সুন্দর থেকে সুন্দরতম গোলাপফুল নিয়ে স্বপ্নপুরুষের রাজভবনে উপস্থিত। কিন্তু গরীব মেয়ের হাতে ছ’ মাস আগে সম্রাটের দেয়া সেই বীজ। সম্রাটভক্ত অসহায় এ মেয়ের হাতে পুরোনো বীজ দেখে বললেন, আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। তোমাকেই আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করবো। সুন্দরীরা অভিযোগ করলো, আপনার কথা মতো ফুল নিয়ে যে আসতে পারে নি, তাকে বিয়ে করবেন কেনো? সম্রাট উত্তর দিলেন। বললেন, আমি তোমাদের সবাইকে যে বীজ রোপন করার কথা বলেছি, সে বীজ অকেজো। কাজেই তোমরা এ বীজ থেকে মিথ্যা চারা জন্ম দিয়েছো। যাকে আমি বাছাই করেছি সে সত্য নিয়ে এসেছে। সুবহানাল্লাহ। আর আমি আমার রাজ্যের জন্য সৎ, সত্যবাদী একজন মহিলা চাই।
অবশেষে সত্য ও প্রেমের জয় হলো। বিবাহ হলো। রাজার রাজ্য পরিচালনায় সেই গরীব পরিবারের মেয়ে, যে ছিলো সত্য ও সত্যের জন্য নিবেদিত, সেও সময়ের ব্যবধানে শরীক হলো। শিক্ষা: পোষাকের সৌন্দর্য অস্থায়ী। সম্ভবত সুন্দর। চারিত্রিক সৌন্দর্য স্থায়ী। নিশ্চিত সুন্দরতম। সত্যের জয় নিশ্চয়। মিথ্যা যতই চাকচিক্যময় হোক, তার পরিণম; লজ্জা। তারপরাজয় নিশ্চয়।
(অনূদিত)