ফাহিম বদরুল হাসান প্যারিস, ফ্রান্স
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০১৮ সালের শেষ দিকে কিংবা ২০১৯ সালের প্রথমেই অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অন্যান্যরা তেমন প্রস্তুতি না নিলেও আওয়ামীলীগ আগামী নির্বাচনেরও যে কোনো মূল্যে মসনদে রয়ে যেতে চায়, তার গ্রাউন্ড অলরেডি তৈরি করতে কোমর বেঁধে লেগে গেছে।
ভোটের রাজনীতিতে ‘ভোটব্যাংক’ অত্যন্ত জরুরি একটি কনসেপ্ট। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুটো দলকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামীলীগ তাদের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বেশকিছু ভোটব্যাংক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সংখ্যালঘু, নৃগোষ্ঠী সহ কিছু কিছু শ্রেণি ও জাতের প্রায় শতভাগ ভোট আওয়ামীলীগের হয়ে আছে অনেক বছর ধরে। এই ভোটব্যাংক তৈরি করতে আওয়ামীলীগ ইংল্যান্ডের লেভার পার্টির মতো ঘরে ঘরে দুধ পাঠিয়ে দেয়নি। বরং কিছু কিছু কর্মসূচি, আইন ও আদর্শিক স্ট্যাটমেন্ট আওয়ামীলীগের প্রতি ওদেরকে আকৃষ্ট করেছে।
অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের বয়স হিসেবে নবীন আরেকটি অন্যতম দল বিএনপি ভোট। যা পেয়েছ/পাচ্ছে, তা প্রধাণত দুটো কারণে। প্রথমটি হচ্ছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা এবং অপরটি, জনগণের আওয়ামীলীগ বিরোধী মানসিকতা। দ্বিতীয় কারণ তথা আওয়ামীলীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে ২০০১-এর নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের ইসলামি দল থেকে আরম্ভ করে প্রায় সব কাওমি মাদরাসা পরোক্ষভাবে এবং চারদলীয় জোটের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির পক্ষে চলে যায়। যার প্রভাব ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের বিশাল বিজয়ে স্পষ্ট ভেসে ওঠে। এরপর থেকে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে টানাপোড়েন সহ বিভিন্ন কারণে ধীরে ধীরে কিছু ইসলামি দল বিএনপি-বিমূখ হতে থাকলেও খুব স্বল্প ইসলামপন্হী আওয়ামীলীগ-মুখী হয়েছেন।
আসলে ধর্ম-নিরপেক্ষতাসহ বিভিন্ন আদর্শিক কারণে ইসলামপন্হীদের সাথে আওয়ামীলীগের সখ্যতা কখনো সেভাবে হয়নি বললেও চলে (যদিও কখনো কখনো নির্বাচনী ঐক্যকে দেখা গেছে)। সর্বশেষ আওয়ামীলীগ ইসলামপন্হীদের মুখোমুখি হয়েছে২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের নবরূপে আবির্ভাবে। এরপর থেকে হেফাজত অনেকটা বর্তমান সরকারের বিরোধী দলের ভূমিকা হেফাজতে ইসলামই করে যাচ্ছে- সেটা হয়তো শেখ হাসিনার সরকার খুব ভাল করে অনুধাবন করতে পেরেই হয়তো ধীরে ধীরে হেফাজতকে সমীহ করতে শুরু করে। ইসলাম এবং আলেম-উলামা বিষয়ে খানিকটা নড়েচড়ে বসে।
দেখা গেল, হেফাজতে ইসলামের দাবী অনুযায়ী স্কুলের সিলেবাস পূনর্বহাল করা, ধর্ম বিদ্বেষীদের বিচার সহ বেশকিছু কাজ সরকার খুবই দ্রুততার সাথে শুরু করে। সর্বশেষ কাওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা যেন হেফাজতে ইসলামের মাতৃগর্ভ কাওমি মাদরাসাকে যেন কৃতজ্ঞতার চাদরে আবৃত করে নিলেন। যেটি আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, কাওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা হয়তো আওয়ামীলীগকে সরাসরি ভোট দেবে না ঠিকই, কিন্তু হেফাজতের সকল দাবী-দাওয়া মেনে নেয়ার কারণে যদি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ভোট না দিয়ে নিরবতা পালন করে, সেটাতে যেমন নির্বাচনে বিএনপি অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা, ঠিক তেমনি যদি হেফাজত সংশ্লিষ্ট ইসলামি দলগুলো বিএনপিকে ভোট না দিয়ে নিজেরা নিজেদের ভোট রেখে দেয়, বিএনপির জন্য আওয়ামীলীগকে হারিয়ে সরকার গঠন অনেকটা হাটু পানিতে নৌকা ডোবানোর মতন।