মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
কওমি সরকারী স্বীকৃতি। এটা বাংলাদেশ’র প্রায় ১৪ লক্ষ প্রতিটা কওমি ছাত্রের নাগরিক অধিকার। কারো অনুগ্রহ, দয়া, করুণা এসবের কিচ্ছুই না। আমাদের জানা রাখা দরকার, যে জাতি শিক্ষার মুল্যায়ন দিতে জানে না, সে জাতী কখনো সুন্দর আগামী গড়তে সচেষ্টতা লাভ করতে পারে না। স্বীকৃতি নামক এ অধিকার আমরা চেয়ে আসছি বহু আগ থেকে। ইতহাস টানছি না। যে সরকারই ক্ষমতায় বসেছে এ দেশের লক্ষ লক্ষ ওলামায়ে কেরাম নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবী করে আসছেন। কেউ পাত্তাই দেয় নি আবার কেউ কিছুটা টুপ দিয়ে আবার গা ঘুরিয়ে নিয়েছে। অবশ্যই এসব ক্ষেত্রে ছিলো তাদের মধ্যকার তৃতীয় গোষ্ঠীসমূহের মারপ্যাঁচ।
আমরা যদি বি এন পি-এর আমলের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, তারা ওলামায়ে কেরামের আন্দোলন আর দাবীর মুখে কওমি স্বীকৃতির ঘোষণা পর্যন্ত দিলেও তা আর আলোর মুখ দেখে নি। টুপের মধ্যেই সসীমাবদ্ধ ছিলো। অবশেষে বর্তমান সরকাররের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বীকৃতি দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমত ধন্যবাদ দিতে চাই সেদিনের গণভবনের অসাধারণ তাত্ত্বিক বক্তিতার জন্য। তিনি তার দশ মিনিটের কথায় চমৎকারভাবে বাংলাদেশের শিক্ষার সূচনাকে তুলে ধরেছেন। এবং তিনি তা এভাবে ব্যক্ত করেন যে, আমাদের শিক্ষার সূচনাতেই আছে কওমি মাদরাসা। এখান থেকেই তো আমাদের শিক্ষার সূচনা। বাংলাদেশে ১৪ হাজার কওমি মাদরাসা আছে। ১৪ লাখ ছাত্র রয়েছে। দীনি এলেম হলো মৌলিক শিক্ষা। এ শিক্ষা না থাকলে শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না।
তিনি তার বক্তৃতায় আরো বলেন, সনদের স্বীকৃতি না থাকায় কওমি মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা তেমন কিছুই করতে পারছে না। সনদের স্বীকৃতি পেলে তারা আলোর দিশা পাবে। কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য স্বীকৃতির ঘোষণাটা আসার পর থেকে সুবিধাভোগী কিছু মতলববাজ বাম বুদ্ধিজীবি, আর জিলাপি মোল্লারা মিডিয়াতে একের পর এক গলাবাজি করে চলছেন। এমনকি তাদের পালিত চেলামুণ্ডাদের ব্যানার দিয়ে রাজপথে নামিয়েছেন। জন বিচ্ছিন্ন তাদের দেড়গণ্ডা মানুষের সমাবেশ! দেখে অবাক হই নি। সরকার কওমি আলেমদের সাথে বৈঠককে তারা ধর্মান্ধদের সাথে আপোষ বলে চেচামেচি করার চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন “আলেমদের কথা মেনে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছেন।”
আমরা নীরব নিভৃতে ঐসব মহলের কাছে জানতে চাই! আচ্ছা এদেশের ১৬ লক্ষ কওমি ছাত্ররা কি এদেশের নাগরিক না? এদের অধিকার বলতে কি কিচ্ছু নেই এদেশে? তবে কেন আজ তাদের প্রাপ্য অধিকারের পেছনে আপনারা চেঁচামিচি করছেন? বাংলার ইতিহাস তো আমরাও জানি। আপনারা ভুলে যাইয়েন না কওমি শিক্ষা এ দেশের একমাত্র একটাই শিক্ষা কারিকুলাম, যেটার ওপর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষক পেটানো এসবের কোন দাগ নেই। তাই সাবধান(!) করি প্লিজ আপনাদের উদ্ভট এ গলাবাজি বন্ধ করুন। যোগ্যদের মূল্যায়ন দিন। গড়ে তুলুন এক ভ্রাতৃত্ববোধের বাংলাদেশ। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
লেখক : প্রাবন্ধিক।
nazmulmonjurbd@gmail.com