ফারহান আরিফ:
এদেশে কওমি শিক্ষাব্যবস্থা সরকারের কাছে অবহেলিত হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন যাবৎ। অতীতে বার বার কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে
সরকারিভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত করার জন্য মাঠে ময়দানে আন্দোলন সহ রাজনৈতিক ভাবেও প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের মধ্যকার সমস্যা ও সরকারের সদিচ্ছা না থাকায় আমরা সরকারি স্বীকৃতি পাইনি আগে। এক সময় স্বীকৃতির আশা সবাই ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু এদেশের তরুণ আলেম সমাজের কিছু সচেতন ব্যক্তিত্ব তাদের নিরলস প্রচেষ্টা কে অব্যাহত রেখে বিভিন্নভাবে কাজ করে গিয়েছিলেন অষ্টপ্রহর। আল্লাহর অশেষ কৃপায় গত কয়েক মাস আগে আলেমদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রয়াশে শীর্ষ আলেমরা আবার জেগে ওঠেন স্বীকৃতি আদায়ে। এদিকে সরকারের সদিচ্ছা আবার আমাদেরকে ভোরের আলোয় রৌশন করে। স্বীকৃতি দেওয়ার ধারাবাহিকতায় সরকার ও শীর্ষ আলেমদের মধ্যে বৈঠক,দাবি-দাওয়া, সন্ধি ইত্যাদি চলতে থাকে। আল্লাহ তালার অশেষ মেহেরবানিতে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াশ ও সরকারের সদিচ্ছায় গত ১১ তারিখ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জণনেত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আল্লামা শাহ আহমদ শফি (দাঃবাঃ),আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসুদ (দাঃবাঃ),আল্লামা নূর হুসাইন ক্বাসেমী (দাঃবাঃ) সহ দেশের শীর্ষ তিনশতাধীক আলেম দেরকে গণভবনে আমন্ত্রণ করে নৈশভোজের মাধ্যমে কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রধান করেন। এছাড়াও দেশে অনৈসলামিক কাজ, হাইকোর্টের সামন থেকে গ্রীকদেবীর মূর্তি অপসারণ সহ অনেক ইসলামি নীতি বাস্তবায়নের পক্ষে ওয়াদা করে ইসলামের প্রতি বাংলাদেশ সরকার সুনীতির প্রমাণ দেখিয়েছেন।
এদিকে কয়েক শ্রেণি মানুষের গায়ে বিষফোঁড়া তৈরি হয়েগেছে, এই বিষক্রিয়ায় কেউ জ্বলছে পদের লোভে, কেউ হিংসায় ,কেউ আবার রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। কিন্তু সবাই এর বিরোধীতায় নিজেকে বিভিন্ন রুপে আত্মপ্রকাশ করছেন। এরা বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। এরা কওমি বিরোধী,পদ ও হিংসার লড়াইয়ে তারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সনদে কামড়াচ্ছে বিষদাঁত দিয়ে। যে বা যারাই এখানে বিরোধীতা বা সমস্যা বাঁধানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন চিনে রাখুন এরা হচ্ছে কওমির জাতীয় দুশমন। সচেতনতার সাথে এদেরকে প্রতিহত করে আমাদেরকে সামনে এগুতে হবে। শোনে রাখুন হিংসুক আর নিকৃষ্ট মানুষরা কোন দিন সমস্যার সমাধান খুঁজেনা, তারা সবসময় সমাধানে সমস্যা খুঁজে বেড়ায়। এদেরকে জাতি ভাল করে জানে, এদের হিংসাত্মক মানসিকতার জন্য, এদের জন্যই এতকাল কওমি সনদের স্বীকৃতি স্তব্ধ ছিল, তাদের জন্যই স্বীকৃতির কেতন আকাশে ওড়ানো যায়নি। ওরা ছিল আমাদের স্বপ্নচোর।
স্বাধীনতার পর থেকে স্বীকৃতির জন্য প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক বার চেষ্টা করা হয়েছিল, বিশেষ করে বর্ষিয়ান আলেম ইসলামের পক্ষে পরীক্ষীত লড়াকু সৈনিক শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব সহ আরো যারা, যতবার স্বীকৃতির জন্য মাঠে ময়দানে সোচ্ছার হয়েছেন ততবার তারা প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বাঁধা প্রাপ্ত হয়েছেন। গত দুই দিনে এদের আসল রূপ জাতীর কাছে প্রকাশিত হচ্ছে উজ্জ্বল ধ্রুবতারার মত। সবাই এদেরকে ভাল ভাবে চিনে রাখুন। আল্লাহর হুকুম, আলেমদের সার্বজনীন ঐক্য এবং সরকারের সদিচ্ছায় আজ কওমির দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ও বাংলাদেশে কওমি শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন হওয়ায় সবাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও মোবারকববাদ জ্ঞাপন করছি। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) কে মাস্টার্স এর সমমান স্বীকৃতির ঘোষণা প্রধান করা হয়েছে মাত্র। এখনো সরকার ও কওমি কর্নধারদের মধ্যে অনেক কাজ অবশিষ্ট রয়েছে,সবাইকে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে যেতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার তাউফিক দান করুন। এবং বিরোধীতাকারী হিংসুকদের কে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
লেখকঃ ফারহান আরিফ।
সিনিয়র প্রতিনিধি কমাশিসা।
শিক্ষার্থী এম,সি কলেজ সিলেট।