এহসান বিন মুজাহির, মৌলভীবাজার থেকে :: স্বামীর উপর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদেরকে হয়রানিমুক্ত করে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের কলিমাবাদের ইব্রাহিম মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম। সোমবার (৩০ নভেম্বর) মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবে (হামিদিয়া পয়েন্ট ৩য় তলা) দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি মামলার সঠিক তদন্তের জন্য প্রশাসনিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। লিখিত বক্তব্যে রাবেয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে আমার নিরীহ পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে এবং স্বামীর উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মৌলভীবাজার মডেল থানায় দায়ের করা একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আমার স্বামীকে অপহরণ মামলাার আসামী করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে আমার স্বামীহারা হয়ে খুব কষ্টে দিনযাপন করছি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মহেতুন বেগম, স্বামী আলমাছ মিয়া, (সাং- উত্তর কলিমাবাদ, উপজেলা ও জেলা মৌলভীবাজার) নামীয় এক কুচক্রি মহিলা তার বাসার মালিক হীরা লন্ডনী ও তার শ্যালক রোমানদের মদদে মিথ্যা অপহরণেরা ঘটনা সাজিয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। তিনি আরো বলেন, অপহরণের পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে। সাধারণত মুক্তিপণ বা অন্য কোন পণ আদায়ের উদ্দেশ্যে, পাচারের উদ্দেশ্যে, ধর্ষনের উদ্দেশ্যে অথবা শত্রুতার প্রতিশোধ হিসেবে খুন-গুমের উদ্দেশ্যে অপহরণ সংঘটিত হয়ে থাকে। তাছাড়া, অপহরণকারী কোন অবস্থাতেই অপহৃতাকে নিয়ে অপহৃতার স্বস্থানে ফিরে আসে না। মহেতুন বেগম ঝি এর কাজ করে। তার সহায় সম্পদ বা এমন কিছু নেই- যেজন্য তার মেয়েকে অপহরণ করা হতে পারে। সপ্তাহ দুয়েকের পরিচয় ও আন্তরিকতার মাঝে বিরোধ বা শত্রুতার বিষয় অবান্তর। পাচারের ক্ষেত্রে তো ভিকটিম নিখোঁজ থাকতো। ধর্ষনের ক্ষেত্রে তো ধর্ষক পলাতক থাকতো। আর বিয়ের ক্ষেত্রে তো মেয়েরা স্বেচ্ছায় ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায়। মহেতুনের মনোয়ারার ক্ষেত্রে তো তাও প্রযোজ্য নয়। কারণ, সে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী এবং সম্পূর্ণ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু। এর মানে- অপহরণের ঘটনাটি সাজানো ও উদ্দেশ্যমূলক। প্রকৃতপক্ষে সে আমার স্বামীর সাথে ঢাকায় আমার খালা শাশুরীর বাড়ি বেড়াতেই গিয়েছিল। ঘটনাটি যে অপহরণ নয় এর অকাট্য প্রমান- হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির সেক্রেটারী জবলু সাহেবের বাসায় সকলের উপস্থিতিতে ভিডিওধারণকৃত দেয়া মনোয়ারার বক্তব্য। এভাবেই কথিত অপহরণের অভিযোগ খন্ডন করে মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কথিত অপহরক মোঃ ইব্রাহীম মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম।
আজ (৩০ নভেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাবেয়া জানান- এটি অপহরণ ঘটনা নয়। হীরা লন্ডনীর বাসায় পাশাপাশি ঘরে ভাড়াটিয়া থাকার সুবাদে মহেতুনের সাথে পারিবারিক সুসম্পর্ক ও মহেতুেনর মেয়ে মনোয়ারার (১৪) সাথে তার স্বামী শুভ’র ধর্ম ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। ধর্ম বোনের আব্দার রক্ষার্থেই শুভ গত ১৪/০৯/১৫ইং তাকে ঢাকায় তার খালা শ্বাশুরীর বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যান। কিন্তু, মহেতুন পরিকল্পিতভাবে তার মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছেনা এবং শুভ তার মেয়েকে নিয়ে গেছে বলে প্রচার করতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে বাসার মালিক হীরা লন্ডনী ও তার শ্যালক রোমান তার ঘরে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্যাদি মহেতুনের জিম্মায় দিয়ে মালামালসহ ঘরে তালা দিয়ে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। তিনি পিত্রালয়ে আশ্রয় নিয়ে তার মালামাল নিতে চাইলে তারা তা দেয়নি। এমনকি তার খাদ্যদ্রব্যাদি পর্যন্ত তারা ফিরিয়ে দেয়নি। এমতাবস্থায় তিনি হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি অফিসের স্মরনাপন্ন হন। এর প্রেক্ষিতে পরদিন সোসাইটির নেতৃবৃন্দ স্থানীয় রুমেল আহমদকে নিয়ে হীরা লন্ডনীর বাসায় যান। এসময় রোমান ও মহেতুন তাদেরকে ভুল বুঝালে তারা ফিরে যান এবং মনোয়ারা ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। এর কদিন পর ঈদুল আজহার আগের দিন ২৪/০৯/২০১৫ইং রাতে শুভ ও মনোয়ারা ফিরে আসলে, তিনি সোসাইটির সেক্রেটারীকে জানান। তারই পরামর্শ অনুযায়ী ঈদের দিন ভোরে পিতা, মাতা, ভাই, খালা ও তিনি দুজনকে উনার বাসায় নিয়ে গেলে উনি মহেতুনকে খবর দেন। মহেতুন তার ছেলে মহসীন ও পাশের ঘরের এক মহিলাসহ উপস্থিত হলে, সকলের সামনে উনি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দুজনেই ঢাকায় তার খালা শ্বাশুরীর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল বলে জানায়। এ নিয়ে মহেতুন ও মনোয়ারা এবং মহসীনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এ সবকিছুই সেক্রেটারী সাহেবের নিজ ক্যামেরায় ভিডিওধারণ করা আছে। এরপর উপস্থিত সকলের সামনে মনোয়ারাকে উনি মহেতুনের নিকট সমঝিয়ে দেন। দুদিন পরে গত ২৭/০৯/২০১৫ইং কাউন্সিলর নাহিদ হোসেন তার শুভকে ডেকে পাঠালে, মা, বাবা ও তিনি তাকে নিয়ে হীরা লন্ডনীর বাসায় যান। সেখানে মহেতুন এক নতুন কাহিনীর অবতারনা করলে শুভ এর প্রতিবাদ করলেও কেউ তা আমলে নেয়নি। একপর্যায়ে হীরা লন্ডনী, রোমান ও নাহিদ হোসেন কি যেন পরামর্শ করে এসে পুলিশ ডেকে শুভকে মনোয়ারার অপহারক সাজিয়ে সোপর্দ করে। এভাবেই হীরা লন্ডনী, তার শ্যালক রোমান ও কাউন্সিলর নাহিদ হোসেনের সহযোগিতায় কুচক্রী মহেতুন মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে তার নিরপরাধ স্বামীর জীবন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করে তিনি বলেন- প্রশ্ন উঠতে পারে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মনোয়ারার বক্তব্য আইনানুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মহেতুন কর্তৃক কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীওতো গ্রহণযোগ্য হতে পাওে না। আইনানুযায়ী গ্রহণযোগ্য হোক বা না হোক, মনোয়ারার বক্তব্য থেকে এটি যে অপহরণ নয় তাতো সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়।
প্রশ্ন উঠতে পারে- শুভ’র সাথে তো হীরা লন্ডনী, তার শ্যালক ও কাউন্সিলরের বিরোধ বা শত্রুতা থাকার কথা নয়। তাহলে শুভ’র এ পরিণতির জন্য তাদেরকে দায়ী করা হলো কেন ? এর উত্তরে তিনি বলেন- শ্যালক রোমান হীরা লন্ডনীর বাসার কেয়ার টেকার থাকায় মহেতুনের সাথে তার গভীর সুসম্পর্ক। সেই সুবাদে মহেতুনের পক্ষ হয়ে রোমান তার ভগ্নীপতি হীরা লন্ডনীকে ভুল বুঝিয়ে মহেতুনের প্রতি সহনুভুতিশীল করে তুলে। একইভাবে রোমান ও হীরা লন্ডনী মিলে কাউন্সিলর নাহিদ হোসেনকে প্রভাবিত ও হস্তবশীভূত করার কারণে তারা জোটবদ্ধভাবে মহেতুনের পক্ষ নেয়। সে কারণে তারা শুভকে আতœপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং যাচাই-বাছাই না করে শুধুমাত্র মহেতুনের বক্তব্যের ভিত্তিতেই শুভকে অপহারক সাজিয়ে পুলিশে সোপর্দ ও মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানীতে পতিত করেছে। তাদের এ একতরফা ভূমিকার কারণেই তার নিরপরাধ স্বামী এবং শিশুসন্তান ও তার জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পতিত হয়েছে। আমি একজন অসহায়, হতদরিদ্র ও নীরিহ মহিলা হওয়ায় কারণে আমার কোনো কথা কেহই আমলে নেন না। প্রকৃত ঘটনা জানারও প্রয়োজন মনে করেন না। তাই নিরুপায় হয়ে আমি সাংবাদিক ভাইদের স্মরণাপন্ন হয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। পরিশেষে মামলার সঠিক তদন্তের জন্য প্রশাসনিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।