ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় মন্তব্য করেছেন যে দীপাবলির সময়ে ভারতে যে বাজি ফাটানো হয়, তা থেকে যেমন কয়েকদিন শব্দ দূষণ হয়, তেমনই সারা বছর মসজিদ থেকে আজান দেওয়ার ফলেও শব্দ দূষণ ঘটে। খবর বিবিসির।
ত্রিপুরার রাজ্যপাল পদে নিযুক্ত হওয়ার আগে দীর্ঘদিন তথাগত রায় বি জে পির নেতা ছিলেন। আর ওই পদে বসার পরেও সামাজিক মাধ্যমে করা তার নানা মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এই সর্বশেষ মন্তব্যটি তথাগত রায় মঙ্গলবার করেছেন তার ব্যক্তিগত টুইট অ্যাকাউন্ট থেকে। রায় লিখেছেন, ‘প্রতিটা দেওয়ালীর আগেই লড়াই শুরু হয় বাজি থেকে হওয়া শব্দ দূষণ নিয়ে। বাজি ফাটানো হয় বছরের কয়েকটা দিন। কিন্তু লাউড স্পীকারে ভোর সাড়ে চারটের সময়ে যে আজান দেওয়া হয়, তা নিয়ে কেউ লড়াই করে না।’
ওই টুইট বার্তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ত্রিপুরার রাজ্যপাল বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘কোরান, হাদিসে তো মাইকে আজান দেওয়ার বিধান নেই। মোয়াজ্জিনরা মসজিদের মিনারে চেপে সেখান থেকে আজান দেন না কেন! সেটাই তো আজান দেওয়ার নিয়ম! সেটাই বলতে চেয়েছি আমি ওই টুইটে’।
হিন্দুদের উৎসব দীপাবলি বা দেওয়ালীর সন্ধ্যাবেলায় গোটা ভারত জুড়েই যে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বাজি পোড়ে, তা ব্যাপক বায়ু দূষণের কারণ।
সেজন্যই এবছর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় রাজধানী দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টও দেওয়ালীর সন্ধ্যাবেলায় মাত্র তিন ঘণ্টা বাজি পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। বোম্বে হাইকোর্ট আবাসিক এলাকায় বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।
বায়ু দূষণ বন্ধ করতে আদালতগুলির এই প্রচেষ্টার কারণেই সম্ভবত তথাগত রায় বলছিলেন, ‘আমি তো বায়ু দূষণ নিয়ে কিছু বলিই নি। শুধু শব্দ দূষণ নিয়ে লিখেছি যে বাজি আর আজান – দুটোই শব্দ দূষণ ঘটায়। দুটোকেই একই মাপকাঠিতে দেখা উচিত।’
কিন্তু আদালত ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরে একটি টুইটে তিনি লিখেছিলেন যে এবার হয়তো হিন্দুদের মরদেহ সৎকারের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবী উঠবে, মোমবাতি মিছিল বেরুবে।
তার কাছে প্রশ্ন ছিল, রাজ্যপাল পদটি একটি সাংবিধানিক পদ। সেখানে থেকে কী রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মন্তব্য করা যায়?
রায়ের উত্তর, ‘আমার নিজের মতামত প্রকাশ করা যাবে না এই চেয়ারে বসে, এমনটা তো কোথাও লেখা নেই! কেউ যদি সংবিধান অথবা সুপ্রিম কোর্ট বা কোন হাইকোর্টের নির্দেশ দেখাতে পারেন যে রাজ্যপাল হয়ে কেউ ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করতে পারবে না, তাহলে মেনে নেব সেটা।’
তথাগত রায় সক্রিয় রাজনীতি করার সময় থেকেই কড়া কথা বলার জন্য পরিচিত। রাজ্যপাল হওয়ার পরেও তিনি বারে বারেই হিন্দুত্বের পক্ষে নানা মন্তব্য করেছেন। তিনি অবশ্য তার আর এস এস এবং বি জে পি-র সংস্রব লুকিয়ে রাখেন না।
নিজের টুইট অ্যাকাউন্টে পরিচয় দিতে গিয়ে যেমন ত্রিপুরার রাজ্যপাল কথাটি লিখেছেন, তেমনই আর এস এস এবং বি জে পি-র কথাও লিখেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই টুইটের পরে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। কেউ যেমন সমর্থন করেছেন তার কথার অন্য অনেকে আবার বিরোধিতাও করেছেন। একজন রাজ্যপালের এধরণের মন্তব্য শোভা পায় না, সেটাও বলেছেন কয়েকজন।