শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ২:০২
Home / কওমি অঙ্গন / কওমি স্বীকৃতি; কারিকুলাম কমিটিতে কারা আছেন?

কওমি স্বীকৃতি; কারিকুলাম কমিটিতে কারা আছেন?

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ : কেমন আছে লক্ষ তরুণের প্রাণের স্বীকৃতি? কাদের হাতে আছে? স্বীকৃতি নিয়ে কি হচ্ছে? অনেকে প্রায়ই নানাভাবে জানতে চান কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি এখন কি অবস্থায় আছে? কাজ কতটুকু এগোল? সংসদে কি বিল পাস হবে? মন্ত্রীপরিষদে আইন হবে কী? কাজ কতটুকো এগিয়েছি? ৬বোর্ডের সমন্বিত নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে কী? সিলেবাস প্রনয়ন কতটুকু এগিয়েছে? কারা করছেন? বোর্ডের চুড়ান্ত রূপরেখা আসলেই হবে কী? আদৌ সরকারি সাটির্ফিকেট কওমির ছাত্ররা পাবে? স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ চলছে কিনা?

নোট: সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- শিক্ষা কারিকুলাম তৈরির জন্য ইউজিসি কমিটি কেন? এটা আবার কী? এই কমিটি ও তার বাইরের সদস্যদের মাঝে কোনো আলেম নেই কেন? ইফা ডিজি সামিম আফজাল এতে সম্পৃক্ত হলেন কীভাবে? কওমি মাদরাসা সিলেবাস কমিটিতে নারী সদস্য কেন? স্বীকৃতি কি আসলেই স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রেখেই হচ্ছে ইত্যাদি প্রশ্ন এখন কওমি সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

কিছু কথা বলতেই হবে…
কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির চলমান প্রক্রিয়ায় হাজারো প্রশ্ন ঊঁকি দিচ্ছে। কেউ কেউ ম্যাসেজে, সরাসরি ফোন করে এর বর্তমান অবস্থা জানতে চান। কওমি সনদ সরকারিকরণ বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন কওমি মাদরাসার ছাত্রদের নিয়ে কাজ করার কারণে অনেকে মনে করেন- এর সর্বশেষ আপডেট হয়তোবা আমার কাছে আছে। কিন্তু বাস্তবতা হল অনেক কথা আছে যা অপেন বলা যায় না। তবুও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় কখনো মুখ না খুলেও উপায় থাকে না। স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পূর্ববর্তী নানা নাটকীয়তা ও আলেমদের মতবিরোধ অনেকেরই জানা। গণভবনে দেশের শীর্ষ আলেমরা একমত হয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফির নেতৃত্বে সনদের মান প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষনার পর এখন কি হচ্ছে- এটা জানতে চান অনেকেই।

নোট: ঘোষণা পরবর্তী স্বীকৃতির চলমান অবস্থা বিবেচনা করে বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ও ঐতিহাসিক বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটছে না- এখন স্বীকতি কার্যক্রমে। নাকি আলেমরা কোনো স্বার্থের মোহে পড়ে এর থেকে দুরে সরে গেছেন? প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট দুই আলেম এই কাজ থেকে অনৈক্য আর বেফাকের একক সিদ্ধান্তের কারণে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং বর্তমানের এই জটিল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কাজের লোকজন কাজের জায়গা থেকে সরে গিয়ে এখন কওমি স্বীকৃতি ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের কাছে মুখ থুবড়ে পথ হারিয়েছে বলে মনে করেন কওমি অঙ্গনের শীর্ষ আলেমরা।

যেমন ছিল স্বীকৃতির মূল রোডম্যাপ
আমরা প্রথম থেকেই স্বীকৃতির পক্ষে ছিলাম। ১৪লক্ষ কওমি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবী- সরকারি স্বীকৃতির পক্ষে আজীবন কাজ করা। এটা কারো দান নয়, আমাদের অধিকার। তবে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বিনষ্টের প্রশ্নে কোনো আপোষ চলবেনা কারো সাথে। স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি এটিই ছিল আমাদের দাবী। প্রথম থেকেই আমরা বলেছি ঐক্যবদ্ধ স্বীকৃতি চাই। সে লক্ষ্যে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পর দেশের শীর্ষ কওমি মাতরাসা বোর্ডসমুহ যেমন- (১) বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া(২) তানযীমুল মাদারিস উত্তরবঙ্গ (৩) গওহরডাঙ্গা বেফাক বোর্ড ফরিদপুর (৪) জাতীয় দ্বীনী মাদরাসা বোর্ড (৫) এদারায়ে তালীম সিলেট (৬) তানজিমুল মাদারিস চট্টগ্রাম যৌথভাবে কাজ শুরু করেছিল।

আল্লামা শাহ আহমদ শফির পরামর্শের আলোকে, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ ও মাওলানা রুহুল আমিনসহ দেশের শীর্ষ আলেমদের সমন্নয়ে স্বীকৃতির জন্য সর্বপ্রথম যে খসড়া মূলনীতি তৈরি করেছিলেন, তাতে স্পষ্ট লেখাছিল- “কওমিমাদরাসাগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের ৮টি (উসুলে হাশতেগানা) মূলনীতির (যার উপর কওমি মাদরাসারভিত্তি) আলোকে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

খসড়া প্রস্তাবে আরো ৬টি শর্ত স্পষ্ট লিখা ছিল-
“বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা রাজনীতির কবলে পড়ে যেন মাদরাসা তার স্বকীয়তা না হারায়, সেজন্য কিছু শর্ত যোগ করা হল। উল্লেখ্য যে, এসব শর্ত কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে পেশ করা হল।
(১) কওমি মাদরাসা নেসাব ও নেজামে তালীমে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা চলবেনা।
(২) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা সম্পূর্ন্নভাবে অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
(৩) মাদরাসা পরিচালনা প্রদ্ধতিতে হস্তক্ষেপ করা চলবেনা।
(৪) কওমি মাদরাসা কখনও এমপিওভুক্ত হবেনা।
(৫) কোনো মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। এতদসংক্রান্ত নীতিমালা প্রযোজনে সংশ্লিষ্ট (কওমি মাদরাসা স্বাধীন) কতৃপক্ষ প্রণয়ন করবে।
(৬) প্রচলিত কওমি মাদরাসা বোর্ডসমূহ তাদের স্ব-স্ব বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে।

কিন্তু বর্তমান খসড়া মূলনীতিতে ৬শর্তের কিছুই নেই। বরং স্পষ্ট ৬শর্ত লঙনের নানা চিত্র মিডিয়াতে ওঠে আসছে। ৫ টি বোর্ড আর অনন্য সমন্বয়কদের এড়িয়ে মাত্র কয়েকজন ব্যক্তির রাজনীতির এজেন্ডাতে রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন খোদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির অনেক সদস্য। নিম্নে এর পর্যালোচনা দেয়া হল।

গণভবন থেকে স্বীকৃতির ঘোষণা : যেমন আছে, যেমন চলছে
গত এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ গণভবনে দেশের শীর্ষ তিন শতাধিক আলেম-উলামাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, গণভবনে ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিকে ভিত্তি করে এই সমমান দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী আলেমদের উদ্দেশ্যে সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘প্রথমে একটা প্রজ্ঞাপন হবে। তারপর আপনারা যেভাবে চান সবকিছু মিলিয়ে একটা আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে। কাজ আপনারা আপনাদের মতো করে করবেন। সরকার কোনরূপ হস্তক্ষেপ করবেনা। সিলেবাস প্রণয়ন, কারিকুলম, মূলনীতি আলেমরাই তৈরি করবেন। সরকার কেবল সনদের মান প্রদান করবে।’

নোট: প্রধানমন্ত্রীর উদার চিন্তার পরও মূলত কওমি আলেমদের অনৈক্য ও কয়েকজন ব্যক্তির হীন স্বার্থের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে দূরে সরে গেছে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির ভবিষ্যত। স্পষ্ট অনুমেয় যে, স্বীকৃতি সম্পূর্ণভাবে স্বকীয়তা হারিয়েছে। এমনটাই মিডিয়াকে বলছেন কওমি মাদরাসার বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের দ্বায়িত্বশীলরা।

যেভাবে যাত্রা শুরু
স্বীকৃতি ঘোষণার সাথে সাথে সারা দেশের কওমি অঙ্গনে ভিন্ন এক আমেজ সৃষ্টি হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই খুশির জোয়ারে ভাসতে থাকে। পরে ১৭ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। গঠন করা হয় আল হাইয়াতুল উলইয়া নামে দেশের ৬টি শিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ে সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড। এই বোর্ডেরই অধীনে পরবর্তীতে ১৫ ই মে থেকে সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একযোগে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ২০হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং সময়মত ফলাফলও প্রকাশ হয়। এসময় আল হাইআতুল উলইয়া মাওলানা সামসুল ইসলামকে সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। নতুন অফিসও নেয়া হয়।

নোট: যেখানে নতুন সরকারি অফিস নিতে বেফাকের আপত্তি ছিল, সেখানে সরকারের অনুদান গ্রহণ, আলেমদের হাতছাড়া করার প্রক্রিয়ায়  নতুন নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন খোদ বেফাকের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

শালা-দুলাভাইসহ কয়েকজন নেতার হাতে স্বীকৃতি প্রক্রিয়া
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আহাকের ফল প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় ষড়যন্ত্রের নতুন খেলা। অফিস সচিব ও ৫ বোর্ডকে বাদ দিয়ে বেফাকের কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির মন মতো স্বীকৃতি বাস্তবায়নের কাজ চলতে থাকে। তাদের নতুন রাজনৈতিক মিশনের হাতিয়ার হয়ে উঠছে কওমি সনদের স্বীকৃতি- নানা সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। হাইআতুল উলইয়ার সংবিধান ও খসড়া তৈরিতে ৬ বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে বেফাকের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে বেফাকের সহ-সভাপতি মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন, বেফাকের মুফতী নুরুল আমীন, মাওলানা ইসমাইল বরিশালী, মাওলানা অসিউর রহমান।
তারপর থেকে স্বীকৃতির এই প্রক্রিয়া নিয়ে বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও তাঁর শালা বেফাকের কর্মকর্তা মুফতী নুরুল আমিন অনেকটা এককভাবে কাজ করতে থাকেন নিজেদের মতো করে।

নোট: ৫ বোর্ডকে পাশ কাটানো। বেফাকের সিদ্ধান্তের বাইরে কওমি বিরোধীদের সাথে আল্লামা শাহ আহমদ শফির নাম ভাঙিয়ে গোপন বৈঠক কওমি স্বীকৃতিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। গঠনতন্ত্র এবং বৈঠক সম্পর্কে দু‘চারজন ছাড়া আর কেউ জানেন না। এমনকি স্বীকৃতি সংক্রান্ত কাজে জড়িতরাও। শালা-দুলা ভাই নিয়ন্ত্রিত কওমি সনদের স্বীকৃতি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রসালো ও তিক্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে। উঠে আসছে বেফাক সংশ্লিষ্ট কিছু রাজনীতিকের আগাম নির্বাচন প্রস্তুতির গোপন খবর। মনোনয়ন বাণিজ্যের এসব খবর একেবারে উড়িয়েও দেয়া যায় না। নানা সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

নতুন (খসড়া) গঠনতন্ত্র!
গত ০২ অক্টোবর’১৭ ঢাকার পীরজঙ্গী মাদরাসায় ‘সদেনর মান বাস্তবায়ন কমিটি’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। বৈঠকে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশে’র একটি (খসড়া) গঠনতন্ত্র পাশ হয়েছে বলে বৈঠকের রেজুলেশনে (ধারা ৭) উল্লেখ করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে মোট ৮টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর অন্যতম হলো, কওমি মাদরাসায় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও যুগোপযোগী করা, সনদ প্রদান, বহিঃবিশ্বের দীনি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সংযোগ ও উচ্চশিক্ষা-গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও আল-হাইআতুল উলইয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদান ইত্যাদি।

নোটঃ গঠনতন্ত্রের অধিকাংশ জায়গাই অস্পষ্ট। সরকারি নিয়ন্ত্রণ, অনুদানগ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গঠন প্রক্রিয়া কেমন হবে, সেখানে তা উল্লেখ নেই। সরকারী, বেসরকারী সবধরনের ইউনিভার্সিটিতে অন্তত ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয় সরকার। তাহলে কি শেষমেশ আমরা সরকারের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছি? এমন সেন্দেহের প্রশ্ন দানা বাঁধছে ইউজিসির নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে। এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করছেন কওমি শিক্ষাবিদরা।

জানেন না অনন্য বোর্ডের দায়িত্বশীলরা

আশংকার কথা হল, এই গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে পুরোই অন্ধকারে ৫টি বোর্ডের সকল ত্বায়িত্বশীল। সংবাদমাধ্যমে তারা বলেছেন কিছুই জানেন না। এমনিভাবে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি ও বেফাকের অনেকেই জানেন না- কী আছে সেই গঠনতন্ত্রে।
বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা শামসুলক, তানযিমুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা আরশাদ রাহমানী ও জাতীয় দ্বীনী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতী মোহাম্মদ আলী, আযাদ দ্বীনী এদারা সিলেটের  মাওলানা জিয়াউদ্দীনসহ কেউই এ ব্যাপারে সম্যক অবগত নন।

এছাড়াও গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় ইউজিসি ভবনে কওমি সনদের স্বীকৃতি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি ভেঠক নিুষ্ঠিত হয়। যেখানে কোনোেআলেম প্রতিনিধি ছিলেন না বলে জানা যায়।

নোট: এই হীন মানসিকতা থেকে দূরে সরে না আসলে, সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ না করলে কওমি অঙ্গনের জন্য কলঙ্কিত সময় অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন কওমি মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকরা।

ইউজিসি কী? স্বীকৃতি সেখানে কেন?
গত তিন দিন ধরে কওমি সনদের স্বীকৃতি আলোচনায় উঠে এসেছে ইউজিসি। ইউজিসি হল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। এটি বাংলাদেশের সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবোর্চ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। মূলত সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এই সংস্থাটি সমন্বয়সাধন করে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সমন্বয়, নিয়ন্ত্রন, পরিচালনা এবং বিকাশ ঘটানো। সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মানরক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণও এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব।

নোটঃ ইউজিসি যেহেতু উচ্চশিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণকারি প্রতিষ্ঠন, তাই কওমি সনদের কাজ তাদের হাতে যাওয়া মানেই নিয়ন্ত্রণের জালে আটকা পড়বে কওমির সতন্ত্র ঐতিহ্য। এমনটাই বলছেন স্বীকৃতি নিয়ে প্রথম থেকে কাজ করছেন মাওলানা এহিয়া মাহমুদসহ অনন্যরা।

কারিকুলাম কমিটিতে কারা আছেন?
কওমি শিক্ষা কারিকুলাম ও আইনি কাঠামো তৈরির জন্য সরকার ৯ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চতর কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিতে রয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা ইউজিসি থেকে প্রফেসর আবদুল মান্নান (চেয়ারম্যান), প্রফেসর ড. মো. ইউসুফ আলী মোল্লা, প্রফেসর ড. দিল আফরোজ বেগম, প্রফেসর ড. মো. আখতার হোসাইন, প্রফেসর ড. মো. শাহ নেওয়াজ।

নোট: ববিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা ইউজিসির কাজই যেহেতু উচ্চশিক্ষাকে নিয়ন্ত্রিত করা, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিফলনের বাইরে ইউজিসির হাতে কওমি শিক্ষা কারিকুলামকে তুলে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন নেই। এ প্রক্রিয়াটিই অগ্রহণযোগ্য। ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে কারিকুলাম ও আইনি কাঠামো তৈরি করার জন্য। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছিনে, কারিকুলাম তৈরি করবে আলেমরাই। এনিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তুপের মূখে এখন বেফাকের কয়েকজন নেতা।

ইউজিসির বাইরের তারা কারা? কেন গোপন বৈঠক!
ইউজিসির বাইরে থেকে এই কমিটিতে রয়েছেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

নোট: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে ৬সদস্য যেখানে থাকার সুযোগ নেই ,সেখানে কওমি সনদের কারিকুলাম তৈরি জিইউসির কমিটিতে বহিরাগত আরো তিনজন প্রবেশের সুযোগ পেলেন কোন যুক্তিতে? বাহিরের তিনজন কারা? আলেমরা নেই কেন? আলেমদের উপস্থিতি ছাড়া সিলেবাস কারিকুলাম অকওমিরা কিভাবে করবেন? তাদের বুঝানোর জন্য আনা হয়েছে ইফা ডিজি সামিম আফজালকে? তিনি কওমি সিলেবাসের কী বুঝেন? কওমির সাথে তার কী সম্পর্ক? ইউজিসির চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের সাথে কোনো বৈঠক না করে কেন বেফাক মহাসচিব ইফা ডিজির সাথে গোপন বৈঠক করে কারিকুলাম ও গঠনতন্ত্র তুলে দিলেন? এই বৈঠক কি হাইআতুল উলইয়ার সিদ্ধান্তের আলোকে হয়েছিল?

এই বিষয়গুলোতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নাকি ভাতিজার সরকারি চাকুরির কারণে কওমির হাজার বছরের স্বাতন্ত্র বৈশিষ্টকে তিনি তুলে দিলেন অন্যদের হাতে এমন খবর এখন সবর্ত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সমালোচনার ঝড় বইছে সারারা দেশ থেকে বেফাক মহাসচিব আব্দুল কুদ্দুসের উপর।

ইউজিসি তুলে দিচ্ছে আরবী বিশ্বিদ্যারয়ের হাতে!
গতকাল একটি টিভি চ্যানেল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, ইসলামি আরবি বিশ্বিবদ্যালয় কওমি ও আলিয়া স্তরের উচ্চশিক্ষার সনদ দেবে। একনেকে এ সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রকল্পও মুঞ্জুর করা হয়েছে। আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণও করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

নোট: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা ইউজিসি যেহেতু বাংলাদেশের সকল সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে, তাই কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতি্ঠোন আরবি বিশ্ববিদ্যলয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়, তাহলে আগামিতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এর সিলেবাস, কারিকুলাম ও নিয়ন্ত্রণে কওমি মাদরাসা চলতে বাধ্য হবে। তখন আলিয়া ও কওমির মাঝে প্রার্থক্য থাকবে না। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রণ থাকবে আপনাদের হাতে, সরকার কেবল সাটির্ফিকেটের মান দিবে। কিন্তু বাস্তবে মোড় অন্যদিকে ঘুরছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক মহল।

৩ একর জায়গা গ্রহণ মূলনীতি বিরোধী
প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন হাইআতুল উলয়ার জন্য কেরানীগঞ্জে ৩ একর জমি প্রস্তাব করেছেন। হাইআতুল উলইয়ার গত ২ তারিখের বৈঠকে জমির আলোচনা ওঠে এবং মূল্যের বিনিময়ে তা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

নোট: হাইআতুল উলইয়ার নীতিনির্ধারকদের অনেকেই জানেন না, জায়গা গ্রহণের কথা। উসুলে হাশতেগানা বা অষ্টমূলনীতির অন্যতম ছিল সরকারের এমপিওভুক্তি না হওয়া বা সরকারি অনুদান গ্রহণ না করা। এতে করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হবার সম্ভাবনা থাকে। সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের বাইরেরে জায়গা গ্রহণ হতে পারে আত্নঘাতি সিদ্ধান্ত। এ জমি গ্রহণকে অনেকেই দেওবন্দের অষ্ট মূলনীতির পরিপন্থী মনে করছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘সরকার ও সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ অত্যাধিক ক্ষতিকর মনে হয়’। এতে হাইআতুল উলইয়ার উপর সরকারের প্রভাব বাড়বে বলে মনে করছেন হাইয়াতুল উলিয়ার অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ।

আমরা এর দায় এড়াতে পারবো?
স্বকীয়তা বজায় রেখে মান বা স্বীকৃতি অর্জিত হলে এ শিক্ষার শোভাবর্ধন হবে। এজন্য প্রথম থেকেই আমরা বলে এসেছি- বিচক্ষণ ও সচেতন আলেমদের মাধ্যমে স্বীকৃতির কাজ করতে হবে। সরকারকে প্রভাবিত করেন এমন আলেমম ছাড়া অন্যদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থকে সামনে রেখে, আল্লামা আহমদ শফি দা.বা এর নাম ব্যবহার করা, তাকে না জানিয়ে কাজ করা হবে কওমি স্বার্থ ববিরোধী এবং স্বকীয়তা বিনষ্টকারি। হতাশা জনকখবর হল যারা প্রথম দিকের কওমি আলেমদের নিয়ে গঠিত কমিটি বাতিলের জন্য চেতনায় কওমি মমাদরাসার ব্যানারে এবং নানাভাবে সোচ্চার ছিলেন, আজ তারা নিরব। ইউজিসি ও সামিম আফজাল সাহেবের হাতে কওমির কারিকুলাম থাকার পরেও তারা ঘুমে অবচেতন এক রহস্যময় কারণ বলে মনে হচ্ছে। হীন স্বার্থসিদ্ধি, রাজনৈতিক এবং আমাদের ইখতিলাফের কারণে যদি কওমি শিক্ষাব্যবস্থা শোভা বঞ্চিত হয়, এ প্রজন্মের চোখে আমাদের সম্মানজনক অবস্থান থাকবে কি? কিংবা এ দায় আমরা এড়াতে পারবো কি?

উৎস. কওমিকণ্ঠ ডটকম

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...