আহমাদুল্লাহ:
২৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সৌদি আরবে ঈদের দিন। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর দক্ষিণ দাম্মাম ইসলাম প্রচার অফিস থেকে আসা আমরা ৪৮ জন বাংলাদেশি অবস্থান করছিলাম লোকাল হজ এজেন্সি আল রাজেহির তাঁবুতে, যা ৫২২/৯ মুজদালিফার শুরু এবং মিনার ঠিক শেষে। মিনার আল ওয়াদি হাসপাতালের বিপরীতে অবস্থিত। সকাল পৌনে ৭টায় হজের অন্যতম কাজ জামারাতে কঙ্কর মারার উদ্দেশে আমরা ৫২২নং রোড ধরে হেঁটে চলতে থাকি। আমরা জামারাতের যে রোডটি ধরে অগ্রসর হয়েছি সেটা ছিল খুব সম্ভব সূক আল আরব সড়ক। সুবিশাল এই সড়ক তখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ। দলে দলে মানুষ হেঁটে জামারাতের দিকে ছুটে চলেছেন। কিছুদূর যাওয়ার পর দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আমাদের ডান পাশের একটি সরু পথ ধরার নির্দেশ দিলেন। পরিকল্পনা ছিল, সেই ছোট্ট সড়কটি হয়ে কিং ফাহাদ মহাসড়কে ওঠার, যেটি জামারাতে গিয়ে মিশেছে। এই রোডটি হলো দু’পাশে সারিবদ্ধ তাঁবুর মধ্যবর্তী পথ, যা মূলত তাঁবুর লোকদের চলাচলের জন্য। স্বভাবতই সেই পথটি ফেলে আসা মহাসড়কের চেয়ে অনেক সরু। বিশাল সড়কভর্তি লোকগুলো যখন মহল্লাহর সরু পথে ডাইভার্ট হলো, তখনই শুরু হলো প্রচণ্ড চাপাচাপি ও বর্ণনাতীত ভিড়। এদিকে সে সময়ের তাপমাত্রা ছিল হজের যে কোনো দিনের চেয়ে বেশি। ফলে অনেক হাজি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের পথচলার গতিও শ্লথ হয়ে আসতে লাগল। এভাবে পথ যত এগোতে থাকে, ভিড় ততই বাড়তে থাকে।
ঘটনাস্থল অর্থাৎ ২০৪নং সড়কে কৃষ্ণবর্ণের সুঠাম দেহী আফ্রিকান ও এরাবিয়ান হাজিদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আর হজ বা ওমরাহে আসা যে কোনো লোকই জেনে থাকবেন, নাইজেরিয়ান, কেনিয়ান ও অন্যান্য দেশি কৃষ্ণাঙ্গ হাজিরা সাধারণত অনেক বেশি হুড়োহুড়ি করে চলতে অভ্যস্ত। দুর্ঘটনাস্থল (২০৪নং রোডে) তাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়াটাও ভিড়ের ভয়াবহতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর মৃতদের মধ্যে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া থেকেও বোঝা যায় যে, এই পথে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
এই পথে ইরানি হাজিদের গ্রুপগুলোর আধিক্যও চোখে পড়ার মতো ছিল। পুরো পথে প্রায় শতকরা ৩০ জনই ছিলেন ইরানি হাজি! ইরানি হাজিদের একটি চরিত্র হলো, কখনোই তারা গ্রুপবিহীন চলাফেরা করেন না। কোনো ইরানিকে বিশেষ করে হজ বা উমরাহর কোনো কাজ সম্ভবত কেউ একা করতে দেখেননি। তাদের প্রতিটি গ্রুপকে ঘিরে থাকে শক্তিশালী কিছু লোক। যারা অন্যদের ঠেলাঠেলি করে হলেও নিজেদের গ্রুপকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয় না। ফলে স্বাভাবিক পথচলা অনেক সময় রুদ্ধ হয়ে যায়। মিনা ট্র্যাজেডির ঘটনাস্থল ২০৪নং রোডেও তাদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি এবং যথারীতি গ্রুপ আকারে। এটিও অতিরিক্ত ভিড় সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
প্রচণ্ড ভিড় ও চাপাচাপির মধ্যে আমরা চলতে থাকি। এরই মাঝে কিছু দুর্বল লোক পেছনের চাপ সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলেন। এমন পরিস্থিতিতে আশপাশের সব তাঁবুর গেটগুলো ছিল বন্ধ। আমরা বহু চিৎকার করে গেট খুলে পথের বৃদ্ধ ও নারীদের অন্তত ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিতে বললেও সম্ভবত হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হয়ে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির ভয়ে তারা গেট খোলেনি।
অন্যদিকে কর্তব্যরত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এখানে হতাহতের খবর পেয়ে উদ্ধারের জন্য বিপরীত দিক থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করানোর ব্যর্থ চেষ্টা শুরু করল। ফলে সামনের লোকগুলোর বের হওয়ার পথও অনেকটা রুদ্ধ হয়ে গেল। আর তখনই কয়েক মিনিটের মধ্যে পেছন থেকে আসা মানুষের স্রোত থমকে যাওয়া লোকগুলোর ওপর একের পর এক আছড়ে পড়তে থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই রচিত হয়ে গেল ইতিহাসের বিষাদময় ট্র্যাজেডিক উপাখ্যান। আল্লাহর শোকর আমি আহত হয়ে এখনও বেঁচে আছি_ আলহামদুলিল্লাহ।
ঘটনাস্থল অর্থাৎ ২০৪নং সড়কে কৃষ্ণবর্ণের সুঠাম দেহী আফ্রিকান ও এরাবিয়ান হাজিদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আর হজ বা ওমরাহে আসা যে কোনো লোকই জেনে থাকবেন, নাইজেরিয়ান, কেনিয়ান ও অন্যান্য দেশি কৃষ্ণাঙ্গ হাজিরা সাধারণত অনেক বেশি হুড়োহুড়ি করে চলতে অভ্যস্ত। দুর্ঘটনাস্থল (২০৪নং রোডে) তাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়াটাও ভিড়ের ভয়াবহতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর মৃতদের মধ্যে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া থেকেও বোঝা যায় যে, এই পথে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
এই পথে ইরানি হাজিদের গ্রুপগুলোর আধিক্যও চোখে পড়ার মতো ছিল। পুরো পথে প্রায় শতকরা ৩০ জনই ছিলেন ইরানি হাজি! ইরানি হাজিদের একটি চরিত্র হলো, কখনোই তারা গ্রুপবিহীন চলাফেরা করেন না। কোনো ইরানিকে বিশেষ করে হজ বা উমরাহর কোনো কাজ সম্ভবত কেউ একা করতে দেখেননি। তাদের প্রতিটি গ্রুপকে ঘিরে থাকে শক্তিশালী কিছু লোক। যারা অন্যদের ঠেলাঠেলি করে হলেও নিজেদের গ্রুপকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয় না। ফলে স্বাভাবিক পথচলা অনেক সময় রুদ্ধ হয়ে যায়। মিনা ট্র্যাজেডির ঘটনাস্থল ২০৪নং রোডেও তাদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি এবং যথারীতি গ্রুপ আকারে। এটিও অতিরিক্ত ভিড় সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
প্রচণ্ড ভিড় ও চাপাচাপির মধ্যে আমরা চলতে থাকি। এরই মাঝে কিছু দুর্বল লোক পেছনের চাপ সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলেন। এমন পরিস্থিতিতে আশপাশের সব তাঁবুর গেটগুলো ছিল বন্ধ। আমরা বহু চিৎকার করে গেট খুলে পথের বৃদ্ধ ও নারীদের অন্তত ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিতে বললেও সম্ভবত হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হয়ে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির ভয়ে তারা গেট খোলেনি।
অন্যদিকে কর্তব্যরত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এখানে হতাহতের খবর পেয়ে উদ্ধারের জন্য বিপরীত দিক থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করানোর ব্যর্থ চেষ্টা শুরু করল। ফলে সামনের লোকগুলোর বের হওয়ার পথও অনেকটা রুদ্ধ হয়ে গেল। আর তখনই কয়েক মিনিটের মধ্যে পেছন থেকে আসা মানুষের স্রোত থমকে যাওয়া লোকগুলোর ওপর একের পর এক আছড়ে পড়তে থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই রচিত হয়ে গেল ইতিহাসের বিষাদময় ট্র্যাজেডিক উপাখ্যান। আল্লাহর শোকর আমি আহত হয়ে এখনও বেঁচে আছি_ আলহামদুলিল্লাহ।
সুত্র: সমকাল