কমাশিসা ডেস্ক: আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে তুরস্ক এবং রাশিয়া একযোগে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান। গত শুক্রবার ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, আঞ্চলিক ইস্যু ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে দুই দেশের একযোগে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এরদোগান বলেন, জ্বালানি খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অর্থনীতি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষার মতো ইস্যুগুলো প্রাধান্য পেতে পারে। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা সমস্যা সমাধানে রাশিয়া ও তুরস্ক একযোগে কাজ করছে। সিরিয়ায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরিতে উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ সজাগ ছিল। আমাদের এমন ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক কারও প্রত্যাশিত ছিল না।
পুতিন-এরদোগান বৈঠক শেষে ষষ্ঠ হাই লেভেল রাশিয়ান-তার্কিশ কোঅপারেশন কাউন্সিল-এর বৈঠকে অংশ নেবেন এরদোগান। এই বৈঠকে উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা যোগ দেবেন। এর আগে পুতিন-এরদোগানের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। এ সময় সিরিয়া ইস্যু এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার মতো বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। সিরিয়া প্রশ্নে তুরস্ক ও রাশিয়ার অবস্থান পরস্পরবিরোধী। ইতোপূর্বে আঙ্কারার পক্ষ থেকে প্রায়ই মস্কোর বিরুদ্ধে আসাদ সরকারকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ তোলা হতো। একপর্যায়ে রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় দুদেশের সম্পর্কে ফাটল দেখা হয়। পরে ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিহত বিমানচালকের পরিবারের কাছে ক্ষমা চান এরদোগান। মূলত এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোগান রাশিয়ার দিকে আরও ঝুঁকে পড়েন। এরদোগান মনে করেন ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পেছনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র হাত রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুর্কি নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অভ্যুত্থান চেষ্টায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। ফলে এরদোগান বুঝতে পেরেছেন সিআইএ ও ন্যাটো তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ফলে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে মৈত্রী পুনরুদ্ধারে আগ্রহী।
২০১৬ সালের আগস্টে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে এরদোগান বলেন, তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে আমাদের পশ্চিমা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন ছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারা চেয়েছিল এই অভ্যুত্থান সফল হোক। কিন্তু তুর্কি জনগণ সেটা হতে দেয়নি। তিনি বলেন, পশ্চিমারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেছে। তারা অভ্যুত্থানের পক্ষ নিয়েছে। ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর কোনো বিদেশি নেতা তুরস্ক সফর করেননি। অথচ ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে হামলার পর সংহতি জানাতে বিশ্বনেতারা সেখানে হাজির হয়েছিলেন। যাদের আমরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করতাম তারাই অভ্যুত্থানপন্থী সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়েছে। সন্ত্রাসীদের খোঁজে জার্মানিকে আমরা চার হাজারের অধিক ফাইল পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। যারা তুরস্কের গণতন্ত্র থেকেও বেশি চিন্তিত অভ্যুত্থানকারীদের ভাগ্য সম্পর্কে, তারা তুরস্কের প্রকৃত বন্ধু নয়। তবে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ফোন করে সহমর্মিতা জানানোর জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানান এরদোগান।
সিএনএন, আনাদোলু এজেন্সি, বিবিসি।