রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:১৭
Home / আন্তর্জাতিক / বদলে যাচ্ছে সিরীয় শিশুরা
যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো অভিজ্ঞতাই নেই সিরিয়ার ছোট শিশুদের। ছবি: এএফপি

বদলে যাচ্ছে সিরীয় শিশুরা

সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ ও সহিংসতার কারণে লাখ লাখ শিশু প্রচণ্ড মানসিক চাপের (টক্সিক স্ট্রেস) মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এতে বদলে যাচ্ছে তাদের আচরণ। অনেকে ভয়ে ঘন ঘন বিছানা ভেজাচ্ছে, নিজেদের ক্ষতি করছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করছে, আক্রমণাত্মক আচরণও করছে।আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে শিশুরা এমন তীব্র মানসিক চাপে ভুগছে। সিরিয়ার অনেক শিশুর সাক্ষাৎকার নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সংস্থাটি মনে করছে, শিশুদের এখনই মানসিক সহায়তা না দিতে পারলে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, ২০১১ সালে সিরিয়ায় শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত তিন লাখ প্রাণহানি ঘটেছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এটাই সবচেয়ে বড় পরিসরের জরিপ বলে দাবি করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন।
সেভ দ্য চিলড্রেন সিরিয়ার ১৪ গভর্নরেটের মধ্যে সাত গভর্নরেটের ৪৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। বিভিন্ন বয়সের শিশু, মা-বাবা, পরিচর্যাকারী, সামাজিক কর্মী, ত্রাণকর্মী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা অনেকটা এ রকম:

প্রায় সব শিশু এবং ৮৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করা বলছেন, বোমা ও শেল হামলা শিশুদের মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

দুই-তৃতীয়াংশ শিশু প্রিয়জনকে হারিয়েছে। তাদের বাড়িতে বোমা বা শেল হামলা হয়েছে। কিংবা যুদ্ধের কারণে স্বজনেরা আহত হয়েছে।

সাক্ষাৎকারদাতাদের ৭১ শতাংশ বলছেন, আশঙ্কাজনক হারে শিশুরা বিছানা ভিজিয়ে ফেলছে। যখন-তখন মূত্রত্যাগ করে দিচ্ছে। এসবই তীব্র মানসিক চাপ ও অস্থিরতার লক্ষণ।

৪৮ শতাংশ অভিভাবক বলছেন, তাঁরা এমন শিশুদের দেখেছেন, ভয়ে যাদের কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনেকের মধ্যে তোতলামির লক্ষণ দেখা গেছে।

অর্ধেক সাক্ষাৎকারদাতা বলছেন, শিশুরা সব সময় অথবা প্রায়ই বিমর্ষ থাকে।

সহিংসতার কারণে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছে ২৩ লাখ শিশু। পালাতে না পারা কমপক্ষে ৩০ লাখ শিশু, যাদের বয়স ছয় বছরের নিচে। তারা যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই দেখেনি।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আলেকজান্দ্রা চেন বলেন, প্রচণ্ড মানসিক চাপ শিশুদের মস্তিষ্ক ও শরীরের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। বয়স বাড়লে শিশুরা মাদকাসক্তি, মানসিক অসুস্থতার শিকার হতে পারে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের জ্যেষ্ঠ মানসিক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চিকিৎসক মার্সিয়া ব্রফি বলেন, যুদ্ধের কারণে শিশুদের স্থায়ীভাবে মানসিক ক্ষতি হতে পারে।

সিরিয়ার স্কুলশিক্ষক হিশাম (ছদ্মনাম) বলেন, দির আল জর এলাকায় যখন তাঁরা থাকতেন, তখন প্রথমে শেল হামলার শব্দ শুনে শিশুরা আনন্দ পেত। এটি তাদের কাছে একধরনের খেলা মনে হতো। কিন্তু যখন তাদের স্বজনেরা একে একে মারা যেতে থাকল, তখন তারা ভয়ার্ত হয়ে পড়ল। সারা দিন শিশুরা রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে। কারণ, তাদের স্কুল নেই। তাঁর বড় ছেলের বয়স নয় বছর। কিন্তু সে জানে না কীভাবে এক আর একে দুই হয়।

সাহায্যকারী সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, তারা শিশুদের মানসিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে। তবে এখনো খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখনো মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারে শিশুরা।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

সীমান্তে অভিবাসী শিশুদের তাড়াতেও কাঁদানে গ্যাস!

কমাশিসা: কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চারদিক। আতঙ্কে ছুটোছুটি করছে অনেকগুলি পরিবার। শিশুদের জাপটে ধরেছেন ...