শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:২৩
Home / প্রতিদিন / মিতুর পরিবারের মুখোমুখি বাবুল

মিতুর পরিবারের মুখোমুখি বাবুল

কমাশিসা : ‘সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি’- গতকাল সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অবসরে যাওয়া পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ট্যাটাস এটি। তিনি ওই স্টাটাসে কেন শ্বশুর-শাশুড়ি তার আগের বক্তব্য থেকে ফিরে এলেন। হঠাৎ করেই কেন শ্বশুরের বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন। এরকম নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বাবুল আক্তারের এই লেখার প্রেক্ষিতে তার শ্যালিকা শায়লা মোশাররফ বলেছেন নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বাবুল। মিতু হত্যার পর তাদের বাসায় থেকে নাটক করেছিলেন। বাসায় থাকাকালীনই তাকে সন্দেহ হয় তাদের। একের পর এক ধরা পড়ে পরকীয়ার বিষয়। সর্বশেষ বাবুল আক্তারের চট্টগ্রামের বাসা থেকেই মিতুর কিছু লেখা উদ্ধার করা হয়। যেখানে বাবুল আক্তারের সঙ্গে এক নারীর পরকীয়ার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এ বিষয়টি জানার পরেই বাবুল আক্তারের প্রতি নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তারপর শ্বশুড়ের বাসা ছেড়ে যাওয়া, সর্বশেষ ফেসবুকের স্ট্যাটাস দিয়ে সন্দেহটা বাড়িয়ে দিয়েছেন বাবুল- এমনটি মন্তব্য করে শায়লা মোশাররফ বলেন, এখন মনে হচ্ছে বাবুল আক্তারই আমার বোনকে খুন করিয়েছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন মিতুর পরিবারের মুখোমুখি বাবুল আকতার।
বাবুল আক্তার তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘অনেকের অনেক জানতে চাওয়া আমার কাছে। আমি কথা বলার জন্য মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে কারও বিকার নেই। তবে আমার নিরুত্তর থাকার সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে মনের মতো কাহিনী ফাঁদতে ফাঁদতে পরকীয়া থেকে খুন পর্যন্ত গল্প লেখা শেষ করে ফেলেছেন অনেকে।’ পরিবার, পরিজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা ভেবে তিনি এসব বলতে বাধ্য হচ্ছেন জানিয়ে লিখেছেন, বাচ্চা দুটো হয়েছে তাদের মায়ের মতো। ছিমছাম সাজানো ঘর ছেড়ে ঢাকায় বাবার বাড়ি বেড়াতে আসলে মিতু চট্টগ্রামে নিজের বাসায় ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠতো। ছেলেমেয়ে দুটোও কিছুদিনের মধ্যেই নানার বাড়ি ছাড়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠতো। কিন্তু সন্তান আমার হলেও তাদের উপর নানা-নানীর অধিকারটুকু আমি বিলীন করতে চাইনি। ভেসে যাওয়ার দিনগুলোতে তারা (আমার শ্বশুরপক্ষ) আমার আর আমি তাদের আঁকড়ে ছিলাম। তাই ছেলেমেয়ে নিয়ে দূরে সরে গিয়ে আমি অকৃতজ্ঞ হতে চাইনি। যত কষ্ট আর অস্বস্তিই হোক বাচ্চাদের নানা-নানীর কথা ভেবে আমি তাদের ঘরেই ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।’
তিনি লিখেছেন ছেলে-মেয়েদের কথা ভেবে তার বাসায় কখনও ক্যাবল লাইন রাখতেন না। কিন্তু মিতুর মৃত্যুর পর নানার বাড়িতে তার বাচ্চাদের দিন শুরু ও শেষ হতো স্টার জলসা দেখে। তিনি লিখেছেন, ‘তার সন্তানেরা তাদের নানার বাসায় সকাল সাতটায় জেগে টিভিতে সিরিয়াল দেখে দেখে বেলা এগারটায় নাশতা খেতে পেত। আমরা এ ধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত ছিলাম না।’
তিনি লিখেছেন যেদিনই বাইরে বের হতেন ফিরে দেখতেন তার ছেলে আমার মুষড়ে আছে। তিনি লিখেছেন, ‘বাইরে থেকে ফেরার পর এক মধ্যরাতে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটা আমায় প্রশ্ন করে- বাবা, কান্না চেপে রাখলে কী বুকে ব্যথা হয়? আমার বুকে এত ব্যথা করে কেন? আমি তাকে বুকে জড়িয়ে শান্ত করে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? সে বলল, নানা-নানী সারাদিন আম্মুর কথা বলে আমার খুব কান্না আসে। কিন্তু কান্না করতে পারি না, আমার বুকে ব্যথা করে। তারপর আমাকে বলল যেন তাকে চট্টগ্রামের বাসার মতো সুন্দর বাসায় নিয়ে যাই, দু’মাসের মধ্যেই।’
ওই বাড়িতে অস্বস্তির কারণ হিসেবে ওই লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন, চার বেডরুমের ঘরটিতে মোট তিনটি পরিবার থাকে। তিনি লিখেছেন, মিতু মারা যাওয়ার পর আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে শ্বশুরঘরের একটি রুমে থাকতাম। ঘরটা যেন আরো ঘিঞ্জি হয়ে উঠল। শ্বশুরঘরের লোকজনেরও আরো কষ্টে পড়তে হল। জন্মের পর থেকে যে সন্তানদের আমরা সুবচনে অভ্যস্ত করেছিলাম তারা মায়ের মৃত্যুর পর চারপাশ থেকে গালমন্দ শিখতে শুরু করল। এভাবেই দিন কাটছিল। মাঝে আর বাসা পরিবর্তন নিয়ে ছেলের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি, ভাবলাম হয়ত সে ভুলে গেছে। কিন্তু হঠাৎ একদিন ছেলে আমাকে টেনে ক্যালেন্ডারের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল-বাবা, আজ তোমার দু’মাসের সময় শেষ। আমি অবাক হয়ে দেখলাম ছেলে আমার দু’মাস ধরে ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে দিন গুনছিল নানার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার। তারপর আমি ছেলের কাছ থেকে আরো ১৫ দিন সময় চেয়ে নিলাম। সবদিক বিবেচনা করে আমি শ্বশুর-শাশুড়িকে জানালাম যে বাচ্চারা এই পরিবেশে অনভ্যস্ত এবং থাকতে চায় না, তাই তাদের নিয়ে সুন্দর পরিবেশে থাকা প্রয়োজন। তারা খুব সুন্দর সমাধান দিলেন। বললেন তাদের ঘরের উপরেই আরো ঘর তৈরি করতে আমি যেন ১০ লাখ  টাকা দেই এবং সেখানেই থাকি। আমি যে ১০ টাকার লোকও নই, একথা বোঝানোর মতো সাধ্য আমার ছিল না। আর ঘর ঘিঞ্জি না হওয়ার সমাধান স্বরূপ বললেন, যেন আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন কেউই আমার কাছে না আসে। আমার শ্বশুর বললেন, হয় আমাকে আমার বাবা-মা ছাড়তে হবে, না হয় শ্বশুর-শাশুড়ি ছাড়তে হবে। আমি কী মরে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম? কী জানি! তবে আমি চুপ ছিলাম।’
বাবুল আক্তার লিখেছেন, ‘মিতুর সদ্য এসএসসি পাস করা ১৬ বছর বয়সী খালাতো বোনকে (যে তার পরিবারসহ মিতুর বাবার বাড়িতেই থাকে) আমার ছেলেমেয়েকে ‘আম্মু’ ডাকা শেখানো হয়েছে এবং আমাদের সবকিছুর তদারকিও সেই বাচ্চা মেয়েটিকে দিয়ে করানো হয়। একদিন ছেলের স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে মায়ের ভূমিকায় পাশে এসে বসে মেয়েটি। বিভিন্ন সময়ে তাকে এগিয়ে দেয়া হতো বাচ্চাদের মায়ের ভূমিকায়। রাতে ফিরে দেখতাম ছেলেমেয়ে নিয়ে সে আমার ঘরেই আছে। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ায় আমি এতটা বিকারগ্রস্ত হইনি যে, একটা ইন্টার পড়ুয়া ১৬ বছরের বাচ্চামেয়েকে বিয়ে করে আমার বাচ্চাদের মা বানাতে হবে। তাদের একটাই কথা, শ্বশুরের বাড়িতেই নতুন ঘর বাঁধতে হবে এবং সেখানেই থাকতে হবে। আমার ঐ সময়কার অনুভূতি কোনো শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে দিনদিন এসব আচরণ এতটাই বিঁধতে লাগল যে, আমি আমার দ্বিমত প্রকাশের জন্য কোন শব্দ না খুঁজে বরং একটা চাকরি ও বাসা খুঁজে নিলাম। আমার শ্বশুর পক্ষকে জানিয়েই বাসা নিয়েছি এবং এতে তারা ভীষণ মনঃক্ষুণ্নও হয়েছিলেন। বলেছিলেন এর পরিণাম হবে খারাপ এবং আমাকে পচিয়ে ছাড়বেন তারা। তবে প্রস্থানে আমি চুপই ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।’
মিতু হত্যার তদন্ত সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘বাস্তব জীবনটা কোনো চলচ্চিত্র না। আমি সুপারকপের মতো উঠে গিয়ে স্ত্রীর খুনি বের করে ফেলব! সবকিছুর নিয়ম থাকে, প্রক্রিয়া থাকে। তদন্ত তদন্তের নিয়মে চলছে এবং সেই প্রক্রিয়ায় আমার যতটুকু প্রয়োজন অংশগ্রহণও রয়েছে। আমাকে যখনই তদন্তের প্রয়োজনে ডাকা হয়েছে আমি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়েছি, কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। বাদীর কাজ সাক্ষীকে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া, এটা আমি বুঝতে পারিনি! আমার মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি কাউকেই তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার মতো বিলাসিতা করার সুযোগ আমার নেই। কারণ মায়ের মৃত্যুর পর থেকে একরাতও বাচ্চারা আমায় ছেড়ে থাকেনি। জন্মের পর থেকেই তারা রাতে আমার সঙ্গে ঘুমিয়েই অভ্যস্ত। আমাকে কয়েক ঘণ্টা না দেখলেই কেঁদে অস্থির হয় তারা। আমাকে দিনের মধ্যে কয়েকবারই বাসায় যেতে হয়, অনেক সময় ছেলেমেয়েকে নিয়েই অফিসে যেতে হয়। তাই প্রথমে আমার শ্বশুরের পছন্দমতো তার বাড়ির কাছের স্কুলটিতে ভর্তি করালেও ছেলের দিকে তাকিয়ে তাকে আবার আমার অফিসের কাছাকাছি একটি স্কুলে ভর্তি করাই।’

শ্বশুরের ক্ষিপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে বাবুল আক্তার লিখেছেন, ‘আমার মুখ্য অপরাধের তালিকায় বাচ্চামেয়ে বিয়ে না করে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে নিজের মতো থাকাটাই হয়ত একনম্বরে জায়গা পাবে। না হয় মিতুর মৃত্যুর পর তার মা কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, ১৪ বছরের সংসারে অশান্তি হয়নি বাবুল-মিতুর। আমার শাশুড়ি আরো বলেছিলেন, বাবুল হইল ফেরেশতা। এমনকি গত মাসে (২৫ জানুয়ারি, ২০১৭) তিনি চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি বাবুলকে সন্দেহ করি না। মিতুর বাবা মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে নানা অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে বলেছিলেন, এসব কথা ভিত্তিহীন।  ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য এসব রটানো হচ্ছে। আমার শ্যালিকা শায়লা বলেছিল, ভাইয়া আর আপুর সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। আর কয়েকমাস গড়াতেই আজ ভিন্ন কথন!’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো লিখেছেন, ‘মিতু মারা যাওয়ার আট মাস পর তার মা-বাবা আর বোনের মনে পড়ল আমি মিতুকে অবহেলা করেছি, তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি দিনের পর দিন, প্রতিনিয়ত পরকীয়ার সম্পর্ক চালিয়ে গিয়েছি, মিতু আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল এবং মিতু নিতান্তই অপারগ হয়ে আমার সংসারে ছিল! আর এই আট মাসে একবারও মিতুর মায়ের মনে হয়নি যে মিতুর মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে আমার আচরণ বদলে গিয়েছিল। মিতু আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল এটা ২/৩ মাস আগে জানলেও গত মাসেই চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলে এসেছেন তারা আমাকে সন্দেহ করেন না। আমার অবুঝ দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে নাকি তারা চুপ ছিলেন। তাহলে কী এখন আমার সন্তানেরা সব বুঝতে শিখেছে, আট মাসেই সাবালক হয়ে গেছে? ছেলেমেয়ের প্রতি মায়া উবে গেছে?

আমি বুঝলাম না কোনো মা-বাবা তাদের মেয়ের স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক আছে জেনেও কীভাবে মেয়েকে ওই স্বামীর সংসারে রেখে দেয়! অন্তত যৎসামান্য চেষ্টাও কী কেউ করে না তার মেয়েকে সুখী করার? আর যেই মেয়ের স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত, যার সাথে দিবানিশি অশান্তির সংসার ছিল, সে খুন হওয়ার পর আট মাসেও তার মা-বাবার একটিবারের জন্যও মনে হলো না যে স্বামীই তার হত্যাকারী? বরং ছয় মাস সেই জামাতাকে নিজের ঘরে রেখে তাদেরই আরেক মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইলেন!
নিজের পরকীয়ার অভিযোগ সম্পর্কে বাবুল আক্তার লিখেছেন, ‘আরো কত গল্প যে শুনতে হবে জানি না। কারণ, আমার শ্বশুর তো বলেই রেখেছেন যে আমার দেশে-বিদেশে পরকীয়া আছে। তাদের কথা শুনে আমার এখন মনে হয় পরকীয়া ছিল আমার ফুলটাইম পেশা, আর চাকরি ছিল পার্ট টাইম! আমার শ্বশুরপক্ষ তাদের কথা রেখেছেন, আমাকে অপমানিত করার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি। ‘তোমারে পচাইয়া ছাড়মু, শান্তিতে থাকতে দিমু না।’- কথাটি অক্ষরে অক্ষরে রাখার নিরন্তর সাধনা করে যাচ্ছেন তারা। আমি যে বড়ই অবাধ্য জামাতা, আমার মা-বাবা, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ষোড়শী শ্যালিকাকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতেই ঘর তৈরি করে ঘরজামাই হবার মতো বাধ্য যে আমি নই!’
বাবুল আক্তার লিখেছেন, ‘মিতু যেদিন মারা যায় সেদিন সারাদেশই ছিল দিশাহারা। আমার শাশুড়ি ও শ্যালিকাও (শায়লা) ছিল শোকে বিহ্বল। তারা সেদিন দুঃখে মিতুর লাশ বাদ দিয়ে আমাদের আলমারী থেকে আমাদের সব কাপড়চোপড়, গয়নাগাটি আর জমানো কিছু টাকাপয়সা ব্যাগে ভরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসাতেই ব্যস্ত ছিল। তাছাড়া এর কিছুদিন পর তারা মিলাদ পড়ানোর নামে চট্টগ্রাম গিয়ে বাইরে থেকে মিস্ত্রি ডেকে নিয়ে আমার বাসার আলমারি ভেঙ্গে বাকি যা কিছু ছিল তাও নিয়ে আসে। পরে মিতুর ব্যবহৃত জামাকাপড় ও জিনিসপত্র তার আত্মীয়স্বজনদের ব্যবহার করতে দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম। মায়ের স্মৃৃতি হিসেবে বাচ্চা দুটোর জন্য আমার কাছে আর কিছুই নেই।’
তিনি লিখেছেন, ‘পৃথিবীর এমন একটি দম্পতি আমি দেখতে চাই যাদের মধ্যে মতবিরোধ এবং মনোমালিন্য হয় না। আমি কী আকাশের চাঁদই হাতে চেয়ে ফেললাম? হ্যাঁ, অতি অবশ্যই হ্যাঁ। আমি আগেও বলেছি, নির্ঝঞ্ঝাট সংসার দেবদূতেরও হয় না। আমার সংসারেও ছোট বড় রাগ অভিমান হতো, যেভাবে আর দশজনের হয়। সবাই নিশ্চয় এজন্য একে অন্যকে মেরে ফেলে না। তাছাড়া একে অন্যকে মেরে ফেলার জন্য কেউ চৌদ্দ বছর সংসার করে না। একে অন্যকে মেরে ফেলার জন্যই কী কেউ দুটি সন্তানের জন্ম দেয়?’ এভাবেই প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। আর পরকীয়া সম্পর্কে একজন ‘পাঠক’ হিসেবে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে কী না- জানতে চেয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘নিহত আকরামের বোন রিনি অভিযোগ করেছেন যে আমার প্রভাবে পুলিশ আকরাম হত্যার অভিযোগ থেকে আমার নাম বাদ দিয়েছিল। অথচ তিনি তখন আমার নামে কোনো অভিযোগই করেননি। রিনি তখন আদালতে অভিযোগ করেছিলেন যে আকরামের স্ত্রী তার ফুপাতো ভাই মুনের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরে আকরামকে খুন করে। ওই অভিযোগে আকরামের স্ত্রী, তার কথিত প্রেমিক মুন এবং আকরামের শ্বশুর-শাশুড়ির নাম উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া ঘটনার সময় আমি দেশেও ছিলাম না। এত বছর পর রিনি আগের সব অভিযোগ ভুলে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে তার ভাই হত্যার বিচার চাইতে গিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের (আমার শ্বশুর) কাছে। আর নিহত আকরামের স্ত্রী থাকেন মাগুরা এবং ঝিনাইদহে; আমার পদোন্নতির আগ পর্যন্ত আমি থাকতাম চট্টগ্রামে। আর আমার বছরে একবারও বাড়ি যাওয়ার মতো সময় সুযোগ হতো না। পরিচয় ছাড়া, যোগাযোগ ছাড়া, দেখা সাক্ষাৎ ছাড়াও যে পরকীয়া হয় এটা জানা ছিল না। আকরামের বোন অভিযোগ করেছেন যে ছেলের শোকে তার মা মারা গিয়েছেন। এখন আকরামের মায়ের মৃত্যুর দায়ও যদি আমার উপর চাপানো হয় আশ্চর্য হব না!! কারণ তিনি তো বিচার চাইতে গেছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের (আমার শ্বশুর) কাছে। এটা ঠিক যে মৃত আকরামের স্ত্রী মাগুরায় আমাদের একই এলাকায় থাকতেন এবং তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আকরামের রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়ে পারিবারিক বিরোধের কারণে সে আমার ছোট ভাইয়ের (পেশায় আইনজীবী এবং মাগুরায় থাকে) কাছ থেকে আইনি সহায়তা নিয়েছিল। যে ঘটনায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। একই এলাকায় থাকলে কিংবা বাবা-ভাইয়ের সাথে পরিচয় থাকলেই যদি পরকীয়া হয়ে যায় তবে আমার পরকীয়ার প্রেমিকাদের নাম লেখা শুরু করলে তা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ গোলার্ধে পৌঁছালেও শেষ হবে না।
যখনই আমি শ্বশুর-শাশুড়ির অমতে বাচ্চাদের নিয়ে আলাদা বাসায় আমার মা-বাবাকে নিয়ে থাকা শুরু করলাম, তখনই আমার শ্বশুর আমার পরকীয়ার খোঁজ পেলেন, ঠিক তখনই আমার শাশুড়ি মিতুর সঙ্গে আমার খারাপ সম্পর্কের কথা জানতে পারলেন, আর তখনই আকরামের বোন জানতে পারলেন তার ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে আমার পরকীয়া ছিল; তখনই তারা জানলেন চিত্রনাট্যের নাট্যকার ছিলাম আমি! আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর-শাশুড়ি হয়তো সেই নীতি অনুসরণ করেছেন, একটা মিথ্যা দশবার বললে তা সত্যে পরিণত হয়। তারপরও আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। কারণ, তারা তো আমার স্ত্রীর বাবা-মা, আমার সন্তানের নানা-নানী।’
তিনি মিতু হত্যার বিচার চেয়ে লিখেছেন, ‘আমি চাই আমার স্ত্রী হত্যার সঠিক বিচার হোক। সে আমার সন্তানদের মা, আমার পৃথিবীর ভিত ছিল সে। তাকে হারিয়ে আমি এবং আমার বাচ্চা দুটোর চেয়ে বেশি কষ্ট কেউ পেয়েছে বলে আমার বোধ হয় না। এখনও সামলে উঠতে পারিনি আমরা। বাচ্চাদের একটা স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরমধ্যেই যে যা ইচ্ছে বলছে, ছাপছে। আমার ছেলেটা যখন এসব সংবাদ পড়ে ও দেখে তখন তার মানসিক অবস্থাটা কী দাঁড়ায়? কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র কারও ব্যক্তিস্বার্থে করা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যারা কথা বলছেন, তারা আমার জায়গায় নিজেকে একবার রাখুন, নিজের সন্তানটিকে আমার ছেলের জায়গায় ভাবুন। তারপর কলম হাতে নিন।’ গতকাল ছিল বাবুল মিতুর ছেলের জন্মদিন। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আজ আমার ছেলের জন্মদিন, মাকে ছাড়া প্রথম জন্মদিন তার। কী ভাবছে সে মনে মনে? কতটা কষ্ট পাচ্ছে সে? এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায় কার?
এসব বিষয়ে বাবুল আক্তারের শ্যালিকা শায়লা মোশাররফ বলেন, যে বাসা বসবাসের অনুপযোগী বলা হচ্ছে ওই বাসাতে থেকেই বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন বাবুল আক্তার। আমাদের দু’তলা বাসায় বসবাসের যথেষ্ট সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এসব কুৎসা রটানোর কারণ একটাই নিজেকে রক্ষা করা। তিনি বলেন, বাবুল-মিতুর সন্তানরা আমাকেও আম্মু বলে ডাকে। আমার স্বামীকে পাপা বলে। তাই বলে কি আমরা মা-বাবা হয়ে গেলাম। মিতু আপু মারা যাওয়ার পর এই সন্তানদের আমরা আদর-সোহাগ দিয়ে রেখেছি। আমাদের খালাতো বোনটিও তাই করেছে। ওই বোনকে বাবুল আক্তারের সঙ্গে বিয়ে দেব তা কল্পনাও করিনি। বাবুল আক্তার আমাদের ওই বোনের জন্ম দেখেছে। খালা হিসেবে সন্তানদের যত্ম নিতো এটা কী তার অপরাধ। তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে যখন বাবুল আক্তার সম্পর্কে নানা তথ্য পাচ্ছিলাম আমরা। তখন বাবুল আক্তারের বাসা থেকে আমার বোনের হাতের লেখা কাগজ পাই। তা পাওয়ার পরেই আমরা বুঝতে পারি গায়িত্রী নামে এক নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরকিয়া সম্পর্ক ছিল  বাবুলের। তারা ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখতো। এসব জানার পরই আমরা বুঝতে পারি মিতু হত্যার সঙ্গে বাবুল জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি টের পেয়েই বাবুল আক্তার সন্তানদের নিয়ে আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যান। শায়লা বলেন, এখন মনে হচ্ছে বাবুল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি মিতু হত্যার সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...