শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৪:০৫
Home / কওমি অঙ্গন / ছাতক রণক্ষেত্র সংঘর্ষে নিহত ২

ছাতক রণক্ষেত্র সংঘর্ষে নিহত ২

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : ছাতকে ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে কওমি ও সুন্নী নামধারী ফুলতলি সমর্থকদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- শহরের বাগবাড়ি মহলার আব্দুল জব্বারের পুত্র আব্দুল বাছিত বাবুল ও ইসলামপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আজাদ মিয়ার পুত্র রুবেল মিয়া। এ ঘটনায় পুলিশসহ উভয় পক্ষের দেড় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অন্তত ৫০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে। সোমবার দুপুরে শহরের জালালিয়া আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ মাদ্রাসা হতে থানা রোড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে। দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় এক সময় গোটা শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।

সুন্নি সমর্থকরা ছাতক হাইস্কুল মাঠে খাদিমুল ইসলাম আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের প্যান্ডেল ভাঙচুর করে এবং কওমি সমর্থকরা হামলা করে জালালিয়া আলিম মাদ্রাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ফটক ভাঙচুর করে।

জানা যায়, রোববার জাউয়াবাজারে সুন্নী সমর্থকদের একটি সাটানো ব্যানার নামিয়ে ফেলায় সুন্নী ও কওমি সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এর জের ধরে ছাতক হাইস্কুল মাঠে খাদিমুল ইসলাম আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে বাধা প্রদান করে সুন্নি সমর্থকরা। বিষয়টি তাৎক্ষণিক গণ্যমান্যদের মধ্যস্থতায় নিষ্পত্তি হলেও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল দু’পক্ষের মধ্যে। সোমবার দুপুরে তালামিযে ইসলামিয়ার ব্যানারে একটি মিছিল জালালিয়া আলিম মাদ্রাসায় প্রবেশ করলে মাহফিল আয়োজক কওমিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এক পর্যায়ে মাহফিলের প্যান্ডেল থেকে কওমীরা ও মাদ্রাসা থেকে সুন্নিরা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে শহরে ছড়িয়ে পড়ে কওমি-সুন্নি সমর্থকদের সংঘর্ষ। খবর পেয়ে পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী, জেলা পরিষদের সদস্য আজমল হোসেন সজল ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা এসে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন।

সংঘর্ষ চলাকালে শহরের ফুটপাতের ১৫-২০টি দোকান লুঠ ও তছনছ করা হয়। এক সময় কওমিরা শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ভাঙচুরের তাণ্ডবলীলা চালায়। তারা শহরের কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় শহরের দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। শহরে আসা লোকজন আশ্রয় নেয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও বাসাবাড়িতে। শহর জুড়ে সৃষ্টি হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। রণসাজে সজ্জিত কওমী-সুন্নিদের কাছে থানা পুলিশ ছিল অনেকটা অসহায়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেয়ে নিজেদের নিরাপদে রাখার চেষ্টাই বেশী করেছে পুলিশ। বিকেলের দিকে সুন্নিদের শক্তিশালী ধাওয়া খেয়ে ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে পিছু হঠে আত্মরক্ষার্থে সুরমা নদীতে ঝাঁপ দেয়। এ সময় নদীর পানিতে কয়েক জন কওমি সমর্থক নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা গেছে। রাত ৮টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল নিখোঁজদের উদ্ধারে নদীতে ব্যাপক তলাসী চালিয়েছে।

সংঘর্ষ থানা-পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিকেল সোয়া ৪টায় সুনামগঞ্জ থেকে র‌্যাব ও দাঙ্গা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু র‌্যাব-পুলিশ আসার আগেই পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের হস্তক্ষেপে এসময় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে দু’ ব্যক্তি নিহত এবং পুলিশ, পথচারী, শিক্ষার্থীসহ উভয় পক্ষের দেড় শতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের মধ্যে বেশ ক’জন গুলিবিদ্ধও রয়েছে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত শহরের বাগবাড়ি মহলার আব্দুল জব্বারের পুত্র আব্দুল বাছিত বাবুল ও ইসলামপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আজাদ মিয়ার পুত্র রুবেল মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মারা যায়। আহত লাহিন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম তালুকদার, আব্দুল মতিন রাজন, কেডিএস এনামুল হোসেন, ফয়জুল ইসলাম ফজল, মাছম আহমদ, তারেক আহমদ, ইমরান হোসেন, মুক্তার হোসেন, হাফিজ মোস্তফা কামাল, মজলু মিয়া, নুর হোসেন, সেলিম আহমদ, রিপন মিয়া, জিতু মিয়া উপেন্দ্র দাসসহ অন্তত ৫০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এসআই শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, এসআই সোহেল রানাসহ মিজান, আব্দুল আওয়াল, লোকমান, ফখরুল, তোয়েল, আহমেদ শরীফ, রমজান, সোহেল, মাও. আকিক হোসেন, রুমন, তানভির, সুবেদ, আশিক মিয়া, তায়েব, শহিদ, সিরাজ, আবু বক্কর, জুনেদ, ছালেক, মেহেদী হাসান, রুমেল, ওয়াহিদ, আসলাম, সিরাজুল, দুলাল, শাহ জামাল, আব্দুল কাদির,  আব্দুল জব্বার, সদও উদ্দিন, ছুরত মিয়া, মাসুক মিয়া, সজীব, মমিন, গিয়াস উদ্দিন, রিয়াজ উদ্দিন, আশ্রব আলী, আলী আহমদ, মিন্টু, ওয়েছ, পাভেজ, আব্দুল জলিল, জামাল মিয়া, ইসলাম উদ্দিন, জাহিদ আলী, সোনা মিয়া, মোহাইমিন, নেপুরসহ অন্যান্য আহতদের ছাতক, কৈতক, কালারুকা হাসপাতাল এবং বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ছাতক থানার ওসি আশেক সুজা মামুন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...