বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:০১
Home / আকাবির-আসলাফ / হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি (রহ.): আমাদের চেতনার বাতিঘর

হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি (রহ.): আমাদের চেতনার বাতিঘর

deobondইসলামী শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি, ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহ তথা দ্বীনের ঝান্ডা বুলন্দের জন্য ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার মেহনত, কুফরী অপশক্তির মোকাবেলায় আপোসহীন সংগ্রাম কিংবা ওলামায়ে কেরামের স্বাতন্ত্র্য মর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা সর্বক্ষেত্রে আমাদের সামনে ‘আলোর মিনার’ হয়ে জ্বলজ্বল করছেন হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহঃ৷

আমরা আরাবিরে ওলামায়ে দেওবন্দের ত্যাগ, সাহসিকতা, আপোসহীনতা, ইলমে নববীর সংরক্ষণ ও প্রসার সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানি৷ কিন্তু এটা কজনের জানা আছে যে, আকাবেরে ওলামায়ে দেওবন্দের সবধরনের অবদানের সাথেই ১৮৫১ সালে বেরলি শহরে মাওলানা জুলফিকার আলীর ঘরে জন্ম নেয়া শায়খুল হিন্দের নাম জড়িয়ে আছে ওৎপ্রোতভাবে৷

১৮৫৭ সালে বৃটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর উপমহাদেশে আলেম-উলামাদেরকে পাইকারী নির্মুলের ফলে নেতৃত্ব দেয়ার মতো আলেম তো দূরের কথা দাফন-কাফন করতে পারে এমন কোনো আলেমও অবশিষ্ট ছিলো না৷
সুতরাং ইলমে দ্বীন চর্চার পাশাপাশি নেতৃত্বে নতুন লোক তৈরীর জন্য দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ সশস্ত্র সংগ্রামের পরিবর্তে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাগরণ ও চেতনা ছড়ানোর প্রয়াস শুরু হয় একাডেমিক পন্থায়৷

দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দির ভয়াল নৈঃশব্দ ও স্থবিরতার পর এই আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন দারুল উলূমের প্রথম ছাত্র, পরবর্তীতে দারুল উলূমের সদরুল মুদাররিসীন শায়খুল হিন্দ হজরত মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি৷ তাঁর প্রজ্ঞা ও নিরলস কর্ম তৎপরতার ছোঁয়ায় উলামায়ে হকের মৃতপ্রায় রাজনৈতিক অঙ্গন পুনরায় সরগরম হয়ে ওঠে৷

জাতীয় চেতনাকে শানিত করে স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবানের জন্য তিনি কর্মজীবনের শুরু থেকেই নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন৷ হুজ্জাতুল ইসলাম হজরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) এর মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হজরত শায়খুল হিন্দ ১৮৭৮ সালে দারুল উলূমের সাবেক ছাত্রদেরকে নিয়ে ‘সামারাতুত তারবিয়্যাহ’ নামে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শুরু করেন৷

১৯০৯ সালে শায়খুল হিন্দ (রহঃ) স্বীয় একান্ত শিষ্য মাওলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধী (রহঃ) কে ‘জমিয়তুল আনসার’ নামক সংগঠন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন৷ এ সংগঠনের একটি অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলো৷
১৯১৬ সালে হজরত শায়খুল হিন্দ (রহঃ) বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে তুর্কী খলীফার সমর্থন ও আফগানিস্তানের পথে ভারতে বৃটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের চুক্তি সম্পাদনের জন্য মক্কা গমন করেন এবং তুর্কী খলীফা আনোয়ার পাশা তার আহবানে সাড়াও দেন৷ কিন্তু মক্কার বৃটিশ তাবেদার গভর্নর শরীফ হোসাইনের ষড়যন্ত্রে ১৯১৬ সালের ডিসেম্বরে হজরত শায়খুল হিন্দ গ্রেফতার হন৷ ওস্তায ও শায়খের প্রতি অশ্রুত এবং অভূতপূর্ব ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা ও আনুগত্য দেখিয়ে হজরত শায়খুল ইসলাম সায়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) স্বেচ্ছা বন্দিত্ব বরণ করেন৷ সেটি ইতিহাসের আরেক অধ্যায়৷ প্রথমে তাদেরকে জেদ্দা, সেখান থেকে মিশরে বৃটিশ সামরিক ব্যারাক, সর্বশেষ ভূমধ্যসাগরীয় মাল্টায় নির্বাসন দেয়া হয়৷
তিন বছর পর ১৯২০ সালের মার্চে মাল্টা থেকে ছাড়া পেয়ে বোম্বে পৌঁছে স্বাধীনতার চেতনায় সরাসরি খেলাফত কন্ফারেন্সে যোগ দেন৷ এসময় তাকে ‘শায়খুল হিন্দ’ উপাধি দেয়া হয়৷

তিনি ওলামাদের উদ্দেশ্যে বয়ানে বলেছিলেন,

اسلام صرف عبادت کا نام نہیں. بلکہ تمام دینی، سیاسی، اخلاقی، تمدنی ضرورتوں کے متعلق ایک کامل و مکمل نظام ہے. موجودہ دور کی کشمکش میں حصہ لینے سے جو لوگ کنارہکشی اختیار کرتا ہے، اور صرف حجروں میں بیٹھے رہنے کو فرائض اسلام کی ادآئگی کے لئے کافی سمجھتا ہے، وہ اسلام کی پاک صاف دامن پر بدنما داگ لگا رہی ہیں.
“ইসলাম কেবলমাত্র ইবাদত-বন্দেগীর নাম নয়৷ বরং ধর্ম, রাজনীতি, আখলাক এবং সংস্কৃতির যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান সংবলিত এক ব্যবস্থার নাম ইসলাম৷ সময়ের চাহিদায় সাড়া না দিয়ে যারা একে পাশ কাটাতে চায়, যারা কেবল হুজরায় বসে থাকাকে ইসলাম প্রদত্ত কর্তব্য সম্পাদনে যথেষ্ট মনে করে৷ তারা ইসলামের পুতপবিত্র আঁচলে কালিমা লেপন করে”৷

দারুল উলূম দেওবন্দের অনুসারী, সুনাম-সুখ্যাতি আজ উপমহাদেশ ছাপিয়ে আরব, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে৷ ইলমে নববীর সুবাস বিস্তৃতির পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি, দাওয়াত-তাবলীগ, ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শিক সন্তানেরা পৃথিবীর পথপ্রান্তে কাজ করছে, এর ভিত্তিমূল হজরত শায়খুল হিন্দ রহঃ এর হাতেই গ্রোথিত হয়েছে৷ মাদানী, থানভী তারই মেহনতের ফসল৷

১৯২০ সালে জীবনের অন্তিম সফরের কিছুদিন পূর্বে সর্বভারতীয় জমিয়তের সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “ আমরা মিছিল, মিটিং, সমাবেশে রাজপথ গরম করলে লাভ কি হতো? এখান থেকে বিদায়ের পর সবাই বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতো৷ বরং আজ এখান থেকেই আমাদেরকে কাজের জন্য চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে হবে৷”

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী

–ফরহাদ মজহার বাংলাদেশে দ্বীনি ইসলামের দেওবন্দী ধারার বর্ষীয়ান মুরুব্বি আল্লামা শাহ আহমদ শফী ইন্তেকাল করেছেন। ...