শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ১১:৪৪
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ

ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ

india mosqইসলামের সূচনাকালেই ভারতবর্ষে এর আলোকশিখা বিচ্ছুরিত হয়। রাসূল সা.-এর জীবদ্দশাতেই এখানে ছুটে আসেন সাহাবায়ে কেরাম। এ ভূখ-ে মুসলমানদের ইবাদখানা মসজিদও তখনই নির্মিত হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারতের কেরালা রাজ্যের কুদুংগালুর তালুকের মেথালা গ্রামের চেরামন জামে মসজিদই উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ। মুহাম্মদ বিন কাসিম, মুহাম্মদ ঘুরী ও সুলতান মাহমুদ গজনভীর ভারত আগমনের বহু আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে এ মসজিদ নির্মিত হয়।
সুপ্রাচীন কাল থেকে কেরালার সঙ্গে আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। ভারত মহাসাগর ও আরব মহাসাগরের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা হলো কেরালা। আরবদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে কেরালার সর্বশেষ রাজা চেরামন পেরুমলকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে। তিনি মক্কানগরীতে গিয়ে ইসলাম কবুল করেন এবং তাজউদ্দিন নাম ধারণ করেন। তৎকালীন জেদ্দার শাসকের বোনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সেখানে পুনর্বাসিত হন। পরবর্তী জীবনে মৃত্যু অত্যাসন্ন বুঝতে পেরে চেরামন পেরুমল ইসলম প্রচারের জন্য কেরালায় তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে পত্র পাঠান। এর কিছুদিন পর তার মৃত্যু হলে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মালিক ইবনে দীনার এবং চেরামন পেরুমলের সমসাময়িক একজন প্রতিনিধি পত্রটি কেরালা নিয়ে আসেন। কেরালার শাসকরা প্রতিনিধিদ্বয়কে সম্মানের সঙ্গে বরণ করেন এবং ধর্মপ্রচারের সুবিধার্তে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেন। কুংগালুয় প্রতিষ্ঠিত চেরামন মসজিদই হচ্ছে কেরালার প্রথম মসজিদ। হযরত মালিক ইবন দীনার হচ্ছেন এই মসজিদের প্রথম ইমাম ও তত্ত্বাবধায়ক। পরবর্তী সময়ে হযরত মালিক ইবনে দীনারের ছেলে হাবিব ইবনে মালেক ইমাম এর তত্ত্ব¡াবধায়ক নিযুক্ত হন।
একাদশ শতাব্দীতে এই মসজিদ সংস্কার ও পুননির্মিত হয়। আস্তে আস্তে মুসল্লি বেড়ে যাওয়ার ফলে ১৯৭৪, ১৯৯৪ ও ২০০১ মসজিদের সামনের অংশ ভেঙে আয়তন সম্প্রসারিত করা হয়। প্রাচীন মসজিদের ভেতরের অংশ এবং মিহরাব ও মিনার আজও অক্ষত রয়েছে। মসজিদের বাইরে অংশ নির্মিত হয় কংক্রিট দিয়ে। ওজু করার জন্য সে সময় নির্মিত পুকুর এখনো আগের মতোই আছে। মসজিদের পাশে দুটি কবর রয়েছে। মনে করা হয় একটি হাবিব ইবনে মালেকের এবং অপরটি তাঁর স্ত্রী মুহতারামা হোমায়রার। রমজান মাসে বিপুলসংখ্যক মুসলি¬ ইবাদতের উদ্দেশ্যে এই মসজিদে আসেন।
বিংশ শতাব্দীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা মসজিদ দর্শন করতে আসেন এবং হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মালম্বীরা তাদের সন্তানদের পাঠদানের সূচনা করেন এই মসজিদ থেকেই। মসজিদের ভেতরে মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি নেই।
কেরালার শাসকদের উপাধি ছিল চেরুমন পেরুমল। ভাষ্কর রবি বর্ম। মসজিদে রয়েছে পিতল নির্মিত একটি প্রদীপ, যা হাজার বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত রয়েছে। সব ধর্মের মানুষ এ বাতিটি জ্বালিয়ে রাখার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে তেল সরবরাহ করে থাকেন। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এ মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। এ এ পি জে আবুল কালামও ভারতের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে মসজিদটি পরিদর্শন করেন। মসজিদটি ভারতবর্ষের মুসলিম ঐতিহ্যের চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

‘দেওবন্দের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হচ্ছে’

কমাশিসা ডেস্ক: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহকারী মহাসচিব ও জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা ...