মাওলানা রশীদ আহমদ। ২০০৭ সালে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। দেশটির নাগরিক হয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সম্পাদনা করেন। সমাজসেবায় রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।তার সম্পাদনায় নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশ হয় ইয়র্ক বাংলা নামের ম্যাগাজিন। ব্রুকলীনের বিএমএমসিসি ইসলামিক স্কুলের প্রিন্সিপাল। এছাড়াও নিউইয়র্ক-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের তিনি নির্বাহী সদস্য। রশীদ আহমদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাও মানাউরা গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বসবাস করার ফলে সেখানকার সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে তার। পরিশ্রম করছেন মুসলিম উম্মাহর জন্য কিছু করার। আমেরিকার ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে নানারকম গুঞ্জন চলছে সারা বিশ্বেই। আমেরিকতায় এ নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি কী এ সম্পর্কে তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রোকন রাইয়ান।
আওয়ার ইসলাম: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ও ইমিগ্র্যান্টদের এখনকার মনোভাব কী?
রশীদ আহমদ: আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম ও ইমিগ্র্যান্টবিরোধী বক্তব্য এবং পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণার পর থেকেই মুসলিম এবং ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিতে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ সেই আতঙ্ক দূর করতে এবং নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন বক্তব্যকে চ্যলেঞ্জ করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে নিউইয়র্কের শতাধিক মানবাধিকার সংগঠন৷ তারা নতুন প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন বক্তব্যকে মানবাধিকার বিরোধী ও হিংসাত্মক উল্লেখ করে নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকাকে হেইট ফ্রি জোন ঘোষণা করেছে৷
মুসলিম ইমিগ্র্যান্টরা মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হিংসা জাতি, বর্ণ ও ধর্মে বিভক্তির বিরুদ্ধে। তাদের অনুভূতি এরকম যে আমরা ঘৃণা নয় ভালবাসায় বিশ্বাসী এবং সেই ভালবাসা দিয়ে আমরা একে অন্যকে প্রটেক্ট করবো। হেইট ফ্রি জোন ঘোষণাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ সভাসহ অন্যান্য স্টেটের মতো নিউইয়র্কেও অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম ও ইমিগ্র্যান্টরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী বক্তব্য, মুসলমানদের আলাদা রেজিস্টেশন করা, অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বের করে দেয়া, মেক্সিকো সীমান্তে ওয়াল তৈরি করা, আফ্রিকানসহ বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে বিক্ততি তৈরির জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এবং তারা প্রকাশ্য বলেছেন, এটা আমাদের দেশ, এই দেশ থেকে কোন মুসলিম এবং ইমিগ্র্যান্টকে বের করে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। মুসলিম ও ইমিগ্র্যান্টদের ব্যাপারে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এ পর্যন্ত অনেক সিটির মেয়র ইমিগ্র্যান্ট ও মুসলমানদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
আওয়ার ইসলাম: ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভীতি তৈরি করেছেন নির্বাচনের আগে সেই ভীতি কি কমছে জনমনে?
রশীদ আহমদ: এই প্রশ্নের উত্তর আসলেই জটিল। মেঘের আড়ালেই সূর্য হাসে’র মতো। সম্ভবত প্রকৃতির নিয়মেই একতরফা কোনো কিছু চলে না। তাই খারাপের মধ্যেও ভালোর সন্ধান মেলে। হতাশার মধ্যেও আলোর সন্ধান দেখা যায়। গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চরম ভীতি ও আতঙ্ক জনমনে বিরাজ করছে- বিশেষত আমেরিকার অভিবাসী এবং মুসলমান কমিউনিটির মাঝে এক ধরনের হতাশা ও অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। শুধু আমেরিকা কেন, আমেরিকার বাইরে বিশ্বজুড়েই ট্রাম্প বিজয়ে কখন কি হয়, এমন একটা অস্বস্তি ও ভীতি সর্বদা বিরাজ করছে।
আওয়ার ইসলাম: ট্রাম্পের জয়ের পেছনে কি মুসলিম বিদ্বেষ কাজ করেছে?
রশীদ আহমদ: যদিও এ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বলা যাবে না। কারণ আমেরিকা চলে তার নিজস্ব নীতিতে। প্রথম পর্যায়ে এ মনোভাব কিছুটা কাজ করলেও শেষ পর্যায়ে দেখা গেছে তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অধ্যায়ের কথা। যা ইতিমধ্যেই রাশিয়ার হ্যাকের কথা গণমাধ্যমে চলে এসেছে। এই আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশ বিদ্বেষই কাজ করেছে।
আওয়ার ইসলাম: আমেরিকার গণমাধ্যমের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব কী?
রশীদ আহমদ: অনেকটা ক্ষুব্ধই বলা যায়। নির্বাচনের আগে তার প্রতি নেতিবাচক খবরের কারণে তিনি চটে আছেন। সম্প্রতি ট্রাম্প টাওয়ারে ডেকে নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি তুনোধুনো করেছেন। যদিও এই সাক্ষাতের বিষয় ছিল ‘অফ দ্যা রেকর্ড৷ অংশগ্রহণকারীরাও চুক্তিতে সম্মত হন যে তারা আলোচনার বিষয়বস্তু অন্যত্র প্রকাশ করবেন না৷ কিন্তু তা প্রকাশ হয়ে যায়। নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানকালে নেতিবাচক কাভারেজ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প৷ শুরুটা করেন সিএনএন-এর প্রেসিডেন্ট জেফ জাকারকে নিয়ে৷ তাকে বলেন ওঠেন, আপনার নেটওয়ার্ককে আমি ঘৃণা করি৷ সিএনএনের প্রত্যেক সাংবাদিক মিথ্যুক৷ কিছুক্ষণ পর বলেন, মিথ্যুক ও অসত্য মিডিয়ার সাংবাদিকদের রুমে আমরা বসে আছি৷ এভাবে সাংবাদিকদের তুনোধুনো করেন ট্রাম্প ৷ শুধু সিএনএন নয়,নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টসহ প্রায় গণমাধ্যমকে ঘৃণ্যচোখে দেখছেন তিনি ৷
আওয়ার ইসলাম: ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ভাবনা কী?
রশীদ আহমদ: ৮ বছর আগে বারাক ওবামাকে নির্বাচিত করে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকানকে হোয়াইট হাউজে পাঠানোর ইতিহাসে সম্পৃক্ত ছিলেন বাংলাদেশি-আমেরিকানরা। তবে এবার হিলারিকে জয়ী করে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিলেন তারা। কারণ হিলারিই ছিলেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বড় কোন রাজনৈতিক দলের। অর্থাৎ গোটা বিশ্বের নেতৃত্ব একজন নারীকে প্রদানের সংকল্প নিয়ে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা মাঠে নেমেছিলেন। সে কারণে এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশি-আমেরিকান ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সারা বিশ্বের নেতা মনে করা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। তাই যিনি এই মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট হবেন তাকে তো সব ধরনের মানবিক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। সে প্রত্যাশা আমেরিকানদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদেরও ছিল। সে কারণে বলতে হয় অন্যদের মতো এখানে বাংলাদেশি আমেরিকানদের একটা স্বপ্নভঙ্গের মতো ব্যাপার ঘটেছে।
তবে ট্রাম্পের জয়েও তারা মর্মাহত নন। তারা মনে করেন এখানে প্রবাসীদের নিয়ে আগের নীতিতে কোনো পরিবর্তন করবেন না ট্রাম্প। সুযোগ সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখবেন।
আওয়ার ইসলাম: ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই ব্যাপক বিক্ষোভ লক্ষ করছি, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে সেখানকার মানুষ।
রশীদ আহমদ: হ্যাঁ বিষয়টি জনমনে ব্যাপক শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। আমার মনে হয় শপথ চলাকালে যে বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে দেখা গেছে এটি যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
আওয়ার ইসলামের সৌজন্যে