অনলাইন ডেস্ক : কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, সে প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দেশের মোট ৫৩৮ জন ইলেকটোরাল কলেজ সদস্য বা ইলেকটরের। এই ইলেকটররা ১৯ ডিসেম্বর যাঁর যাঁর অঙ্গরাজ্যের রাজধানীতে মিলিত হবেন এই চূড়ান্ত ভোটে অংশগ্রহণ করতে।
কিন্তু একাধিক ডেমোক্রেটিক ও অন্ততপক্ষে একজন রিপাবলিকান ইলেকটর চাইছেন বিজয়ী প্রার্থীর বদলে অন্য কোনো যোগ্য প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভোট দিতে। মার্কিন আইন অনুযায়ী ২৯টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটররা যে রাজ্যে যে প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাঁর পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য। এসব রাজ্যের ইলেকটরদের মধ্যে তিনজন এই আইন চ্যালেঞ্জ করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রায় ২৬ লাখের মতো ভোটে পিছিয়ে থেকেও ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ইলেকটোরাল ভোটে এগিয়ে থাকার কারণে। তাঁর সংগৃহীত ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৩০৬। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সংগৃহীত ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ২৩২। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট প্রয়োজন।
এ পর্যন্ত মোট ১০ জন ইলেকটর জানিয়েছেন, তাঁরা ট্রাম্প বা হিলারির পক্ষে ভোট দেবেন না। তাঁদের অধিকাংশই ক্যালিফোর্নিয়ার। যেহেতু এই রাজ্যে নির্বাচনে জিতেছেন হিলারি, এই রাজ্যের সব ইলেকটর তাঁকেই ভোট দিতে আইনত বাধ্য। মন্টেরে কাউন্টি ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি ভিঞ্জ কলের ও কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের দুজন ডেমোক্রেটিক ইলেকটর আদালতে আবেদন করেছেন যে, ট্রাম্প বা হিলারির পক্ষে ভোট দিতে ইলেকটরদের বাধ্য করার বদলে নিজেদের বিবেক অনুযায়ী কোনো যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে অনুমতি দেওয়া হোক। টেক্সাসের একজন রিপাবলিকান ইলেকটরও বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেবেন না। তাঁরা দাবি করছেন, মার্কিন শাসনতন্ত্রে ইলেকটোরাল ভোটের নিয়মটি রাখাই হয়েছে যাতে অঙ্গরাজ্যের মোট ভোটে বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে ভোট না দিয়ে একজন যথার্থ যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়।
যদি ইলেকটররা তাঁদের নির্ধারিত প্রার্থীর বদলে অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে এই প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হবে। এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কার্যত শূন্য। ইতিহাসে এর আগে মাত্র একবার এমন ঘটনা ঘটেছে। ১৮২৪ প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে কুইন্সি অ্যাডামস মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তাঁরা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন, তেমন সম্ভাবনাই বেশি। তা সত্ত্বেও ‘বিদ্রোহী’ ইলেকটররা এই পথ অনুসরণে আগ্রহী এই বিশ্বাসে যে বিষয়টি প্রতিনিধি পরিষদে হস্তান্তরিত হলে দুই দলে পর্যাপ্ত কংগ্রেস সদস্য পাওয়া যাবে, যাঁরা ট্রাম্পের বদলে অন্য কাউকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করবেন। এসব বিদ্রোহী ওয়াইহোর রিপাবলিকান গভর্নর জন কেইসিচের নাম প্রস্তাব করেছেন বলে জানা গেছে।
এখন পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদের একজন মাত্র ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান এই ‘বিদ্রোহের’ প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। রোড আইল্যান্ডের ডেভিড সিসিলিন বলেছেন, রাশিয়া মার্কিন নির্বাচনে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে ট্রাম্পকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করেছে, এ কথা জানার পর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সে কারণে ১৯ তারিখের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে ইলেকটরদের যাঁর যাঁর বিবেক অনুযায়ী ভোট দেওয়ার অধিকার থাকা উচিত।