শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:১১
Home / মুসলিম বিশ্ব / মায়ানমার ইস্যু: আবেগ নয় পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

মায়ানমার ইস্যু: আবেগ নয় পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ :
রোহিঙ্গা মুসলিমরা পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উল্লেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এটি মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য। মায়ানমারের আকিয়াব, মন্ডু, মান্ত্রা, পাত্তরকিল্লা, বুথিডাং, রেখেডাং ও কিয়ক্টাও এলাকায় এরা বসতি স্থাপন করেছে। ৮ লক্ষাধিক মুসলমানের বসবাস এই মায়ানমারে। মায়ানমার ছাড়াও ৫ লক্ষাধিক মুসলমান বাংলাদেশে এবং ৫ লক্ষ সৌদি আরবে বাস করে। বার্মা সরকারের পাশবিক নির্যাতনের ফলেই এদের এই ছন্নছাড়া অবস্থা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ‘রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচে’ নির্যাতিত জনগোষ্ঠী।’ রাখাইন প্রদেশের উত্তর অংশে বাঙালি, পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে আবাস গড়ে। তাই এদের ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে।
রাখাইনে দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস। মগ ও রোহিঙ্গা। মগ সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মানুসারী আর রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা রাজ্য স্বাধীন ছিল। মায়ানমারের রাজা বোদাওয়াফা এ রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়। তখন থেকেই একেকটি দাঙ্গার সূচনা হয় জাতিগত কোন্দল এবং মুসলিম জনসংখ্যার আধিক্য কেন্দ্র করে। ২০১২ সালের দাঙ্গা-ই উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহ।
যে যাই বলুক, বৌদ্ধদের অমানবিক আচরণের মূল ইস্যুই হল ধর্ম। তাদের টার্গেট মায়ানমার থেকে মুুসলমানদের উৎখাত করা। সেই চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষে তারা অনেকগুলো নীল নকশা তৈরি করেছে। সরকার কর্তৃক এদের পড়াশোনার সুযোগ নেই।সরকারি অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ নিষেধ। জমির মালিক হতে পারে না। দু’টির বেশি সন্তান না নেয়ার অঙ্গীকারনামায় সাক্ষর করতে হয়। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে এদের বঞ্চিত করা হয়। রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা করার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জাতিই হচ্ছে এই রোহিঙ্গা মুসলিমরা।
১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বিপন্ন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের চলাচলের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত। অন্যায় ও অবৈধ কর চাপিয়ে হেস্তনেস্ত করা হয়। জমি দখল করে নেয়া হয়। ভিটেবাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। উত্তর রাখাইন রাজ্যে গত দশ দশকে বাধ্যতামূলক শ্রমিকের কাজ কমলেও রোহিঙ্গাদের রাস্তার কাজে ও সেনা ক্যাম্পে বাধ্যতামূলক শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কান্নার আওয়াজ কে শুনবে? যেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বলয় জোরদার করার জন্য, সেখানে খোদ এ অভিযান সরকারিভাবেই পরিচালনা করা হচ্ছে। যা ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত হচ্ছি। সরকার কর্তৃক এই সেনা অভিযান সরাসরি রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চালান হচ্ছে। তাদের পাষণ্ডতার রূপ এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, সামান্যতম মানবতাবোধ ওদের অন্তরে দয়ার পরশ হয়ে উঁকি দেয় না। হত্যার একেকটি দৃশ্য হৃদয়ের গভীরে রক্তক্ষরণ ঘটায়। জোরপূর্বক ধর্ষণ পশুত্বকেও হার মানায়। ধর্মীয় স্থাপনাগুলো আগুন জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেওয়া হচ্ছে। মুসলিম জনগোষ্ঠী হত্যা কিংবা জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে অন্যদের মতো মাছ ধরার নৌকায় আশ্রয় নেয়, তখন সরকারি ফেরিযানগুলো ধাক্কা মেরে নৌকা ডুবিয়ে দেয়। ফলে সাগরে তলিয়ে যায় ওদের তরতাজা প্রাণ। বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো যখন বাঁচার আশায় সাঁতরে সমুদ্রপাড়ে পৌঁছে, তখন সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারায় তীরেই। বঙ্গোপসাগরেই হয় অনেকের সলিল সমাধি।
আজ আমি যখন লিখছি, তখন রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের তাজা প্রাণ। ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করছে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। ইসলামের মূলোৎপাটন করতে তারা ঐক্যবদ্ধ। মায়ানমারের মানচিত্র থেকে ইসলাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে তারা এক হতে পারে, অথচ আমরা তদের পাশে দাঁড়াবার শক্তিটুকুন হারিয়ে ফেলেছি। মুসলিম জাতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক কঠিন প্রশ্ন, ইসলাম টিকিয়ে রাখতে এখন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করব? এই নাযুক পরিস্থিতিতে সম্মিলিত ঐক্যের বিকল্প নেই। মায়ানমারের নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্যে আমাদের এগিয়ে আসতেই হবে। অন্যথায় বিচার দিবসে আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। চোখ আটকে যায় সে দৃশ্যে, দাউ দাউ করে জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম। একে একে শহিদ হচ্ছে শত শত ঈমানদীপ্ত প্রাণ। ট্রলার ভর্তি ক্ষুধার্ত হাড্ডিসার মানবগুলো ভাসছে একটু ঠাই পাবার আশায়। মুসলিমদের এই দুর্দিনে পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় হোক আমাদের অঙ্গীকার।
লেখক : সহ-সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিশ্ব ইজতেমায় গেলে কি হজ্বের সওয়াব মিলে?

খতিব তাজুল ইসলাম: তাবলীগ জামাতের সংকট ও কয়েকটি প্রশ্ন? তাবলীগ জামাত নিয়ে যে সংকট সেটা ...