ড. আবদুস সালাম আজাদী, অতিথি লেখক:: ডঃ ইউসুফ কারাদাওয়ী ‘ تاريخنا المفترى عليه ‘ বা আমাদের দোষ চাপানো ইতিহাস নামে একটা বই লিখেছেন। এতে তিনি ইবনে খালদুন, তাবারী, ইবন কাসীর ও যাহাবীর পাশাপাশী মাসঊদী ও অন্যান্য শিয়াদের লেখা ইতিহাসের পর্যালোচনা করেছে। তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে নবুওয়াত থেকে শুরু করে ১৩ শ’ সন পর্যন্ত কুরআনের আইন অনুযায়ী মুসলিম দেশসমূহের অধিকাংশ চলতো।
তিনি দেখাতে চেয়েছেন খেলাফাতে রাশেদা মাত্র ৩০ বছর ছিলো আর সব ছিলো অনিসলামিক – এই কথা টা ঠিক নয়। ডঃ ইউসুফের সুর ধরে ডঃ ইমাদুদ্দীন খলীল তিনটি গবেষণা লিখেছেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন ইসলাম মাত্র কয়েক বছর শাসন ক্ষমতা দেখিয়েছে কথা টা সর্বৈব মিথ্যা। এরা দুই জনেই ডজন ডজন খালিফার উদাহরণ নিয়ে এসেছেন যারা শুধু ইসলামের ইতিহাসে নন মানবেতিহাসের অমূল্য রত্ন। যারা কুরআন অনুযায়ীই রাস্ট্র চালিয়েছেন, খেলাফাতে রাশেদার পথেই জীবন চালিয়েছেন।
ডঃ ইউসুফ তার বই এর ৪৬-৭৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যে সব উলামাগণ ইসলামের ইতিহাসে এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করেছেন। তিনি যাদের লেখাকে বেশি সমালোচনা করেছেন তারা হলেনঃ
১। সাইয়েদ আবুল আ’লা মাওদূদী
২। সাইয়েদ কুতুব
৩। মুহাম্মাদ গাযযালী
তিনি সাইয়েদ মাওদূদী কর্তৃক ইসলামের ইতিহাস চর্চা সম্পর্কে বলেছেনঃ সত্যি কথা বলতে কি, আমি যখন উস্তায মাওদূদীর ইসলামের ইতিহাস ও সভ্যতা সংক্রান্ত লেখা পড়েছি, আমার রোমকূপ খাড়া হয়ে গেছে, আমার পা ঠকঠক করে কেঁপেছে, আমি বিস্মিত হয়েছি ইসলামের ইতিহাস নিয়ে মানুষ এত বাড়াবাড়ি করতে পারে?!
আসলে এদের লেখাগুলোর মূল সুত্র এসেছে আধুনিক পাশ্চত্য ও প্রাচ্যের ইতিহাসবিদদের কাছ থেকে, যারা মনে করে খেলাফাতে রাশেদার কাল শেষ হলে ইসলামি হুকুমাত ও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই চিন্তা একদম ভুল। শিয়ারাই এই ভাবে ইসলাম কে দেখায়েছে। তারা মনে করেঃ কারবালার পর থেকে ইসলাম শেষ হয়ে গেছে ইমাম মাহদী আসার আগ পর্যন্ত আর ইসলাম কায়িম হবেনা।
এই সব কঠিন লেখার বিপরীতে ডঃ ইমাদ, শায়খ নাদাওয়ী মাহমূদ শাকের ও ডঃ ইউসুফেরা কলম ধরেছেন। তারা দেখাতে চেয়েছেন ইসলামের ইতিহাস চর্চায় এই শিয়া চশমা আমাদের হক দেখতে দেয়না। মাহমূদ শাকের তার আততারীখুল ইসলামীতে দেখিয়েছেন ইসলামি শাসন ও সভ্যতা কিভাবে শাতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীর গতি কে সঞ্চালিত করেছে।
যারা তাবারী পড়েন, ইবনে খালদুন পড়েন, ইবনে কাসীর অধ্যায়ন করেন তারা ইসলামের সৌন্দর্য সব সময়েই দেখতে পান।
এই ক্ষেত্রে আমাদের নবী (সা) বলেছেন কিয়ামত এর আগ পর্যন্ত সমস্ত যুগে আমার উম্মাতের কোন না কোন দল হক্বের সাথে বিজয়ী থাকবেই, সংখ্যায় তারা যত ছোট ই হোক না কেন। আসলে দ্বীনি পরিবেশ, দ্বীনি হুকুমাত, বা কুরআনী শাসন ব্যবস্থা থেকে এই উম্মাত কখনোই সম্পূর্ণ রূপে মাহরুম হয়নি। সবচেয়ে কাছের উদাহরণ হলোঃ ফকীর আলমগীরের খিলাফাতে রাশেদাহ।
যাহোক শিয়া চশমা আমাদের ইতিহাস অধ্যায়নে মারাত্মক ক্ষতিকর ভূমিকা রেখেছে বলে বর্তমানের মুহাক্কিক এই সব ঐতিহাসিকরা মনে করেন।