নাজমুল ইসলাম, দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ::
পর্যটকদের মুখে দারুল উলূম দেওবন্দ!
দারুল উলূম দেওবন্দ শুধু এক নিখাদ ইসলামী শিক্ষাক্ষেন্দ্র না; মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মতৃপ্তির এক বিখ্যাত ইসলামী পর্যটন ক্ষেন্দ্রও বটে। ছুটিতে, উৎসবে বা কোন এক ফাঁকে অবসর হয়ে নিজেদেরকে আনন্দ দিতে দেশ-বিদেশের মুসলিম-অমুসলিম, বাদশা-ফকির, দ্বীনদার-বেদীন, পুরুষ-মহিলা, বুড়ো-যুবক এবং শিশু পর্যটকরা দল বেধে অথবা একা একা ছুটে আসতে থাকে মাদরে ইলমিতে।
মনকাড়া ডিজাইনের ভবনসমূহ, মসজিদ, ছাত্রাবাস এবং সর্বোপরি মহান উলামা হজরাত এবং ইলম পিপাসুদের সুন্নাতি লেবাস, অমায়িক চরিত্র, আদবী কথাবার্তা শুনে নিজেরা এ অনুভূতি প্রকাশ করতে বাধ্য হয় যে, “এখন পর্যন্ত যা শুনেছিলাম তা উপন্যাস না, এবং এখন পর্যন্ত যা দেখলাম তা স্বপ্ন না”।
এরকমভাবে অনেক সাহিত্যিকের কলাম, প্রবন্ধ আর অনুভূতিতে চিত্রায়ন হয়েছে ‘দারুল উলূম দেওবন্দের’ মাহাত্মকথা।
এইতো সেদিনের কথা। নামাজের সময় একদম নিকটবর্তী। যাচ্ছিলাম মসজিদে রশীদ অভিমুখে। সামনে এগুতেই এক বিশাল কাফেলার (প্রায় ৮০জন) সাথে দেখা। আমাকে দেখতেই এক বৃদ্ধ চাচ্চু দৌড়ে কাছে আসলেন। মুখজুড়ে ছিলো হারানো কোন জিনিস ফিরে পাওয়ার ছাপ। আমিতো পুরোই অবাক হয়ে গেলাম। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।মনে হচ্ছিলো মনে হয় কোনো বিপদে পড়ে সাহায্য নিতে আসছেন। হাপাতে হাপাতে কাছে আসলেন।
জিজ্ঞেস করলাম-হাজি কেয়া হুয়া?
চোখে অশ্রু আর মুখে হাসি নিয়ে বললেন- আজ মেরা সপ্না পুরা হো গেয়া…
আমি তো আরো অবাক!!
বললাম- কেয়া বাত কাররেহে হ? কেয়া ওয়াক্বিয়া বাতাও?
বললেন, ময় অয়েস্ট বেঙ্গল সে পরিওয়ার লে-কর স্রেফ এক জালাক ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’ কি যিয়ারত কে লিয়ে আয়া” (যে স্বপ্ন ছিলো সেই ছোট বয়সে আজ তা পূরণ হলো।)
-আপ তো দারুল উলূম কা তালবা হো?
জি!
-মেরে আওর মেরে পরিওয়ার কে লিয়ে দোয়া কি দরখাস্ত।
-আহ!
সেদিন শুধুই অপলক তাকিয়ে তাকিয়ে চাচ্চুর কথা শুনছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম আর বলছিলাম-
চাচ্ছু!
আপনাকে কি আর বলবো! আমিও যে আপনার মতো জীবনের ২৩ টা বছর ধুকে ধুকে মরছিলাম। চাপা মেরে রেখেছিলাম ইচ্ছাকে। আর লালন করছিলাম স্বপ্নকে আজকের এ যিয়ারতের জন্য। তার সন্তান হওয়ার আশায়। আসবো। দেখবো। আকাবীরদের খাতায় আমার ক্ষুদ্র নামটাও লিখাবো। আর ধন্য হবো তা দেখে যে, না আমিও ছিলাম সেই কুপের দুধ গ্রহীতা?
আল্লাহর শুকুর!
মাওলা আমায় মাহরুম করেন নি! কবুলই করেছেন। যেমন কবুল করেছেন আপনাকে।
তাই আমি শুধুই কৃতজ্ঞ না; বরং চিরকৃতজ্ঞ।