আবুল হুসাইন আলেগাজী:
রুশিয়ান ফেডারেশনের ৯৯% মুসলিম অধ্যুষিত মুসলিম প্রজাতন্ত্র চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রমজান কাদীরভের (শাফেয়ী ও ছূফী সুন্নী) বদান্যতায় ২৫-২৭ আগষ্ট, ২০১৬ রাজধানী গ্রোজনীতে অনুষ্ঠিত হলো, ‘আহলুস সুন্নাহ কারা?’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমনিার। মিসরের শায়খুল আযহার ও মক্কার বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা হাতেম আল-আউনীসহ সারা দুনিয়া থেকে সুন্নী আলেমগণ সেখানে একত্রিত হয়েছেন। সেখানে অংশগ্রহণকারী আলেমদের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে আশআরী- মাতুরিদী আকীদার লোকজনকে আহলুস-সুন্নাহ বলে ঘোষণা করা হয়। সালাফী ও লা-মাযহাবীদের আহলুস সুন্নাহভুক্ত বলে গণ্য করা হয়নি। তবে মক্কার বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা حاتم بن عارف العوني হাতেম আল-আউনী ও ইয়েমেনের জনপ্রিয় (ওনার ফেসবুক ফ্যানপ্যাজের ফলোয়ার বর্তমানে বাষট্রি ৬২ লক্ষ) শায়খ الحبيب علي الجفري আলী আল-জিফরীসহ অনেকে নন-তাকফীরি (যারা মাযহাব ও তছউফকে শিরক-বেদআত বলে প্রচার করে না এমন) সালাফী ও লা-মাযহাবীদের আহলুস-সুন্নাহভুক্ত করার পক্ষে মত দেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমিও এ মত পোষণ করি। তবে বাস্তবতা হলো, শয়তানের শিং নজদীর ভক্ত সালাফী ও লা-মাযহাবী ও একশ্রেনীর ইখওয়ানীদের দীর্ঘদিন ধরে আকীদা বা ইসলামী চিন্তার জগতে সীমাহীন অনর্থ فساد সৃষ্টির ফলে সুন্নী আলেম সমাজে তাদের প্রতি অতি কঠোর কিছু আলেমের জন্ম হয়েছে। দায়েশ খারেজীদের উত্থানের ফলে এ আলেমরা আজ সাহস নিয়ে সালাফী নামধারী জালিমদের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। গত কয়েক দশকে যারা ইসলামী আকীদা ও জিহাদের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উম্মতের মাঝে বিভক্তি ও তাদেরকে বিপদে ঠেলে দেবার মাত্রা বৃদ্ধি করেছিলেন, তারা আজ পৃথিবীর সবখানে কোণঠাসা। চেচনিয়া তথা ককেশাসের সেলফী জিহাদীরা বহুধা বিভক্ত হয়ে বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। ফেসবুকের বহুরুপী বাংলাদেশী দায়েশী/খারেজীসহ সকল পথহারাকে আল্লাহ সঠিক পথের সন্ধান দান করুন।
আমার মনে হয়, সিলেট অঞ্চলের লোকেরা খারেজীবাদের আগুনে কাঠ সরবরাহ করলেও তাতে ফুঁক দেওয়ার কাজ করে নোয়াখালী অঞ্চলের লোকেরা। আর এ আগুনে আত্মহুতি দেয় উত্তরবঙ্গসহ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা। তবে এটা সত্য যে, চট্রগ্রামে খারেজী ও সালাফীদের সংখ্যা অন্য অঞ্চলের চেয়ে কম। একই ভাবে গান-নৃত্যের জগতেও এ অঞ্চলের মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। এর কারণ, এখানে ধার্মিক মানুষ ও আলেমদের সংখ্যা অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। আর চট্রগ্রামে বামপন্থী ও লীগের সংখ্যাও অন্য অঞ্চলের চেয়ে কম। আর যারা লীগ করে, তারা অন্য অঞ্চলের এনপিদের চেয়ে অনেক ধার্মিক। এর প্রমাণ, সাবেক মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরি, মনজুর আলম (উনি কিছুদিন লীগ ছেড়ে এনপিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং পরে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন) ও বর্তমান মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। আ.জ.ম নাছির উদ্দীন সাহেব অবহেলিত চট্রগ্রাম শহরের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ চেয়ে সচিবালয়ের ঘুষখোরদের কবলে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। আর উনি নাস্তিকদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, ‘সঠিক ধর্মচর্চার অভাবেই সমাজে জঙ্গিবাদ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে।’
আর হ্যা! কেয়ামত বা মহাপ্রলয় আসার জন্য দুনিয়া থেকে দীন উঠে যাওয়া অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের উচিত, এ মহাপ্রলয় যেন আমাদের কর্মের কারণে ঘনিয়ে না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখা। আল্লাহ আমাদেরকে খারেজী চিন্তার সালাফী-ইখওয়ানী ও রাফেজী চিন্তার উগ্র ছূফীদের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন।
♦
আবুল হুসাইন আলেগাজী
০৫.০৯.২০১৬, সোমবার
লোহাগাড়া, চট্রগ্রাম