শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:১৩
Home / অনুসন্ধান / কে ছিলেন বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা
ফাতিমা আল-কারাউইন মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন

কে ছিলেন বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা

ফাতিমা আল-কারাউইন মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন
ফাতিমা আল-কারাউইন মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন

তিনি ছিলেন একজন নারী । নাম ফাতিমা আল-ফিহরি । পৃথিবীর সর্বপ্রথম সনদ বিতরণকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ফাতিমা আল-ফিহরির নামটি ইতিহাসের পাতায় অবস্থান করছে। একজন মুসলিম নারীই উচ্চশিক্ষার অগ্রপথিক হিসেবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন যেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের সনদ বিতরণ করা হতো।

উজ্জ্বল রৌদ্রস্নাত একদিনে অভিজাত একটি পরিবার তিউনিসিয়ার কাইরুয়ান থেকে মরোক্কোর ফেজ নগরীতে চলে আসেন। নয় শতকের প্রথমভাগে অনেক পরিবারই পশ্চিমের এই ব্যস্ত নগরীর অভিবাসী হতে চাইতেন। তিউনিসিয়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আল-ফিহরির জন্য ফেজ ছিল তার পারিবারিক ব্যবসা প্রসারের একটি চমৎকার স্থান। ফেজ নদীর বাম তীরে এই নগরীতেই ফাতিমার পরিবার স্থায়ী আবাস করলেন এবং এখানেই তার বিয়ে হয়।

তখন দ্বিতীয় ইদরিসের শাসন চলছিল, যিনি একজন ধর্মপ্রাণ ও অসাধারণ শাসক ছিলেন। ফেজ ছিল মুসলিম-পশ্চিম তথা আল-মাগরেবের অন্যতম কর্মব্যস্ত রাজধানী এবং একটি সম্ভাবনাময় নগরী যা মানুষের মনে সৌভাগ্যের ধারণা ও পরম সুখের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরত। অন্যতম প্রভাবশালী এই ইসলামী নগরীতে ঐতিহ্যবাহী ও বিশ্বজনীন- উভয় ধরনের ধর্ম ও সংস্কৃতির সমাবেশ হয়েছিল।

মোহাম্মদ আল-ফিহরির দুুই কন্যা ফাতিমা ও মরিয়ম, উভয়েই সুশিক্ষিত ছিলেন। ফাতিমার স্বামী, পিতা ও ভাই স্বল্প বিরতিতে পরপর মৃত্যবরণ করায় তিনি ও তার একমাত্র বোন মরিয়ম উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হন। জীবনের পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের বিশিষ্ট ও সম্মানিত করে গড়ে তুলেন। দুই বোনই সুশিক্ষা লাভ করার পর অতিদ্রুত সব সম্পদ সমাজের কল্যাণে নিবেদন করেন। দিন দিন নামাজিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ফেজের স্থানীয় মসজিদে স্থান সংকুলান হতো না। এদের মধ্যে মুসলিম স্পেন থেকে আগত অনেক শরণার্থীও ছিলেন। এ অবস্থা লক্ষ্য করে ২৪৫ হি/ ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে মরিয়ম অত্যন্ত মনোরম এবং বিশাল একটি আন্দালুসিয় মসজিদ নির্মাণ করেন।

আর ফাতিমা আল-কারাউইন মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি বিশ্বের প্রাচীনতম সনদ বিতরণকারী বিশ্ববিদ্যালয়, যা এখনও কাজ করছে। গ্রিনিস বুক অফ রেকর্ড অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ফাতিমা স্বয়ং নির্মাণকাজের তদারকি করেছিলেন এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এতে তার লক্ষ্যের প্রতি তার গভীর নিষ্ঠা বোঝা যায়, অথচ এসব বিষয়ে তার বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা ছিল না!

ফাতিমার গভীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল, তাই তিনি প্রথম থেকেই মসজিদের পাশে জমি কিনে এর পরিসর বৃদ্ধি করেন। পুরো পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করার জন্য যতটুকু অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন ছিল তা তিনি ব্যয় করেন। অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ফাতিমা ধর্মপালনের বিষয়ে খুবই আন্তরিক ছিলেন। তিনি একটি নিয়ত করলেন এবং ২৪৫ হিজরি/৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের রমজান মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে প্রায় দুই বছর পর পুরো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রোজা রাখলেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে সে মসজিদ নির্মাণ শেষ করেছিলেন, অবশেষে সেই মসজিদে শুকরিয়া আদায় করে নামাজ পড়লেন।

ফাতিমা সারা জীবন ইসলামী ঐতিহ্যবাহী ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পেছনে অতিবাহিত করেছেন। আর মানবতার একজন প্রকৃত হিতকারী মানুষ হিসেবে আল্লাহতায়ালার প্রিয়জন হয়েছেন। পৃথিবী তাঁর কর্ম গ্রহণ করে উপকৃত হয়েছে।

সৌজন্যে : দৈনিক যুগান্তর

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিকৃত যৌনতায় দিশেহারা জাতি: সমাধান কোন পথে?

শাইখ মিজানুর রাহমান আজহারী: বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা ...