মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ : কওমী মাদরাসাগুলোর বছরের প্রথম দিন৷ শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে উলূমে নববীর খাদেমদের খোশ আমদেদ৷ আহলান সাহলান মারহাবান৷ শিক্ষা বাণিজ্যের এই যুগে, বস্তুপূজারা এই সময়ে কিছু ত্যাগী, মেধাবী প্রত্যয়ী যুবক ইলমে হাসিলের পথে জীবন ব্যয় করার নিয়তে বের হয়েছে আল্লাহর পথে৷ ফি সাবিলিল্লাহ৷
এই যুবকরদের পোষাকের সাথে অন্যের মিল নেই৷ এই যুবকের চলনে বলনে ভিন্নতা৷ টাখনোর উপরে ডোলাডালা পায়জামা৷ পানজাবী বা জুব্বা৷ গোলা বা তিস্তি টুপি৷ সমাজের মাঝে ভিন্ন এক চরিত্রের যুবক৷ সহজেই পৃথক করা যায়৷ পিতা মাতাও জানে এই ছেলের রাষ্ট্রীয় কোনো সনদ নেই৷ সব জেনেই নবীজীর ভালোবাসায় মাদরাসার নূরময় পরিবেশে ভর্তি করে৷ আলেম হওয়ার স্বপ্ন লালন করে৷ পিতা আলেমের বাবা হবেন৷ মা আলেমের মা হবেন৷ এখন তো স্কুলের উপবৃত্তির সুবিধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার টাকা খরচ করে বালিকা বা মহিলা মাদরাসায় ভর্তি করাচ্ছে মেয়েদের৷ শুধুই দীনের ভালোবাসায়৷
তালেবে ইলমরা নববী ইলমের মেহমান৷ মাদরাসা হলো সুন্নাহর ফুল বাগান৷ তালেবে ইলম মধু আহরনকারী৷ উস্তাযগন হলেন সেই বাগানের মালি৷
দুনিয়ার সব সুবিধা বাদ দিয়ে কওমী মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার চিন্তা একটি বিস্ময়কর বিষয়৷ এই বিস্ময় আগামী দিনে বাড়বে আরও৷
মাদরাসার শিক্ষার মান আরও উন্নত করলে হাই সোসাইটির অভিভাবতরাও নানা উপসর্গ থেকে বাঁচতে মাদরাসামুখী হবে৷ সে আলামতও দেখা যাচ্ছে৷ নানা মিথ্যা অপবাধ দিয়েও কি তালেবে ইলমদের প্রবাহ কমাতে পেরেছে কেউ? আগামীতেও পারবে না জং-জংগীর জিগির তুলে৷ মাদরাসার তালেবে ইলমরা এ যুগের শ্রেষ্ট্র সন্তান৷ আদর্শ যুবক৷ মাদকমুক্ত৷ সন্ত্রাসমুক্ত৷ হিরোইন ও ইয়াবামুক্ত৷ এ যুগে মাদরাসা হলো প্রশান্তির আশ্রয়৷
মাদরাসার সংখ্যা শুধু উপমহাদেশে নয় ইউরোপ আমেরেকিতেও বাড়ছে৷ আগামীতে বাড়বে আরও৷
তায়েফা মানসুরার মিসদাক তালেবে ইলমও৷ তাংরা থাকবে পৃথিবীতে ইসলাম যতকাল থাকবে৷ এবং আল্লাহ হলেন তাদের ওয়াকিল৷ নিরাপত্তার ও রিজিকের জিম্মাদার৷ সারা দুনিয়া বিরোধিতা করলেও আল্লাহ তালেবে ইলমদের হেফাজত করবেন৷ ইউরোপ আমেরিকা কি কম চেষ্টা করছে৷ তাদের সব প্লান ব্যর্থ৷ হয়েছে এবং হবে৷ ১৩৭০ বছর আগের কুরআন বৃটিনে পাওয়ার খবর কি পৃথিবীকে অবাক করছে না৷
তালেবে ইলমের ছিনায় মমতার পরশে কুরআন সংরক্ষিত৷ কোটি কোটি তালেবে ইলমের বক্ষের মেমুরি কার্ডে কুরআন মেমুরাইজড৷
এই তালেবে ইলমরা যখন ভর্তির জন্য আসেন তারা যেনো নিরাপদে, সহজে এবং কম খরচে ভর্তি হতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে৷ সরকার কোনো কালেই তালেবে ইলমকে যথাযথ সম্মান করেনি৷ তবে খেলাফত যুগের কথা ভিন্ন৷ অনেক মুসলিম শাসক তালেবে ইলম হয়ে মাশায়েখের দরবারে হাজির হয়েছে তাও ইতিহাসে পাওয়া যায়৷ তবে আধুনিক সময়ে তা কল্পনাতীত৷ মোগল আমলেও তালেবে ইলমরা ভাতা পেতেন৷
আমরা যারা দেওবন্দ দেওবন্দ করি তারা যদি তালেবে ইলমের জন্য কী ধরণের সুযোগ সুবিধা দারুল উলূম প্রদান করে তার খোঁজ রাখি তাহলে লজ্জিত হতে হবে৷ এখনও তালেবে ইলমগন লেপ তোষক, মাসিক শিক্ষাবৃত্তি পায় দেওবন্দের তালেবে ইলম৷
আমাদের সময়ে সেই আশির দশকে মাদরাসায় বার বার ভর্তির প্রয়োজন ছিলো না৷ একবার ভর্তির টাকা লাগতো৷ পরের বছর পরের মারহালায় নাম উঠিয়ে দিতেন উস্তাযজী৷ এখন তো এক বছর পর সেই পরিচিত তালেবে ইলম অপরিচিত!
মোটা অংকের টাকা লাগে ভর্তির সময়৷ পরিমান জানি তবে বললাম না কারণ অনেকেই মন খারাপ করবেন এবং আমার সকল প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র মনে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন৷
সাধরণ শিক্ষার সাথে ভর্তির বিষয়টি তোলনা করা উচিৎ হবে না৷ নানা কারনেই৷
ভর্তি নিয়ে আরেকটি প্রস্তাবের ইচ্ছা আছে৷ কীভাবে সহজে ভর্তি করা যায়৷ আজ সহজ প্রস্তাব৷
প্রস্তাবনা:
কাদীম তালেবে ইলমদের বার বার ফরম পূরণ করে ভর্তির বিকল্প হলো, প্রতিটি তালেবে ইলমকে রেজাল্ট কার্ড দেওয়া হবে৷ কার্ডে মন্তব্য ঘরে উত্তীর্ণ লেখার পর ভর্তিযোগ্য লিখে নাযেমে তালীমাত সাহেব কার্ডে দস্তখত তরে দেবেন৷ ভর্তির নির্ধারিত সময়ে সেই রেজাল্ট কার্ড দেখিয়ে ভর্তি বিভাগে অভিভাবক বা তালেবে ইলম নিজেই ভর্তি হতে পারবে৷ এটি আসলে ভর্তি নয়৷ মূলত সেশন ফি টাইপের৷
ভর্তির ভিড় এড়াতে এবং সহজে ভর্তির এ পদ্ধতি একবার মানলে তার ফায়দা বোঝা যাবে৷
ভর্তির সময় হিসাব বোঝে এমন বড় তালেবে ইলমের সহযোগীতা নেওয়া যায়৷ যেমন প্রতি দুই শ্রেণির ভর্তি রশিদ পৃথক করে কয়েকজনকে দায়িত্ব দিলে তারা সহজেই ভর্তি করে নেবে৷
নতুন ছাত্রদের ভর্তি পরীক্ষা লিখিত হলে ভালো৷ টিসিসহ হলে আরও ভালো৷
মোদ্দাকথা পুরাতন তালেবে ইলমদের বার বার প্রতি বছর ভর্তি নয়৷ তারা সহজ ফি দিয়ে সহজে পরের শ্রেণিতে ইলম তলবের সুযোগ পাবে সে ব্যবস্থা করা৷
মনে রাখতে হবে ইলম শিক্ষা বাণিজ্য নহে৷ ইলমে দীন নিয়ে যাহারা বাণিজ্য করে তাহারা কওমী মাদরাসার কেহ নহে৷ তাহারা প্রাইভেট লিমিটেড কোং ।