শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:৩৬
Home / কওমি অঙ্গন / আলেম হবার মানচিত্র রচিত হোক
Al-Zaytuna Mosque, Tunis, Tunisia

আলেম হবার মানচিত্র রচিত হোক

Al-Zaytuna Mosque, Tunis, Tunisia
Al-Zaytuna Mosque, Tunis, Tunisia

মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ : মাদরাসার নামগুলো জামিয়া আরাবিয়া৷ জামিয়া অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়, আরাবিয়া মানে আরবী৷ আরবী বিশ্ববিদ্যালয়৷ পৃথিবীর সবচে অপব্যবহার হওয়া শব্দটি জামিয়া৷ এবং এই অপব্যবহার হয় বাংলাদেশের কওমী মাদরাসায়৷ বৃটিশরা বৃটিশি আচরণে মাদরাসার নাম দিয়ে ছিলো খারেজি মাদরাসা৷ নেসাবের দিকে নিসবত করে কেউ কেউ বলতেন দরসে নেজামি মাদরাসা৷ ভারত পাকিস্তানে আরবী মাদরাসা বা দীনি মাদরাসা এবং বাংলাদেশে মাদরাসাগুলোর নাম হয়েছে কওমী মাদরাসা৷

পাকিস্তান ও ভারতে কওমী মাদরাসা বলা হয় না৷ এই মাদরাসা শব্দের অর্থ স্কুল হয় আরব দেশে৷ আলমাদরাসা আলইবতেদাইয়া মানে প্রাথমিক স্কুল৷ আরবী সাধারণত দীনি শিক্ষার ফরজ অংশ স্কুলেই দেওয়া হয়৷ আলাদা মাদরাসার প্রয়োজন মনে করে না মধ্যপ্রাচ্যে৷ মধ্যপ্রাচ্যে মসজিদে মসজিদে বিকেলে রয়েছে তাহফিজুল কুরআনের আয়োজন৷ বিকেল থেকে ঈশা৷ শিশুরা সকাল থেকে বিকেলে স্কুলে৷ বিকেলে তাহফিজে৷ সাধারণ শিক্ষার সাথে আগ্রহীরা হাফেয হয়ে যাচ্ছে৷

আমাদের দেশে মোল্লা ও মিস্টার বানানোর গলদ তরিকা৷ তবে আমাদের ঐতিহ্যের মাদরাসাকে আলিয়া মাদরাসা বা স্কুল বানানোর প্রয়োজন নেই এবং এ দেশের জনতা মাদরাসা শিক্ষার বিকৃতি, বিলুপ্তি, অন্যায়ভাবে নিয়ন্ত্রণের কোনো অপচেষ্টা মেনে নেয় নাই৷ নেবেও না৷ মাদরাসা ছিলো, আছে, থাকবে৷
তবে মাদরাসাগুলো দাওরা খুলে জামিয়া বানাতে হবে এটি অযৌক্তিক৷ ‘গার হর শব শবে কদর বুদে শবে কদর বেকদর বুদে’র মতো অবস্থা এই দেশের জামিয়া৷ হঠাৎ মাদরাসার নাম আবার মারকায হয়ে যাচ্ছে৷ মারকাযুত… ৷ মাদরাসার নাম আবার ক্যাডেট হয়ে যাচ্ছে৷ … ক্যাডেট মাদরাসা৷

মারকায ও ক্যাডেট মাদরাসার সুন্দর কোনো নাম নয়৷

ক্যাডেট প্রতারণা৷ মারকায একটি হয়৷ জামিয়ার নামের সঙ্গে আবার এতিমখানা জুড়ে দিয়ে ধান্দাবাজির মানসিকতাও আছে৷ এতিমদের লালন পালন বিশাল খেদমত কিন্তু জামিয়ার সাথে লেজুড় লাগালে সেটি হয় হাস্যকর এবং ধান্দাবাজের আয়োজন৷ এতিমদের সুযোগ থাকবে জামিয়ায় বা মাদরাসায় কিন্তু মাদরাসার নামের অংশ বানিয়ে এতিম ব্যবসা করা হয় কোথাও কোথাও৷ যারা এতিমের যথাযথ খেদমত করেন তারা মানণীয়৷ বরণীয়৷ স্মরণীয়৷

দুই

বাংলাদেশের অধিকাংশ মাদরাসা জামিয়া হয়ে যাচ্ছে৷ আমি যে শহরে বসবসা করি সে শহরে জামিয়া মহিলাসহ বারোটি৷ মহিলা মাদরাসাও জামিয়া মহিলা মাদরাসা হয়ে যাচ্ছে৷ এবং শুরু থেকে তাহারা মাস্টার্স করছেন মাত্র আট বছরে৷ মহিলা জামিয়ার ক্লাসের নাম খুছুছী, মিযান, নাহবেমীর, কুদুরী, শরহে বেকায়া, হেদায়া, মেশকাত এবং দাওরায়ে হাদীস৷ হাজার হাজার মহিলা এই জামিয়াগুলো আবাদ করছেন এবং দ্রুত মাস্টার্স পাশ করছেন৷ কিন্তু ক্লাসের নাম ও পড়ালেখার নামে বাংলা নির্ভর কিতাবের নোট গাইডের যে ছড়াছড়ি তা অভিভাবকগন জানলে সেই মহিলা জামিয়ার চ্যান্সেলর বা ভাইস চ্যান্সলরদের কপালে পাদুকাবৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ শিক্ষাবাণিজ্যের বিরুদ্ধে কথা শুনি কিন্তু ইলমবাণিজ্য মুখে তালা৷ আমাদের বোর্ডগুলো আবার যে তালেবে ইলমকে বারো বছর শেষে তাকমীলের সনদ দেয় সেই একই সনদ প্রদান করে আট বছরে৷ … মাদারিসিল আরাবিয়া হয়ে আবার মাস্টার্সের পরীক্ষা ও সনদ বিতরণ করে কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড! মাদরাসাগুলো জামিয়ার সনদ দেয়৷
আমাদের সৌভাগ্য আমাদের শিক্ষার নানা কিছু তালেবে ইলমের অভিভাবক এবং অন্য কেহ তলিয়ে দেখতে চায় না৷
যে দিন চোখ খোলে দেখবে পাদুকার বারেশ পড়ার সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাবে না৷

তিন

আগে কওমীর তালেবে ইলম জামিয়া থেকে মাস্টার্স করে আলিয়া মাদরাসায় আবার দশম শ্রেণিতে দাখেল পরীক্ষা দিতো এখন দিতে যাচ্ছে ফাইভ বা এইটের পরীক্ষা৷
মাস্টার্স পাশ পরীক্ষা দেয় জেডিসি৷ অনেক তরক্কি৷ উন্নতি৷ প্রগতি৷ অনেক তালেবে ইলম আবার দাড়ি উঠে যাচ্ছে তাই কওমী তরক করে আলিয়ার নৌকায় পা রাখছে দাওরার আগেই৷ পরিণামের কী দশা তা আর বলতে হয় না৷ আমাদের চারপাশে এই কওমী প্লাস আলিয়ার জেনারেশন দেখলেই সব হল ও সমাধান হয়ে যাবে৷ এরা আবার কওমী ভায়া আলিয়া ভায়া কলেজে৷ কলেজ ভায়া ভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ৷ অধ্যাপিকা পড়ান শাড়ি পরিধান করে ইসলামিক স্টাডিজ৷ কওমীর তালেবে ইলম তখন ভাবতে থাকে যুগের সাথে তাল মিলাতে হবে৷ যুগের হাওয়ায় ভেসে ভেসে দাড়িটি ফেলে দিতে হবে৷ লুকিয়ে রাখতে হবে টুপিটাও৷ নতুন ফ্যাশন হিসেবে প্যান্ট এন্ড পাঞ্জাবি মাথায় ক্যাপ৷ কলেজের প্যান্ট, কওমীর পাঞ্জাবি ক্যাপটি নতুন যুগের৷ তবে ক্যাপটি উল্টিয়ে আবার৷

মহিলা মাদরাসা বা মহিলা জামিয়ার কেউ কেউ আবার যাত্রা শুরু করেছেন সেই দাখেল আলেমের পথে৷ কওমী শিক্ষাবোর্ডে ছবি জমা দিতে হয় না৷ মেয়েটি আলেমা হলো কালো বোরকা ও হাতমোজায় আচ্ছাদিত হয়ে৷ আলেমা তার যথেষ্ট নয়৷ মাস্টার্স শেষে করে মহিলাটি যখন আলিয়ায় দাখেল দিচ্ছে তখন চেহারাখোলা ছবি, কোচিং এ ডেটিং সুযোগ এবং বোরকা ও হাতমোজা না পড়ার অবাধ স্বাধীনতা৷ আধুনিকা হওয়ার বিশাল সুযোগ৷ বাড়তি তো এন্ড্রয়েড ফোন আছেই যা নিষিদ্ধ ছিলো কওমীর আঙ্গিনায়৷

এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে৷ মহিলাগুলো সাধারণত স্কুল থেকে কওমীতে ভর্তি হয়ে ছিলো৷ তাহলে স্কুল ভায়া মহিলা মাদরাসা বা মহিলা জামিয়া ভায়া আলিয়া ভায়া কলেজ৷ মহিলা মাদরাসার ছাত্রীদের অভিভাবকরা আবার বেশী বিশ্বাস করেন পোষ্যদের৷ মেয়ে হিসেবে কত দাবি!

চার

আমাদের জামিয়াগুলোতে গবেষণার কোনো সিস্টেম নাই৷
সিলেবাস নিয়ে কোনো পর্যালোচনা নেই৷ পাঠ্যতালিকাকে অপরিবর্তণীয় মনে করা হয়৷ কিতাবকেই মাকসাদ বানানো হয় ফনকে নয়৷ যোগ্যতা হলো কি না তা বিবেচনা না করে উপরের ক্লাসে তরক্কী দেওয়া হয়৷ যার যার মতো রচিত হয় সিলেবাস৷ পৃথিবীতে শিক্ষার নামে এতো অরাজকতা কোনো দেশে আছে কি না আমার জানা নেই৷

ইসলাম সৌন্দর্যের নাম৷ শৃংখলার অনেক গুরুত্ব অসলামে৷ একতা ও সমতার অনেক তাকিদ৷ কিন্তু ইসলামী শিক্ষায় এতো অনিয়ম কেন? কেন এতো মত ও পথ৷ কওমী মাদরাসার শিক্ষাকে কেন হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? পদ ও পদবীর জন্য এতো হা হুতাশ কেন? নতুন প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্ম কওমীর কর্নধারদের কীভাবে মূল্যায়ণ করবে? নতুন পৃথিবীর এই সন্তানরা কওমীর কী বিষয় নিয়ে গৌরব করবে? যে অভিভাকরা আমাদের বিশ্বাস করে ছেলেকে মানুষ বানানোর জন্য পাঠালো মেয়েকে দীনদার বানানোর জন্য পাঠালো কতটুকু জিম্মাদারি পালন হলো আমাদের? মানুষ কি বানাতে পারলাম আমরা?

শত শত প্রশ্ন কিলবিল করে মাথায়৷ কিন্তু আমার কাছে সমাধান নেই অনেক প্রশ্নের৷

পাঁচ
তবুও আমরা কওমী মাদরাসা৷ আমাদের ঐতিহ্যের পাঠশালা মাদরাসা৷ হাজার বছর ধরে জাতিকে পথ দেখাচ্ছে৷ আমরা ইমাম৷ মিম্বর ও মেহরাব আমাদের৷ আর কি আমাদের? কবে হবে আমাদের সংসদ? প্রশাসন? দেশের নানা সেক্টর? হবে হবে একদিন সব হবে৷

প্রস্তাবনা:

এইসব অরাজকতা বন্ধে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে৷ কথা বলতে হবে৷ আত্মসমালোচনা করতে হবে৷ মতবিনিময় করতে হবে৷ প্রজন্ম নিয়ে ভাবতে হবে৷ চিন্তা করতে হবে আগামী নিয়ে৷ আমাদের পথ রচনা করতে হবে নতুন পথ৷ একুশ শতকের মহাসড়ক৷
আলেম কীভাবে হবে তা নিয়ে শুরু হোক ভাবনা৷ গবেষণা৷

দরবারি আলেম নয়৷ সাহসী আলেম৷ চিন্তক আলেম৷ লেখক আলেম৷ দাঈ আলেম৷ উম্মাহর দরদি আলেম৷

কীভাবে আলেম হবে বিষয়ে একটি মানচিত্র রচনার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক৷
বোর্ডগুলো যদি উদ্যোগ নয় তাহলেই ফলাফল পাওয়া সহজ৷
বোর্ডগুলো আলেম হওয়ার মানচিত্র রচনা করবে এই প্রত্যাশা৷

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে জরুরী কিছু কথা!

কমাশিসা ডেস্ক: শুক্রবার ২৫সেপ্টেম্বার ২০২০. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যখন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ...