আমাদের সবার অনলাইন অ্যাকাউন্টই কমবেশি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকির মধ্যে আছে। সম্প্রতি হ্যাকিংয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য হ্যাকারদেরই দেয়া সাতটি মূল্যবান পরামর্শ প্রকাশ করেছে সিএনএন। যেহেতু খোদ হ্যাকারদেরই দেয়া এই পরামর্শ, তাই এটি মেনে চললে আপনি অনলাইনে সুরক্ষিত থাকবেন বলেই আশা করা যায়। বিস্তারিত নিয়ে লিখেছেন নাজমুল হোসেন
সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন কোনোভাবেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছেন না। ব্যাপারটা নিয়ে যখন চিন্তা করছেন, এমন সময় কোনো বন্ধুর কাছ থেকে আপনার অদ্ভুত সব ফেসবুক স্ট্যাটাসের ব্যাপারে ফোন পেলেন। বুঝতে বাকি থাকল না আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে। আর এ জন্যই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রক্ষা করতে সচেতন হওয়া জরুরি।
ফেসবুক হ্যাকিং প্রতিরোধ
কাউকেই নিজের পাসওয়ার্ড জানাবেন না। আর নিরাপদ সংযোগ ব্যবহার করে ওয়েবসাইট দেখার ব্যাপারটা সব সময়ই অগ্রগণ্য। কাজ শেষে অ্যাকাউন্ট থেকে লগ-আউট বা বের হতে ভুলবেন না।
নিউজ ফিডে থাকা সন্দেহজনক কোনো ওয়েব ঠিকানার লিংকে ক্লিক করবেন না। নিশ্চিত না হয়ে কোনো অ্যাপ, গেম বা ভিডিও দেখার লিংকে ক্লিক না করাই ভালো। তৃতীয় পক্ষের কোনো প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সেগুলো পরিহার করতে হবে। কোনো অ্যাপ ব্যবহার না করলে ফেসবুক থেকে সেটি মুছে দিন।
নিজের অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত আরেকটি ই-মেইল ঠিকানা যোগ করুন। কোনো কারণে নিজের প্রোফাইল হ্যাকড হলে সেই ই-মেইলে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের তথ্য পাঠিয়ে দেবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
অপরিচিত কারো বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করার আগে যাচাই করে নিন। নিজেদের মধ্যে চেনাজানা ছাড়া কাউকে বন্ধু বানানো মানে তাকেও আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দেখার অনুমতি দিয়ে দিলেন। এ ছাড়া কোনো আর্থিক বা ব্যক্তিগত গোপন তথ্য জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট না করাই ভালো।
নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। প্রতিবার নতুন একটি পাসওয়ার্ড দিন। পাসওয়ার্ড হিসেবে নিজের জন্মতারিখ, ফোন নম্বর বা জন্মস্থানের নাম দেবেন না। ফেসবুক সেটিংস থেকে লগইন নোটিফিকেশন অপশনটি চালু করতে ভুলবেন না।
কম্পিউটারের নিরাপত্তাবিষয়ক সফটওয়্যারগুলো সব সময় হালনাগাদ করে রাখুন। বর্তমানে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার সহজতম উপায় হলো ফিশিং আক্রমণ। এ জন্য ফিশিং সাইটগুলোকে ধরার জন্য সব সময়ই বিশ্বস্ত কোনো অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এর ফলে ক্ষতিকর কি-লগার (যে প্রোগ্রাম গোপনে আপনার কম্পিউটারের প্রতিটি বোতাম চাপার তথ্য লিপিবদ্ধ করে হ্যাকারকে পাঠিয়ে দেয়) থেকেও কম্পিউটার রক্ষা পাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভাইরাস ডেটাবেস হালনাগাদ করা, ফায়ারওয়াল চালু রাখা, সর্বশেষ সংস্করণের ব্রাউজার ব্যবহার এবং সময়ে সময়ে অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা হালনাগাদ নামিয়ে ইনস্টল করা।
সর্বোপরি ফেসবুক অনেকটা ভালো কোনো বন্ধুর মতো। তাই একে যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত আর নিরাপদ রাখতে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করা উচিত।
সম্প্রতি রাশিয়ার হ্যাকাররা ৪৯ লাখ ৩০ হাজার জিমেইল অ্যাকাউন্টের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড চুরি করে তা অনলাইনে প্রকাশ করেছে। যেসব গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এখনো অ্যাকাউন্টে ঢোকা যাচ্ছে বলেই হ্যাকারদের দাবি। গুগলের মেইল সার্ভিস জিমেইল, গুগল ড্রাইভ, ইউটিউব, ম্যাপ প্রভৃতি সেবার ক্ষেত্রেও চুরি করা অ্যাকাউন্টের তথ্য ব্যবহার করে কাজে লাগাতে পারে দুর্বৃত্তরা। যদিও গুগল কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট হ্যাকের কথা অস্বীকার করেছে। কারণ গুগলের স্বয়ংক্রিয় অ্যান্টি-হাইজাকিং সিস্টেম এই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে গেলে তা বন্ধ করে দেবে। গুগল দাবি করেছে, তারা গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাকের বিষয়টি অবগত। তবে গুগলের কোনো সিস্টেম হ্যাক করতে পারেনি সাইবার দুর্বৃত্তরা। ম্যালওয়্যার বা ফিশিংয়ের মাধ্যমে লগ ইন তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে দুর্বৃত্তরা।
সৌজন্যে : অন্যদিগন্ত