আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ‘তুরস্কে ফের অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হলে আবারো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করব। আমি আমার প্রিয় স্বদেশ ও আমার প্রিয় ইসলাম ধর্মের জন্য যুদ্ধ করব এবং আমি এতে ভীত হব না। তারা দেখেছে তুর্কিরা ভয়ে পালিয়ে যায় না।’ বলছিলেন ১৪ বছর বয়সী এক তুর্কি কিশোরী আদবিয়ি গুল ইসমাইলুগলো।
গত ১৫ জুলাই তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের রুখতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে আসে তাদেরই একজন এই আদবিয়ি গুল ইসমাইলুগলো। সেদিন অন্য আহতদের মতো তিনিও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদুলো এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
কিশোরী ইসমাইলুগলো গুল জানান, সেদিন তিনি ইস্তানবুলের মেট্রোপলিটন ভবনের সামনের রাস্তায় সৈন্যদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। বুলেট তার বাহুকে বিদ্ধ করে পিঠের দিকে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘টিভিতে এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা দৃশ্য দেখা মাত্রই আমি অবাক হয়ে যাই। আমাদের কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে তা আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।’
সাহসী এই কিশোরী বলেন, ‘এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা দমন করতে তুর্কি নাগরিকদের রাস্তায় নেমে আসার জন্য প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান আহ্বান জানালে আমি তৎক্ষনাৎ তাদের প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নেই।’
‘আমার সঙ্গে আমার মা, বাবা এবং বোনও বেরিয়ে আসে। প্রধমে আমরা ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম, কিন্তু অভ্যুত্থান চেষ্টাকারী সৈন্যরা ব্যারিকেড দেয়ায় আমরা সেখানে যেতে ব্যর্থ হই।’ বলছিলেন এই কিশোরী।
তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের পায়ের দিকে গুলি ছুঁড়ার পূর্বে একজন সৈনিক প্রথমে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়তে তাকে। পরে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সৈন্যরা সরাসরি তাদের দিকে গুলি ছুঁড়ে।’
গুল বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম যে, তারা আমাদেরই সৈনিক এবং তারা আমাদের গুলি করবে না। তারপরেও তারা যদি আমাদের গুলি করে আমরাও প্রস্তুত ছিলাম শহীদ হওয়ার জন্য এবং আমাকে ঠিক ওই মুহূর্তেই সৈন্যরা গুলি করে। আমার বাহুতে গুলি লাগার পর আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে যাই। আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, তারা সত্যি আমাদের গুলি করতে পারে।’
‘কিন্তু পরক্ষণেই আমি স্বস্তিবোধ করি এই ভেবে যে, আমি দেশের জন্য শহীদ হতে যাচ্ছি। প্রথমত আমি ভেবেছিলাম যে, এটা একটা প্লাস্টিক বুলেট ছিল কিন্তু আসলে এটা তা ছিল না।’ কিশোরীর ভাষ্য।
গুল জানান, তিনি দেশপ্রেমের শিক্ষা নিয়ে বড় হয়েছে এবং ফের একই ধরনের ঘটনা ঘটলে আবারো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
গুল বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে আমি দুঃখ করি না। এখন আমি সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে পুনরায় আমি রাস্তায় নেমে মানুষের সঙ্গে যোগ দিতে পারি। যতটা সম্ভব আমি আমার স্বদেশ এবং আমার ধর্মের জন্য যুদ্ধ করব এবং আমি এতে ভীত হব না। তারা দেখেছে (অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীরা) যে, তুর্কিরা ভীত না, তারা ভয়ে পালিয়ে যায় না।’ ওই সাক্ষাৎকারে তিনি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে দেখা করাও ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তুর্কি সরকার বলেছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ফেতুল্লাহর অনুসারীরা এই অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে জড়িত। তুরস্ক এ ঘটনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফেতুল্লাহ গুলেনকে অভিযুক্ত করেছে এবং তার তথাকথিত সমান্তরাল রাষ্ট্র মতবাদ এই ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পেছনে কাজ করেছে। গুলেনকে বিচারের সম্মুখীন করতে তাকে তুরস্কের নিকট হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গত ১৫ জুলাই রাতের এই অভ্যুত্থান চেষ্টার ঘটনায় অন্তত ২৬৫ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ১৬১ জন গণতন্ত্রপন্থী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক। নিহত বাকিরা অভ্যুত্থানকারী। আহত হয়েছেন ২ হাজার ১০০ জন।
সূত্র: আনাদুলো এজেন্সি/ সূত্র. আরটিএনএন