ইবরাহীম খলিল : চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটছে কেফায়েতুল্লাহর দিনগুলো। অভাব-অনটনে জেরবার। হাতখরচের একটি পয়সাও নেই। কোথায় যান? কার কাছে হাত পাতেন? এ-যে বড়ো লজ্জার! বড়ো অপমানের! খাবার অবশ্য ফ্রি পান বোর্ডিং থেকে। কিন্তু অন্যান্য খরচ? তেল-সাবান, খাতা-কলম, জামাকাপড়—এসবের কোনো ব্যবস্থা নেই। কী যে করবেন ভেবে পাচ্ছেন না কিছুই।
গায়ের জামাটা ময়লা হয়ে আছে ধুতে পারছেন না। লুঙ্গিটা ছিঁড়ে গেছে কিনতে পারছেন না নতুন লুঙ্গি। টুকিটাকি আরো কতো কী দরকার! কিন্তু কেনার উপায় নেই। বাবার কাছে যে চাইবেন সে ভরসা নেই। সংসারের ঘানি টেনে বাবার এমনিতে প্রাণান্ত দশা। মায়ের নুন আনতে পানতা ফুরায়। কিন্তু আত্মমর্যাদাবোধ তাদের টনটনে। কারো কাছে হাত পাতবেন না মরে গেলেও। অভাব-অনটনের কথা মুখ ফুটে বলবেন না কিছুতেই। কেউ যেচে সাহায্য করতে চাইলেও নিতে চান না। এমনি তাদের মর্যাদাবোধ।
অবশেষে কেফায়েতুল্লাহর মনে হলো নিজে কিছু করবেন। অন্তত লেখাপড়ার খরচটা চলে যায়, আবার লেখাপড়ারও ক্ষতি না হয় এমন কিছু। কিন্তু কী করবেন? ইমামতি মোয়াজ্জিনি অবশ্য পাওয়া যায়, কিন্তু তাতে ঝামেলা বেশি। এরচে’ সহজ একটা কাজ বেছে নিবেন। তখন সুতোর টুপির খুব প্রচলন ছিলো। বিচিত্র কারুকাজ করা টুপি। রঙিন সুতোয় নকশা করা টুপি। তিনি টুপি বুনন শিখে নিলেন। মেধাবী ছিলেন। একবার দেখেই শিখে ফেলেন টুপি বোনার কলাকৌশল। শুরু হলো সৃজনশীল কারুকাজ। নিষ্প্রাণ সুতো দিয়ে বিচিত্র আর্ট। জীবন্ত নকশা। দুদিনে একটি টুপি বুনতেন। এতে যা আসতো তা দিয়ে খরচ নির্বাহ করতেন।
অনেক সময় দরসের পেছনে বসে টুপি বুনতেন। আবার সবক ঠিকই ধরতেন। পড়াও শোনাতেন অন্যদের চেয়ে ভালো। অন্যরা বরং তার কাছ থেকে বুঝে নিতো। টুপি বুনে বুনে অন্যদের চেয়ে বেশি বুঝতেন। পরীক্ষায়ও পেতেন ভালো নম্বর। উস্তাদগণ তাই কিছু বলতেন না। দরসের ফাঁকে খাতায় টুপির নকশা আঁকতেন। বিচিত্র সব নকশা। সেসব নকশা আবার নিখুত শিল্পীর মতো টুপির গায়ে বসাতেন। তাঁর শিল্পকুশলতা ও কারুনৈপুণ্য ছিলো অসাধারণ। আজও সেসব বিচিত্র নকশা তাঁর খাতায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে।
বি.দ্র. তিনিই খ্যতিমান আলেমে দীন মুফতি কেফায়াতুল্লাহ রহ.