বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:৩২
Home / মুসলিম বিশ্ব / একটি পরিকল্পিত ভয়ঙ্কর সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ হওয়ার কাহিনী : একটি ছোট্ট নির্মোহ বিশ্লেষণ-১

একটি পরিকল্পিত ভয়ঙ্কর সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ হওয়ার কাহিনী : একটি ছোট্ট নির্মোহ বিশ্লেষণ-১

Turky2ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী : এক. একটু পেছনের কথা :

১৯৯৭ সাল। নাজমুদ্দীন আরবাকান গেলো বছর ক্ষমতায় এসেছেন। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী তিনি। ধারণা করা হয়; উসমানিয়া সালতানাত ধ্বংস করার পর যে-বর্বর আতাতুর্কীয় ধর্মনিরপেক্ষতা চেপে বসেছিলো— তুর্কী ইসলামপ্রিয় জনতার ঘাড়ে, আরবাকানই তার রেশ টেনে ধরেন। কৌশলে ইসলামের অবিনাশী চেতনার মশালকে তুর্কীদের মনে তিনিই জ্বেলে দিতে থাকেন। তাই আরবাকান থেকে এরদুগান— আতাতুর্কীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ভেঙে ভেঙে দুর্বল হয়ে যাওয়ার আরেক নাম।
মূলত: এ কারণেই আরবাকানকে ক্ষমতা থেকে অনেক আগেই সরে দাঁড়াতে হয়েছিলো।
বুকে জ্বালা ও ক্ষোভ নিয়ে।
পর্দা চলবে না।
কুরআন মুখস্থ করা চলবে না।
ইমাম-খতিব তৈরি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
সুফী পীরদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে—
এ ধরনের অপমানকর চুক্তিতে সই করতে হয়েছিলো আরবাকানকে। এর আগে ইসরাঈলের সাথে বন্ধু-চুক্তি করতে হয়েছিলো তাকে। দশদিন তিনি বিরত থেকেছিলেন এ বজ্জাতদের সাথে চুক্তিপত্রে সাক্ষর করা থেকে। কিন্তু প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করা হলো তার উপর। অবশেষে সব মেনে নিতে হলো তাকে। বিন্তু মনটা রাগে-ক্ষোভে কেবল জ্বলতে লাগলো। তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন। পরে তাকে জেলে যেতে হলো। বারবার নতুন দল গঠন করলেন। বারবারই সে দল নিষিদ্ধ হতে লাগলো। চারবার দল গঠন করলেন। তিনবারই নিষিদ্ধ হলো। তিনি ছিলেন সুযোগ্য প্রকৌশলী। দক্ষ রাজনীতিক। ইউসুফ গুল এবং এরদুগান তারই সৃষ্টি। অন্য শব্দে— আরবাকানের দুঃখজনক প্রস্থানই জন্ম দিয়েছিলো আজকের ইউসুফ গুল এবং মহাবীর এরদুগানের।

এরপর এলো এরদুগানের শাসনকাল। যা শুরু হওয়ার পর তুর্কীতে যেনো উন্নয়নের ঝরনাধারা বইতে লাগলো। সত্যপ্রিয় এরদুগানের সত্যপ্রীতি এবং মাজলুমের পক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থান— শত্রুকে ভাবিয়ে তুলতে লাগলো।
কখনো তিনি হুঙ্কার দিচ্ছেন— সিসিকে।
কখনো তিনি জ্বলে উঠছেন— বাশশার আল আসাদের বিরুদ্ধে।
কখনো বলছেন— থামুন হে পুতিন!
কখনো দাঁড়াচ্ছেন তিনি অবরুদ্ধ গাজার পাশে। ইসরাঈলকে বলছেন— গাজা একা নয়! আমরা আছি পাশে!
সব মিলিয়ে অবস্থা (দুশমনের চোখে) এতো্টাই নাজুক পর্যায়ে চলে গেলো যে, এরদুগানকে টেনে না-নামালে আতাতুর্কীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের শেষ মশালটাও বুঝি আর তুর্কীতে প্রজ্বলিত রাখা যাবে না! এবং উসমানিয়া সালতানাতের ছায়া থেকে মুক্তি লাভেরও বুঝি আর আশা করা যায় না। তাই আরবাকানের সেই শত্রুরা নেড়েচেড়ে বসলো। কূটচাল চালতে লাগলো। রাতের আঁধারে পর্দার আড়ালে।
কেনো বরদাশত করবে তারা এই ইউসুফ গুল, এরদুগান ও দাউদ উগলুদেরকে?

যৌক্তিক কারণেই এরদুগানের বিরুদ্ধে ওরা মাঠে নেমে পড়লো। গোপনে। তারপর এই প্রকাশ্যে। ঘটে গেলো ভয়ঙ্কর ছকবাঁধা কূটিল ধূর্ত বীভৎস কালো এই অভ্যুত্থান।
কিন্তু দুশমন বুঝতে পারে নি, এই তুর্কী এখন আগের সেই তুর্কী নেই। দুশমন ভেবেছিলো— আরবাকান চাপে পড়েই কাত হয়ে গিয়েছিলেন। এরদুগান টেংকের মুখেও কি কাত হবেন না?

দুই. শির দেগা নেহি দেগা আমামা :

বিষয়টা এমনই। সিদ্ধান্ত নিতে এরদুগান একটুও দেরি করেন নি। তিনি জানেন, দেশের জন্যে, মানুষের জন্যে তিনি কী করেছেন।মানুষকে তিনি কতো ভালোবাসেন এবং মানুষ তাঁকে কতো ভালোবাসে। তাই ছোট্ট একটি ভিডিওবার্তায় মধ্যরাতে মিলিয়ন মিলিয়ন তুর্কী এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো রাজপথে। গুলির সামনে। টেংকের সামনে। লালচোখে ঘোষিত কার্ফিউ উপেক্ষা করে।
প্রথম প্রহরেই অমন নজিরবিহীন প্রতিরোধের মুখে পড়লো এই ঘৃণিত অভ্যুত্থান, যা কল্পনা করাও সম্ভব ছিলো না। কী ধারালো কণ্ঠ ছিলো ওদের— বিমানবন্দর আমাদের নিয়ন্ত্রণে! গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। সবাই গৃহে অবস্থান করুন! কার্ফিউ শুরু হয়ে গেছে!
কিন্তু টেংকের সামনে বীর জনতা যখন শুয়ে পড়তে লাগলো। অবলা নারী যখন হাতের কাছের বাঁশ নিয়েই টেংকের সামনে লাল চোখে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো, আস্তে আস্তে অভ্যুত্থানকারীদের মুখ পাংশুবর্ণ হতে লাগলো। ছুটে পালাতে লাগলো সৈন্যরা টেংক থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে। কিন্তু পালাবার সময় যে নেই! এই যে নেমে এসেছে তুর্কী মায়ের দামাল ছেলেরা। বাস্! একটা একটা করে ওরা ধরতে লাগলো গাদ্দার বেঈমান অর্থলুলোপ সৈন্য নামের অমানুষকে!

তিন. বীর সিপাহসালার এরদুগানের অভ্যুত্থান পরবর্তী ভাষণের উপর এক ঝলক :

* প্রিয় তুর্কী জনতা! বিচলিত হওয়ার কিছু নেই! সেনাবাহিনীর একটি ছোট্ট বিভ্রান্ত দল এই জঘন্য কাজে অংশ নিয়েছে! এরা ঐক্যের দুশমন। এরা বাইরের ইশারায় ওঠা-বসা করে! এদেরকে চড়ামূল্য দিতে হবে!
*আল্লাহর ইচ্ছায় এ বিদ্রোহ আমাদেরকে পথ দেখাবে শুদ্ধি অভিযানের দিকে। তুর্কী বাহিনীর গাদ্দার হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তুর্কী বাহিনীকে শতবাগ পরিচ্ছন্ন ও ওয়াফাদার হতে হবে। এ বাহিনী সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ-এর বাহিনী!
*এই দেখুন ঘড়ি! এখন রাত কয়টা বাজে? এতো রাতে কেনো এতো মানুষ নেমে এসেছে রাস্তায়?! বুঝতেই পারছেন আমাদের ঐক্য অটুট। অবিচ্ছিন্ন। আমরা তছনছ করে দিতে জানি দুশমনের ষড়যন্ত্রের সাজানো প্রাসাদ!
*যারা এ বিদ্রোহে যোগ দিয়েছে, পেছন থেকে ইন্ধন যুগিয়েছে, তাদের সাথে আমাদের লড়াই চলবে! প্রয়োজনে এ পথে আমরা জীবন বিলিয়ে দেবো!

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিশ্ব ইজতেমায় গেলে কি হজ্বের সওয়াব মিলে?

খতিব তাজুল ইসলাম: তাবলীগ জামাতের সংকট ও কয়েকটি প্রশ্ন? তাবলীগ জামাত নিয়ে যে সংকট সেটা ...