আব্দুল্লাহ আল মাসউদ : দাওরায়ে হাদিসের বার্ষিক পরীক্ষায় তিরমিজি শরিফের একটা প্রশ্ন ছিল, দ্রুত পুলসিরাত পার হওয়া যায় কোন আমলের মাধ্যমে? এই বিষয়ে দরসে কোন আলোচনা হয় নি আমি নিশ্চিত ছিলাম। উত্তর বানিয়ে লিখবো সেই সুযোগও নেই। তাই উত্তরপত্রে কিছু জায়গা খালি রেখে পরবর্তী প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে শেষ করলাম।
সবশেষে বসে বসে ভাবছিলাম, কি এমন আমল হতে পারে যা পুলসিরাত দ্রুত পার করে দিবে? ভাবছি আর ভাবছি! কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কারণ দরসে এই বিষয়ে কিছুই বলা হয় নি। এই অংশ দৌঁড়াদৌঁড়ি করে পড়া হয়েছে। সুতরাং তাকরির করার সুযোগ ছিল না। আর দাওরা হাদিসের পারীক্ষায় না পড়ানো বিষয়ে প্রশ্ন করাটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ এখানে একজন ছাত্রের সামগ্রিক জ্ঞান বিচার্য হয়। তো হঠাৎ আমার মাথায় এলো, হিফজখানায় থাকতে ‘নুজহাতুল কারী’ নামে ছোট একটা বই পড়ানো হত। বেফাক পরীক্ষায় সেটার পরীক্ষাও হয়েছিল। সেখানে পড়েছিলাম, যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে বিদ্যুতের ন্যায় দ্রুত গতিতে সে পুলসিরাত পার হতে পারবে। আমি আনন্দিত হয়ে উঠলাম এবং সেই রেখে যাওয়া খালি জায়গাটাতে উত্তরটা লিখে দিলাম।
তারপর আমার মনে যে ভাবনা আসলো তা হল, কোন জ্ঞানই মূল্যহীন নয়। আট-দশ বছর আগে পড়া পিচ্চি একটা বইয়ের এই জ্ঞান যে আমাকে এতোদিন পরে দাওরা হাদিসের শেষ পরীক্ষাতে, যার নাম্বারের উপর ভিত্তি করে সনদপত্র দেওয়া হবে, তিরমিজি শরিফের মতো একটি হাদিসের কিতাবের প্রশ্নপত্রের উত্তর প্রদানে সহায়তা করবে সেটা কি আমি কখনও কল্পনা করেছিলাম! আসলে জ্ঞান হল স্বর্ণের ন্যায়। যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন তা অত্যন্ত দামি। যেমন স্বর্ণ যদি শস্যদানার সমানও হয় তবুও তা অত্যন্ত দামি। এটি মাটি বা পাথরের মতো নয় যে এক চিমটি বা এক দুই মুঠোর কোনই দাম নাই। বরং অনেকগুলো হলে তখন তার মূল্য আছে বলে বিবেচিত হয়।
পারীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পাবাার পর দেখা গেল, তিরমিজি শরিফে সর্বোচ্চ নাম্বার আমিই পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ফাখরা!