শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:১০
Home / আকাবির-আসলাফ / মাদীনার শেষ সিপাহসালার (দুই)

মাদীনার শেষ সিপাহসালার (দুই)

Khairuddin umarমুহাম্মাদ সাজিদ করিম : অভিজাত পরিবারের সন্তান ফাখরুদ্দীন পাশার জন্ম ১৮৬৮ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের ‘রুজ’ শহরে। এটি বর্তমান বুলগেরিয়ার একটি শহর। ঐ সময় সে এলাকা রাশিয়া ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের যুদ্ধের একটি ফ্রন্টে পরিণত হওয়ায় তার বয়স যখন দশ বছর, তখন তার পরিবার রাজধানী কন্সট্যান্টিনোপলে ( বর্তমান নাম ইস্তামবুল) চলে আসেন। তরুণ ফাখরি ওয়ার একাডেমীতে ভর্তি হন এবং ২০ বছর বয়সে সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েট করেন। তার মিলিটারি ক্যারিয়ারের প্রথমে তিনি আর্মেনিয়া, কন্সট্যান্টিনোপল ও লিবিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। বলকান যুদ্ধ আরম্ভ হলে তাকে লিবিয়া ফ্রন্ট থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে ৩১ ডিভিশনের কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। তার নেতৃত্বাধীন বাহিনী বুলগেরিয়ার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক শহর অ্যাড্রিয়োনোপল যা একসময় উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, তা বিজয় করতে সক্ষম হয়। আনওয়ার পাশার সাথে ফাখরি পাশা বিজয়ীর বেশে শহরে প্রবেশ করে সেখানে আবার উসমানীয় পতাকা উত্তোলন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি প্রথমে ছিলেন ইরাকের মসুলের মিলিটারি কমান্ডার। ২৩ মে, ১৯১৬ তে তাকে মাদীনার কমান্ডার ও গভর্নর করে পাঠানো হয়।
মাদীনার অবরোধ ও যুদ্ধ সম্পর্কে বোঝার জন্য ‘আরব বিদ্রোহ’ সম্পর্কে জানা আবশ্যক। কিন্তু এখানে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই, তবে সংক্ষেপে এর পটভূমিটুকু উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিংশ শতকে জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্প মুসলিম বিশ্বে ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কন্সট্যান্টিনোপলে জাতীয়তাবাদী ও সেকুলার তুর্কিরা সুলতানকে হঠিয়ে ক্ষমতার হর্তা-কর্তা হয়ে দাড়ায়। তাদের নিকট ইসলামের চেয়ে “মাতৃভূমি”র গুরুত্ব ছিল বেশী। আরব বিশ্বের জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা আরব জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে বংশানুক্রমে মক্কার শাসনকর্তা ছিলেন রাসূলের (সঃ) পরিবারের ৪০ তম বংশধর শরীফ হুসেইন বিন আলী। তার মক্কার ইমারাত ইস্তাম্বুলের অধীনে থাকলেও ছিল স্বায়ত্তশাসিত। শরীফ হুসেইন ছিল দুর্নীতিপরায়ণ, সুবিধাবাদী, ক্ষমতাপিপাসী ও উচ্চাভিলাষী। যখন সে দেখলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য চারিদিক থেকে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন সে গোপনে ব্রিটিশদের সাথে যোগাযোগ করে। সে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়, বিনিময়ে ব্রিটেনও তার দাবী অনুযায়ী আশ্বাস দিলো উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর তাকে ‘সমগ্র আরব ভূমির রাজা’ বানিয়ে দেয়া হবে।
ব্রিটেনের কাছ থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে ১৯১৬ সালের ১০ জুন শরীফ হুসেইন পবিত্র মক্কায় বিদ্রোহ আরম্ভ করে। জুনের প্রথম দিকেই মক্কার প্রায় সব সৈন্য নিয়ে হিযাজের গভর্নর আরেক স্থানে গিয়েছিলেন। মক্কায় তখন শুধু ১০০০ উসমানীয় সৈন্য বাকী। গভীর রাতে এ সকল সৈন্য যখন ঘুমন্ত, শরীফ হুসেইন বন্দুক থেকে ফায়ার করে তার ৫,০০০ এর মত বাহিনীকে সিগন্যাল দেয়। শুরু হয় ঘুমন্ত সৈন্যদের উপর গুলিবর্ষণ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক সৈন্য মারা যান। হারাম, যেখানে রক্তপাত নিষিদ্ধ সেখানে গাদ্দারি করে মুসলিমদের রক্ত ঝরানো শুরু হয়। অতি স্বল্প গোলাবারুদ ও খাবার সত্ত্বেও মক্কার জিরওয়াল ব্যারাকে থাকা হাতে গোনা কিছু সৈন্য এক অভূতপূর্ব প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আগেই গ্রেফতার হওয়া ডেপুটি গভর্নর সেই সৈন্যদের আদেশ দেন আত্মসমর্পণ করতে। কিন্তু তারা অস্বীকৃতি জানায়। এই সামান্য সংখ্যক বীরকে পরাভূত না করতে পেরে শরীফ হুসেইন ব্রিটিশদের কাছে ধর্না দেয়। সুদানে থাকা ব্রিটিশ জেনারেল রেগিন্যাল্ড উইনগেট তার সাহায্যে দুটি আর্টিলারি পাঠিয়ে দেয়। সেই আর্টিলারি দিয়ে এবার ক্রমাগত জিরওয়াল ব্যারাকে শেলিং করা শুরু হয়। তিন সপ্তাহ জান প্রাণ দিয়ে ব্রিটিশদের পুতুল বাহিনীকে মোকাবেলার পর মক্কার জিরওয়াল ব্যারাকের বীর সৈন্যরা তাদের রবের সাথে সাক্ষাত করতে চলে যান, তবু তারা আত্মসমর্পণ করেননি। পবিত্র মক্কায় নিজেদের সৃষ্ট এই ধ্বংসযজ্ঞের ছবিকে ব্যবহার করে উল্টো ব্রিটিশ যুদ্ধমন্ত্রক ও আরব জাতীয়তাবাদীরা প্রোপাগান্ডা চালায় “দেখ, কিভাবে তুর্কিরা পবিত্র মক্কায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে”।
(চলবে)

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙে গেছে: সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী

নাজমুল মনযূর: আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙেছে ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা সেই মুসলমানদের। এমন কথাই ...