মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৪৫
Home / কওমি অঙ্গন / মাদরাসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (শেষ)

মাদরাসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (শেষ)

madrasa_mainআবুল হাসান আলী নদভি :

আমাদের করণীয়

আমার প্রিয় তালিবানে ইলম! ভালো করে বুঝে নাও যে, এ মহান নেয়ামতের উপযুক্ত হতে হলে কী কী গুণ অর্জন করা এবং ন্যূনতম কোন কোন চাহিদা পূরণ করা দরকার?

প্রথমত নিজের মাঝে শোকর ও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি সৃষ্টি করো। নির্জনে আত্মসমাহিত হয়ে চিন্তা করো যে, আল্লাহ তোমাকে নবীওয়ালা পথে এনছেন। এখন তুমি যদি আগের অন্ধকারে ফিরে যাও কিংবা এখানে থেকেও আলো গ্রহণে ব্যর্থ হও তাহলে এ তোমার দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি বলো?

এ পথে তুমি প্রিয় নবীর পুণ্য পদচিহ্ন দেখতে পাবে এবং ইলমে নবুওয়তের আলো ও নূরের অধিকারী হবে। সবচে’ বড় কথা, এ পথে তুমি তোমার আল্লাহর রিযা ও সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবে।

দ্বিতীয়ত নিজেকে যথাসাধ্য মাদরাসার পরিবেশ অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করো। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের নিজস্ব কিছু চাহিদা আছে এবং প্রতিটি পথের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সফলতা লাভের জন্য সেই চাহিদাপূরণ করা এবং সেই বৈশিষ্ট্য অর্জন করা অপরিহার্য। মাদরাসায় এসেও যারা মাহরূম হয় তারা এজন্যই মাহরূম হয় যে, মাদরাসার পরিবেশ থেকে তারা কিছু গ্রহণ করে না, বরং পরিবেশকে দূষিত করে।

তুমি যে দ্বীন শিখতে এসেছো, এ পথের দাবী ও চাহিদা এই যে, ফরয ও ওয়াজিব আমলগুলো পাবন্দির সাথে আদায় করবে, নামাযের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নপোষণ করবে, জামাতের বেশ আগে মসজিদে এসে নামাযের ইনতিযার করবে, যিকির ও নফল ইবাদাতের শওক এবং আল্লাহর কাছে চাওয়ার ও দু‘আ মুনাজাতের যাওক পয়দা করবে।

তৃতীয়ত আখলাক ও চরিত্রকে ইলমের স্বভাব অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করো। ইলমের স্বভাব হলো ছবর ও ধৈর্য, বিনয় ও আত্মবিলোপ, যুহদ ও নির্মোহতা এবং গিনা ও আল্লাহ-নির্ভরতা। সুতরাং এই ভাব ও স্বভাব যত বেশী পারো নিজের মাঝে অর্জন করো। হিংসা ও হাসাদ, অহংকার ও ক্রোধ, কৃপণতা ও সংকীর্ণতা ইত্যাদি হলো ইলমের বিরোধী স্বভাব। সুতরাং এগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিহার করো।

চতুর্থত তোমার চাল-চলন ও আচার-আচরণকে সুন্নতের পূর্ণ অনুগত করো। এ পথের ইমাম ও রাহবার যারা তাঁদেরই মত যেন হয় তোমার বাহ্যিক বেশভূষা।

এ সকল দাবী ও চাহিদা পূরণ করে দেখো দুনিয়া ও আখেরাতে তোমার মাকাম ও মর্যাদা কোথায় নির্ধারিত হয়! আল্লাহর কসম, তোমাদের সম্পর্কে আমার এ আশংকা নেই যে, দ্বীনী মাদরাসা থেকে ফারিগ হয়ে তোমরা অভাব ও দারিদ্র্যের শিকার হবে; আমার ভয় ও আশংকা বরং এই যে, আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের বে-কদরীর কারণে বিমুখতা ও বঞ্চনার আযাব না এসে পড়ে!

পক্ষান্তরে তোমরা যদি এ নেয়ামতের যথাযোগ্য কদর করো এবং পূর্ণ শোকর আদায় করো তাহলে প্রতিদানরূপে তোমাদের যোগ্যতা ও প্রাপ্তি বহুগুণ বেড়ে যাবে। দেখো আল্লাহ কত মযবুতভাবে বলেছেন-

যদি তোমরা শোকর করো তাহলে অবশ্যই আমি বাড়িয়ে দেবো, আর যদি কৃতঘ্ন হও তাহলে মনে রেখো, আমার আযাব অতি কঠিন।

আর শোনো, তোমার মাঝে এবং সবার মাঝে আল্লাহ রেখে দিয়েছেন কিছু সুপ্ত প্রতিভা ও ঘুমন্ত যোগ্যতা। ত্যাগ ও আত্মত্যাগ এবং নিরবচ্ছিন্ন সাধনার মাধ্যমে তুমি যদি সেই আত্মপ্রতিভার স্ফূরণ না ঘটাও এবং ইলমী যোগ্যতায় পরিপক্কতা অর্জনে সচেষ্ট না হও তাহলে তুমি ‘পদার্থ’ বলেই গণ্য হবে না এবং দুনিয়ার কোথাও তোমার কোন সমাদর হবে না; তুমি কোন কাজেরই হবে না।

***

পরিশেষে আবার আমি পরিষ্কার ভাষায় তোমাদের বলতে চাই, শিক্ষা জীবনের শুরুতেই নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝে নাও এবং নিজেদের মাকাম ও মর্যাদা চিনে নাও। ইলমের সাধনায় আত্মনিমগ্নতা এবং প্রতিভা ও যোগ্যতার বিকাশ সাধনে ঐকান্তিকতা- এই যেন হয় তোমার একমাত্র পরিচয়; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই যেন হয় তোমার একমাত্র উদ্দেশ্য। এছাড়া অন্যদিকে চোখ তুলেও তাকিয়ো না; অন্যকিছুতে মন দিয়ে বঞ্চিত হয়ো না। জীবন-কাফেলার বৃদ্ধ মুসাফিরের এ উপদেশ যদি গ্রহণ করো, ইনশাআল্লাহ দুনিয়াতেও তোমরা সফল হবে এবং সৌভাগ্য তোমাদের পদচুম্বন করবে। এরপর আল্লাহ রাব্বুল ইযযতের দরবারে যখন হাযির হবে তখন তোমাদের চেহারা হবে নূরে-ঝলমল। আল্লাহ তোমাদের কামিয়াব করুন। আমীন। ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

সূত্রঃ দারুল কলম প্রকাশিত “তালিবে ইলমের জীবন পথের পাথেয়” গ্রন্থ

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে জরুরী কিছু কথা!

কমাশিসা ডেস্ক: শুক্রবার ২৫সেপ্টেম্বার ২০২০. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যখন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ...