শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:৫৯
Home / কওমি অঙ্গন / কওমী সিলেবাস : কিছু সরল কথা

কওমী সিলেবাস : কিছু সরল কথা

pakistan-madrasaলাবীব আব্দুল্লাহ : সাধারণ শিক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষা বর্তমানে পাঁচ বছর৷ আগামীতে আট বছর হবে৷ নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, ইউনিভার্সিটি৷ মাস্টার্স শেষ করতে দেড় যুগ৷ এমফিল, পিএইচডি করতে আরও কয়েক বছর৷

শিক্ষার এই সময় শুরু হয় শিশুকাল থেকে৷ উপ আনুষ্টানিক পাঁচ থেকে৷ প্রাথমিক শুরু শিশুর ছয় বছর বয়স থেকে৷
প্রত্যেক স্তরে চুড়ান্ত পরীক্ষা হয়৷ সনদ অর্জণ করতে প্রচুর মেহনত করতে হয়৷ কলেজে ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধ৷ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির বিশেষ পরিশ্রম করতে হয়৷
আলিয়াতে ইবতেদাইয়া পাঁচ বছর, এরপর দাখেল পর্যন্ত আরও পাঁচ বছর৷ আলেম দুই বছর, ফাযেল চার বছর, কামেল দুই বছর৷ এমফিল পিএইচডি করতে আরও সময়৷
ত্রিমুখী শিক্ষার ব্যতিক্রম কওমী মাদরাসায়৷ খুসুসী এক বছর৷ এরপর আট বছেরে দাওরায়ে হাদীস৷ যারা হিফয নাযেরা পড়েন তাদের জন্য আরও তিন চার বছর৷ এটি সবাই পড়েন না৷ আমরা সর্বোচ্চ দশ বছরে দাওরা শেষ করছি৷ খুসুসী কখনই পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার বিকল্প নয়৷
শিক্ষার মাধ্যম কোথাও উর্দু কোথাও বাংলা কোথাও আরবী শিখি দ্বারা শুরু৷ ইদানীং মাদানী নেসাবের পোস্টারে ব্যবসায়িক মানসিকতা থেকে সাত বছরে দাওরার ঘোষণা দিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি করছি আমরা৷ দাওরাকে ডায়েরিতে লিখছি মাস্টার্স সমমান৷ মাদানী নেসাব আরবী প্রাধান্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সিলেবাসের নাম৷ এটিকে কোথাও শর্টকোর্স ঘোষণা দিয়ো পোস্টার ছাপানো হচ্ছে৷ মাদানী নেসাবের মূল রুহকে নিঃশেষ করে ব্যবসা করার ক্ষেত্র তৈয়ার করা হয়েছে৷ কাদীম নেসাবের বিকল্প বা বিপরীত মাদানী নেসাবের নাম বলা হচ্ছে৷ কাদীম নেসাবের অনেকগুলো বৈশিষ্য বহন করে৷ উর্দু ফার্সী ছাড়াও অনেকগুলো ইলমের প্রাথিক ও চুড়ান্ত একটি করে কিতাব পড়ানো হয় এতে ইলমে গভীরতার পথ রচিত হয়৷ ইস্তেদাদ তৈয়ার হয়৷ দরসে নেজামীর নানা বৈশিষ্ট্য আছো৷ প্রায় তিন শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে দরসে নেজামীর৷ মাদানী নেসাব এখনও তিন দশক এবং পরীক্ষামূলক৷
আলেম হওয়ার সিলেবাস দীর্ঘ৷ মাদানী নেসাব ও কাদীম নেসাবে হিফজুন নুসুসের কোনো ব্যবস্থা নেই অথচ এটি বড় প্রয়োজন৷
1866 সালে দেওবন্দে দারুল উলুম প্রতিষ্ঠার সময় দরসে নেজামীর পরিবর্তণ শুরু৷ সংযোজন বিয়োজন হয়ে এখন বাংলাদেশে দরসে নেজামীর পূর্নাঙ্গ সিলেবাস নেই কোথাও৷
কিছু ব্যতিক্রম হাটহাজারী মেখল মাদরাসা৷ সময়ের চাহিদায় দরসে নেজামীতে সংযোজন বিয়োজন করা হয়েছো৷ তবে একক কোনো সিলেবাস প্রনয়ণ কমিটি না থাকায় ব্যাপক অরাজকতা হয়েছে দরসে নেজামীর সংযোজন বিয়োজনে৷ মন মতো যা ইচ্ছে তাই হয়েছে৷ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বোর্ডগুলো এই অরাজকতার জন্য দায়ী থাকবে৷
বরতমানে বিভাগীয় শহরের মাদরাসাগুলোর সিলেবাসের সাথে ব্যাুুপক গরমিল৷ যোগ্য অযোগ্য সবাই সিলেবাসের মুজাদ্দিদ৷ সংস্কারক! সংহারকও বটে৷
এখন সিলেবাস পড়ে ফারেগ ও মাওলানা হলেও আলেম হচ্ছে কম৷
মহিলা মাদরাসার সিলেবাসের অরাজকতা নিয়ে কথা কম বলা ভালো৷ তারা ছয় বছরে আলেমা হচ্ছেন এবং বাংলা নোট পড়ে আলেমা হচ্ছেন৷ দেশে এই বছর জরিপ করলে ছেলেদের থেকে মহিলা মাদরাসার প্রতিষ্ঠা বেশী হয়েছে এবং আগামীতে প্রতি রোডে প্রতি মহল্লায় মহিলা মাদরাসার সংখ্যা বাড়বে মনে হচ্ছে এবং প্রতি ঘরে ছয় বছরে আলেমার সংখ্যা থাকবে ডজনে ডজনে কিন্তু বিশুদ্ধভাবে কুরআন তরজমাটা পরবেন কি না তাতে সন্দেহ করা যেতে পারে এবং বাংলা নোট পড়ার কারনে কোনো মূল কিতাব মহিলাদের সিলেবাসে থাকবে কি না তাও বলা যাচ্ছে না৷ এই অরাজকতা বন্ধে কে কখন উদ্যোগ নেবেন তাও বলা যাবে না কারণ মুজাদ্দিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে এবং এক সময় মহিলা বোর্ডের দাবি উঠবে মহিলা মাদরাসর পরিচলক পরিচালিকাদের পক্ষ থেকে৷

এই অরাজকতা বন্ধে কিছু প্রাস্তাবনা:

* কওমী মাদরাসার অভিন্ন একটি সিলেবাস প্রনয়ণ করা
এই সিলেবাস প্রনয়ণে সকল শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে কওমী মাদরাসা সিলেবাস প্রনয়ণ কমিটি ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করা৷
* মহিলা মাদরাসার সিলেবাসে মেয়েদের উপযোগী এবং তাদের জন্য প্রয়োজন কিছু কিতাব রচনা করা৷
তাদের জন্য বিশেষ সিলেবাসও হতে পারে তাতে ফরজ পরিমান ইলমের আয়োজন থাকতে পারে৷
* শিক্ষার স্তর ও মারহালা নির্ধারণ করা এবং সকল তালেবে ইলমকে আলেম বানাতে হবে এই কোশেশ বাদ দিয়ে ফরজ পরিমান ইলম সবার জন্য রেখে মেধাবীদের জন্য ভিন্ন সিলেবাস করা যাতে আলেম হতে পারে তালেবে ইলমরা৷
এতে শর্টকার্ট কোনো পথ না রাখা
* সিলেবাসে এসএসসি লেভেল পর্যন্ত বাংলা ইংরেজি ও বিজ্ঞান এই তিনটি বিষয় সকল ক্লাসে বাধ্যতামূলভাবে পড়িয়ে দেওয়া৷
* বৃটিশ আমলের চাহিদা ছিলো এক ধরণের৷ পাকিস্থান আমলে আরেক ধরণের৷ বর্তমানে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সিলেবাসটি যুগচাহিদার বিষয়টির প্রতি খেয়াল রেখে শিক্ষার নেজাম ও নেসাব সাজানো৷
* উর্দু বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম না বানিয়ে আরবীকে শিক্ষার মাধ্যম বানানো উচ্চস্তরে৷
সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে না নিলে ইহুদী নাসারা বা সরকার নয় আমাদের হাতেই আবেদন হারাবে কওমী মাদরাসা৷
শুধু অতীত নিয়ে কথা বলে লাভ নেই৷
যুগ নির্মম৷ বর্তমান যুগকে ধারন না করলে আজাইবখানায় পাঠাবে আমাদের সিলেবালকে এবং মাদরাসার ভবনগুলো দাঁড়িয়ে কাঁদবে কুতুব মিনার ও দিল্লির লালকেল্লার মতো ৷

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...